মুক্তিযুদ্ধের মতো করোনাযুদ্ধেও জীবন বাজি রেখে কাজ করছি : বিএমএ সভাপতি
![](https://ntvbd.com/sites/default/files/styles/big_3/public/images/2020/06/02/nm.jpg)
করোনাভাইরাসের পরিস্থিতির মধ্যে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সার্বক্ষণিক হাসপাতালে হাসপাতালে ঘুরে কাজ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমএ) সভাপতি ডা. মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন।
করোনার প্রাদুর্ভাব নিয়ে এনটিভি অনলাইনের সঙ্গে কথা হয় চিকিৎসকদের শীর্ষ সংগঠনের এই নেতার সঙ্গে। এ সময় নানা প্রশ্নের জবাব দেন তিনি।
এই বয়সে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে করোনা মোকাবিলায় এগিয়ে আসার বিষয়ে জানাতে গিয়ে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘দেশমাতৃকাকে মুক্ত ও স্বাধীন করব বলেই একাত্তরের হাতিয়ার হাতে তুলে নিয়ে পাকিস্তানি হানাদারের সঙ্গে যুদ্ধ করেছিলাম। নিশ্চিত মৃত্যুকে আলিঙ্গন করেই যুদ্ধে গিয়েছিলাম। আমাদের হৃদয়ে ও রক্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শের শক্তি বহমান। জাতির পিতা আমাদের শিখিয়ে গেছেন, দেশমাতৃকাকে মুক্ত করতে, আত্মত্যাগের জন্য সদা প্রস্তুত থাকতে।’
বিএমএ সভাপতি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি। আর এখন তাঁরই সুযোগ্য কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ডাকে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে সম্মুখ সারিতে থেকে দেশের মানুষকে রক্ষায় দ্বিতীয় যুদ্ধে নেমেছি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শের সৈনিক বলেই যে কোনো দুর্যোগে আমরা ঝাঁপিয়ে পড়ি। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও তাঁর দেখানো পথই আমাদের দৃঢ় মনোবল ও সাহসী হতে অনুপ্রেরণা যোগায়। সেক্ষেত্রে নিজের শরীরের দিকে ফিরে দেখার সময় নেই। তাই মুক্তিযুদ্ধের মতো করোনাযুদ্ধেও জীবন বাজি রেখে কাজ করছি।’
সারা দেশে চিকিৎসকের জন্য কোনো বার্তা আছে কি না জানতে চাইলে ডা. মোস্তফা জালাল বলেন, ‘আমার সব সময় একই চিন্তা, সারা দেশে আমার সহকর্মী চিকিৎসকরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। তাঁদের সুরক্ষা ও সাহসী করে তোলা এবং ভবিষ্যৎ নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। এখন আমাদের একমাত্র কর্তব্য হিসেবে দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছি।’
বিএমএ সভাপতি মোস্তফা জালাল আরো বলেন, “চিকিৎসকরা পরিশ্রম করে যাচ্ছে, তাঁরা ধন্যবাদ পেতেই পারেন, সেটা সবাই মনে করেন। তবে আমি মনে করি, গণমাধ্যমে যখন দেখা যায়, ‘থ্যাংক ইউ ডক্টরস’ বলা হচ্ছে, তখন আমরা আরো উৎসাহিত হই।”
মুক্তিযুদ্ধে পরিবারের সদস্যদের হারানোর কথা তুলে ধরে মোস্তফা জালাল মহিউদ্দিন বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর ডাকে মহান মুক্তিযুদ্ধে আমি বেঁচে গেলেও আমার ভাই শহীদ হয়েছেন। ভাইয়ের মতো আমিও শহীদ হতে পারতাম। জীবনের কোনো মায়া করিনি। দেশকে শত্রুমুক্ত করাই একাত্তরের রণাঙ্গনের আমাদের একমাত্র ধ্যান জ্ঞান ছিল। এখন মুক্তিযুদ্ধের পর আমরা একটি অদৃশ্য শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই করছি। সেটি হলো অদৃশ্য প্রাণঘাতী শক্তি করোনাভাইরাস। এখানেও আমাদের জয় পেতে হবে।’
নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে নিজের কথা তুলে ধরে বিএমএ সভাপতি বলেন, ‘ডা. শামসুল আলম খান মিলন ছিলেন স্বৈরাচারবিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের একজন দক্ষ সংগঠক, বিএমএর যুগ্ম মহাসচিব ও ঢাকা মেডিকেল কলেজের একজন শিক্ষক। ১৯৯০ সালের ২৭ নভেম্বর স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনে উত্তাল সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের টিএসটি সংলগ্ন এলাকায় তৎকালীন স্বৈরশাসকের বিলিয়ে দেওয়া ঘাতকের গুলিতে নির্মমভাবে শহীদ হন ডা. মিলন। শহীদ মিলনের রক্তের সিঁড়ি বেয়ে স্বৈরাচারবিরোধী আন্দোলন বেগবান হয়। ছাত্র-জনতা এক ঐতিহাসিক গণঅভ্যুত্থানের মধ্যদিয়ে তৎকালীন স্বৈরশাসকের পতন ঘটায়। দেশ যাত্রা শুরু করে গণতান্ত্রিক ধারায়।’
মোস্তফা জালাল বলেন, ‘আমাদের নিজের পরিবারের মধ্যেও আরেকটি পরিবার হচ্ছে, রাজনৈতিক পরিবার। আমি রাজনৈতিক পরিবারের সন্তান। ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শে রাজনীতি করেছি। চরম দুঃসময়ে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আমাকে ছাত্রলীগের সভাপতির দায়িত্ব দিয়েছিলেন। নিষ্ঠার সঙ্গে সেই দায়িত্ব পালন করেছি। সারা দেশে ঘুরে ঘুরে সংগঠনকে শক্তিশালী করেছি। নব্বইয়ের গণঅভ্যুত্থানে ভূমিকা পালন করেছি। মিলনকে গুলি করার সময় রিকশায় মিলনের পাশে আমি ছিলাম। টার্গেট ছিলাম আমিও, তারা ভেবেছিল আমিও মারা গেছি।’
বিএমএর সভাপতি বলেন, ‘চিকিৎসকদের সবচেয়ে বড় সংগঠন বিএমএর প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব ছিলাম। এখন সভাপতির দায়িত্ব পালন করছি। তাই দেশের যে কোনো ক্রান্তিলগ্নে রাজনীতির যে কোনো কর্মসূচিতে সব সময় অগ্রভাগে থেকেছি। এখন সম্মুখে থেকে কাজ করে যাচ্ছি। ছাত্রজীবন থেকে এই পর্যন্ত দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে অনেক ঝড় ঝাপটা আমার ওপর দিয়ে গেছে। রাজনৈতিক কর্মকাণ্ডে কখনো পরিবার থেকে বাধা পাইনি। বরং সবসময়ই অনুপ্রেরণা ও সহযোগিতা পেয়েছি।’