মিয়ানমারের রাখাইনে গেল রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল

Looks like you've blocked notifications!
কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে আজ শুক্রবার সকালে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল মিয়ানমারের মংডুর উদ্দেশে রওনা করেন। ছবি : ফোকাস বাংলা

মিয়ানমারের রাখাইনে প্রত্যাবাসন ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণের জন্য ২৭ সদস্যের রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদল মিয়ানমার গেছে। আজ শুক্রবার (৫ মে) সকাল সাড়ে ৯টার দিকে তারা কক্সবাজারের টেকনাফ ট্রানজিট ঘাট থেকে মিয়ানমারের মংডুর উদ্দেশে রওনা করেন। 

প্রতিনিধিদলে রয়েছেন ২০ জন রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতা এবং সাতজন সরকারি কর্মকর্তা। প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দিচ্ছেন শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার এবং খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। তিনি জানান,

বাংলাদেশে আশ্রিত মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে প্রতিনিধিদলটি রাখাইনে যাচ্ছে।

কক্সবাজার জেলার উখিয়া ও টেকনাফ এবং নোয়াখালীর হাতিয়ার ভাসানচরে অবস্থিত ৩৪টি রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সার্বিক দায়িত্ব পালন করছে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অধীনে শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার (আরআরআরসি)।

এর আগে মিয়ানমারে যাওয়ার জন্য টেকনাফের হ্নীলা ইউনিয়নের লেদা, নয়াপাড়া ও জাদিমুড়া এলাকায় অবস্থিত ২৪, ২৬ ও ২৭ নম্বর রোহিঙ্গা ক্যাম্পে বসবাসরত ২০ জন রোহিঙ্গা কমিউনিটি নেতাকে বাছাই করা হয়।

মিয়ানমারের রাখাইনে যাত্রা করা ২৭ জনের দলটিতে তিন নারীসহ ২০ জন রোহিঙ্গা, একজন অনুবাদক এবং ৬ জন বাংলাদেশের বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তা রয়েছেন। তাদের নিরাপত্তার জন্য দুটি স্পিডবোটসহ ১৬ জন বিজিবি সদস্য রয়েছেন।

শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কর্মকর্তার কার্যালয়ের সূত্রমতে, ইতোপূর্বে মিয়ানমারের টেকনিক্যাল টিমের সাক্ষাৎকার গ্রহণ শেষ হওয়া রোহিঙ্গা ক্যাম্প-২৪ থেকে দুজন, ২৬ থেকে চারজন, ২৭ থেকে ১৪ জনসহ মোট ২০ জন রোহিঙ্গা মিয়ানমার গেছেন। এ প্রতিনিধিদল মংডুর আইডিপি ক্যাম্পসহ ১৫টি গ্রামের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করবেন।

সূত্র আরও জানায়, প্রতিনিধিদলটি বাস্তচ্যুত রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ‘রাখাইনের সার্বিক পরিস্থিতি কতোটুকু অনুকূলে’ রয়েছে মূলত তাই দেখবে।

তবে মিয়ানমারের মংডু শহরের উদ্দেশে রওনা দেওয়ার আগে গণমাধ্যমের সঙ্গে কথা বলেননি প্রতিনিধিদলের নেতা শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কমিশনার মোহাম্মদ মিজানুর রহমান। প্রতিনিধিদলে থাকা রোহিঙ্গাদের কেউ গণমাধ্যমে কথা বলেননি।

গত ১৮ এপ্রিল কুনমিংয়ে চীনের মধ্যস্থতায় বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় বৈঠক হয়েছিল। কূটনৈতিক সূত্রমতে  ওই বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়, চলতি মে মাসে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন শুরুর পরিবেশ কতটা অনুকূল তা দেখতে রোহিঙ্গা প্রতিনিধিদের নিয়ে বাংলাদেশের কর্মকর্তারা আজ শুক্রবার (৫ মে) রাখাইনে যাবেন। এই সফরের এক সপ্তাহের মধ্যে মিয়ানমারের একটি প্রতিনিধিদল কক্সবাজারে এসে রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলবে। সব ঠিকঠাক এগোলে চলতি মাসে ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গার প্রথম দলটি নিয়ে প্রত্যাবাসন শুরু করতে চায় চীন ও মিয়ানমার।

এর আগে ১৫ মার্চ টেকনাফ হয়ে বাংলাদেশে আসেন মিয়ানমার সরকারের ১৭ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল। তারা বাংলাদেশে আশ্রিত বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা নাগরিকদের মিয়ানমারে প্রত্যাবাসন কার্যক্রমের অংশ হিসেবে বাংলাদেশের দেওয়া রোহিঙ্গাদের তালিকা যাছাই-বাছাই করেন।

প্রতিনিধিদলটি টানা সাতদিন টেকনাফের স্থলবন্দর রেস্ট হাউজে অবস্থান করে বাংলাদেশে আশ্রিত ১৪৭ রোহিঙ্গা পরিবারের মোট ৪৮৬ জন রোহিঙ্গার সঙ্গে সরাসরি কথা বলেন। আর তাদের দেওয়া বক্তব্য রেকর্ড করেন। গত ২২ মার্চ সকালে প্রতিনিধিদলটি নাফ নদী পার হয়ে মিয়ানমারে ফিরে যায়। চীনের মধ্যস্থতায় পাইলটিং প্রকল্প হিসেবে প্রায় ১৪৭ পরিবারের ১ হাজার ১৭৬ জন রোহিঙ্গাকে প্রথম দফায় মিয়ানমারের রাখাইনে প্রত্যাবাসন করার কথা রয়েছে।