মেয়র আব্বাসকে দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল নিয়ে অবমাননাকর মন্তব্য করায় কাটাখালী পৌরসভার দলীয় মেয়র আব্বাস আলীকে গ্রেপ্তার ও দল থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কারের দাবি করেছে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা। আজ বৃহস্পতিবার বেলা ১১টার দিকে মহানগর আওয়ামী লীগের কার্যালয়ে এই সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
একই দাবি করে মেয়র আব্বাস আলীকে আইনের আওতায় এনে রাষ্ট্রীয়ভাবে শাস্তির দাবি জানিয়েছেন রাজশাহী-৩ পবা-মোহনপুর) আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন।
আজ দুপুরে স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে সাংসদ আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অনুভূতি ও আবেগের জায়গা। তাকে নিয়ে কটূক্তি ও অশোভন মন্তব্য করা রাষ্ট্রদ্রোহীতার শামিল।’
সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সাধারণ সম্পাদক ডাবলু সরকার। তিনি বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে কাটাখালী পৌর মেয়র ও পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক আব্বাস আলী ধৃষ্টতাপূর্ণ অবমাননাকর মন্তব্য করেছেন। যা ইতোমধ্যেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও প্রিন্ট এবং ইলেকট্রনিক মিডিয়ায় প্রচার হয়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালির অনুভূতি ও আবেগের জায়গা। জাতির পিতাকে নিয়ে মেয়র আব্বাসের অবমাননাকর মন্তব্যে সারা দেশের মানুষের মতো রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগও চরমভাবে মর্মাহত। তার ধৃষ্টতাপূর্ণ অশালীন মক্তব্যের প্রেক্ষিতে মহানগর আওয়ামী লীগ তার সংগঠনের পদ ও প্রাথমিক সদস্যপদ থেকে আজীবন বহিষ্কারের পাশাপাশি তাকে গ্রেপ্তার ও দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করছে।
সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, প্রধানমন্ত্রীর প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় জাতীয় নেতা বরেন্দ্রভূমির শহীদ এ এইচ এম কামারুজ্জামানের সন্তান এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন রাজশাহী মহানগরীকে আধুনিক তিলোত্তমা নগরী হিসেবে গড়ে তুলতে নগরীর মূল প্রবেশদ্বারে বঙ্গবন্ধ শেখ মুজিবুর রহমানের ম্যুরাল স্থাপনের পাশাপাশি সৌন্দর্যবর্ধনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছেন। অথচ সেখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল স্থাপন নিয়ে পৌর মেয়র আব্বাসের ঔদ্ধত্যপূর্ণ অবমাননাকর মন্তব্য জাতি সমর্থন করে না।
পৌর মেয়রের এহেন কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য দেশের সুষ্ঠু রাজনীতির পরিবেশকে অস্থিতিশীল করতে ইন্ধন যোগাবে বলে মনে করে রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগ।
রাজশাহী-৩ আসনের সংসদ সদস্য ও জেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আয়েন উদ্দিন আরও বলেন, ‘আগামীকাল শুক্রবার বিকেলে জেলা আওয়ামী লীগের জরুরি সভা আছে। সেই সভায় মেয়র আব্বাসের জেলার সদস্য পদ নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত হবে।’
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মেয়র আব্বাস আলীর বিরুদ্ধে একাধিক মামলার পরও তিনি গ্রেপ্তার হচ্ছেন না কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সংসদ সদস্য আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘জনপ্রতিনিধিদের গ্রেপ্তার করতে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের অনুমতি লাগে। আমি প্রশাসনের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেছি। প্রক্রিয়া চলছে। দ্রুত গ্রেপ্তার হয়ে যাবেন।’
সাংসদ আয়েন উদ্দিন বলেন, ‘রাজশাহীর প্রবেশ মুখে যে গেট, সেখানে বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল নির্মাণে প্রতিহতের ঘোষণা দিয়েছে মেয়র আব্বাস। সেই গেট এবং বঙ্গবন্ধুর ম্যুরাল আমি নির্মাণ করার ব্যবস্থা নিব। ইতোমধ্যে এর প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। যেহেতু সেটি সিটি করপোরেশনের তিন দিকই আমার নির্বাচনি এলাকা, সেহেতু বঙ্গবন্ধুর ম্যুরালসহ তিনটি প্রবেশ গেটই করার ব্যবস্থা করা হচ্ছে।’
২২ নভেম্বর রাতে মেয়র আব্বাস আলীর কথোপকথনের অডিও ভাইরাল হলে উত্তাল হয়ে ওঠে রাজশাহীর রাজনৈতিক অঙ্গন। এ ঘটনায় গত মঙ্গলবার রাতে পৌর মেয়র আব্বাস আলীর নামে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে নগরীর রাজপাড়া, চন্দ্রিমা ও বোয়ালিয়া মডেল থানায় তিনটি অভিযোগ দাখিল করেছেন রাজশাহী সিটি করপোরেশনের তিন কাউন্সিলর।
আব্বাস আলীর বক্তব্য নিয়ে গত দুদিন ধরে বিক্ষোভ-সমাবেশ চলছে রাজশাহী নগরী ও কাটাখালি পৌর এলাকায়। এরই মধ্যে বিকেলে দলীয় শৃঙ্খলাভঙ্গের দায়ে কাটাখালি পৌর আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক পদ থেকে তাকে অব্যাহতি দিয়েছে পবা উপজেলা আওয়ামী লীগ। একইসঙ্গে তাকে কারণ দর্শানোরও নোটিশ দেওয়া হয়েছে। নৌকা প্রতীক নিয়ে গত পৌর নির্বাচনে টানা দ্বিতীয়বার মেয়র নির্বাচিত হন তিনি।