মৃতের বিদেশি কন্টাক্ট না থাকায় পরীক্ষা করতে চায়নি আইইডিসিআর!

Looks like you've blocked notifications!
করোনাভাইরাসে সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার সাবেক অধ্যক্ষের মৃত্যুর পর রাজধানীর মিরপুরের উত্তর টোলারবাগের একটি ভবন ‘লকডাউন’ করা হয়েছে। ছবি : সংগৃহীত

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত শুক্রবার দিবাগত রাতে রাজধানীর মিরপুরের ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে যে ব্যক্তি মারা গেছেন, তিনি সরকারি মাদ্রাসা-ই-আলিয়ার সাবেক অধ্যক্ষ ছিলেন। গতকাল শনিবার সকালে তাঁকে মিরপুরের শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয়েছে।

তবে পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ, সঠিক সময়ে তাঁর করোনা-সংক্রান্ত পরীক্ষা করতে চায়নি সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর)।

পরীক্ষা না করানোর কারণ হিসেবে অধ্যক্ষের ছেলেকে আইইডিসিআরের পক্ষ থেকে বলা হয়েছিল, পরিবারে বিদেশফেরত বা বিদেশি কোনো ব্যক্তির সংস্পর্শে না যাওয়ায় কোভিড-১৯ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা একেবারেই নেই। কাঁদতে কাঁদতে কথাগুলো এনটিভি অনলাইনকে বলছিলেন অবসরপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের এক ছেলে।

অধ্যক্ষের ওই ছেলে বলেন, ‘আমার বাবার নিউমোনিয়া ছিল। ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের আগে কল্যাণপুরের একটি হাসপাতালে ভর্তি করেছিলাম। তখন নিউমোনিয়া বলে আমাদের ধারণা ছিল। কিন্তু ওই হাসপাতাল থেকে আমাদের বলা হয় করোনাভাইরাস পরীক্ষা করার জন্য। এরপর আমরা সেটা চিন্তা শুরু করি।’

অধ্যক্ষের ওই ছেলে আরো বলেন, ‘গত ১৬ মার্চ আমি আইইডিসিআরের হটলাইনে যোগাযোগ করি। সেখানে থাকা একজন চিকিৎসক জানতে চাইলেন, কী কী লক্ষণ-উপসর্গ আছে। আমি বললাম, শ্বাসকষ্ট আর জ্বর। তখন ওই চিকিৎসক আমার কাছে জানতে চাইলেন, কোনো বিদেশি আমাদের বাড়িতে এসেছে কি না বা কোনো বিদেশির সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ আছে কি না। আমি না বলার পর ওই চিকিৎসক বললেন, তাহলে উনার করোনা হয়নি। যেহেতু বিদেশি কন্টাক্ট নেই, সেহেতু এই ভাইরাস হওয়ার কথা না। এরপর আমরা ১৭ মার্চ ডেল্টা মেডিকেলে বাবাকে ভর্তি করি। ডেল্টা হাসপাতাল থেকেও আমাদের পরীক্ষার জন্য বলা হয়। তারপর হাসপাতালকে আমরা ঘটনা খুলে বলি। পরে ওই হাসপাতাল আইইডিসিআরের সঙ্গে যোগাযোগ করে। আমরাও অনেককে দিয়ে যোগাযোগ করিয়েছি। যোগাযোগ করানোর পর তাঁরা (আইইডিসিআর) পরীক্ষা করতে রাজি হন।’

‘গত বৃহস্পতিবার আইইডিসিআর থেকে লোকজন ডেল্টা হাসপাতালে এসে আমার বাবার নমুনা সংগ্রহ করে নিয়ে যান। পরদিন শুক্রবার আমাদের জানানো হয়, কোভিড-১৯ পজিটিভ এসেছে। তারপর ডেল্টা হাসপাতাল থেকে আমাদের চলে আসতে বলা হয়। আমরাও চলে আসি। সর্বশেষ শুক্রবার দিবাগত রাত সাড়ে ৩টার দিকে আমার বাবা মারা যান। তারপর আমার কাছে জানতে চাওয়া হয়, কোথায় দাফন করব বাবাকে। আমি মিরপুর ১৪-এর বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করতে বলি। সেখানেই বাবাকে দাফন করে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।’

করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মৃত শিক্ষকের ওই ছেলে আরো বলেন, ‘শনিবার সকাল থেকেই আমাদের হোম কোয়ারেন্টিনে থাকতে বলা হয়। তার পর থেকে আমরা বাড়িতেই আছি। বাবাকে আর দেখা হলো না। আমাদের সিস্টেম যদি ঠিক থাকত, সময়মতো পরীক্ষা করা হলে আমার বাবা মরতেন না। পরীক্ষা করলে কী এমন ক্ষতি হতো? আমার বাবাকে ফিরিয়ে দিতে পারবেন কেউ? এমনকি এই ঘটনার পর আমাদের কারোই স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা হয়নি। কেউ আসেনি আমাদের দেখতে।’

মৃত অধ্যক্ষের পরিবারের অভিযোগের ব্যাপারে জানতে চাইলে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক নাসিমা সুলতানা এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘তাঁদের যদি বিদেশি কন্টাক্ট না থাকে, তাহলে কীভাবে আক্রান্ত হলো? সেই তথ্য তো আইইডিসিআরে আপনাকে দিতে হবে। পরীক্ষা করার আগে তো তারা লক্ষণ-উপসর্গ শুনতে চাইবে।’

বিদেশফেরত মানুষ হোম কোয়ারেন্টিনের নিয়ম কি সঠিকভাবে মানছেন—এমন প্রশ্নের জবাবে নাসিমা সুলতানা বলেন, ‘না, অনেকেই হোম কোয়ারেন্টিনের নিয়ম মানছেন না। যেহেতু তাঁরা নিয়ম মানছেন না, সেহেতু তাঁদের মাধ্যমে কমিউনিটিতে ছড়িয়ে পড়তে পারে ভাইরাসটি। ওই মৃত ব্যক্তি কমিউনিটি থেকেও আক্রান্ত হতে পারেন। তবে মৃতের পরিবারের অভিযোগ যদি সত্য হয়, তাহলে আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে। বিদেশি কন্টাক্ট না থাকলে অন্য কেউ আক্রান্ত হবে না, এটা ভুল প্রমাণিত। সুতরাং এমন যাঁরা আসবেন, তাঁদেরও পরীক্ষা করতে হবে। এখন থেকে এমন ব্যক্তিদের আর ফিরিয়ে দেওয়া হবে না।’

এদিকে ওই ব্যক্তির মৃত্যু পর মিরপুরের উত্তর টোলারবাগের একটি ভবনকে ‘লকডাউন’ করা হয়েছে। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া ৭৩ বছর বয়সী সাবেক ওই অধ্যক্ষ থাকতেন ওই ভবনে। ভাইরাসটি অন্যদের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ার আশঙ্কায় ভবনে থাকা অন্তত ৩০ পরিবারকে ১৪ দিনের বাধ্যতামূলক ‘হোম কোয়ারেন্টিনে’ থাকার নির্দেশ দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

গতকাল শনিবার সকাল থেকে ওই ভবনটিতে থাকা মানুষের চলাচল সীমিত করা হয়েছে। খুব জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কাউকেই বাসা থেকে বের হতে দেওয়া হবে না—এমন নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। বিষয়টি জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) মাহমুদা আফরোজ লিপি।

এর আগে আইইডিসিআরের পরিচালক ডা. মীরজাদী সেব্রিনা ফ্লোরা গতকাল দুপুরে এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘করোনায় আক্রান্ত হয়ে মিরপুরের ডেল্টা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে একজন মারা গেছেন। তাঁর বয়স আনুমানিক ৭৩ বছর। ওই হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তিনিও এক প্রবাসীর সংস্পর্শে গিয়ে আক্রান্ত হয়েছিলেন।’