মৌলভীবাজারে শিশু হত্যার দায়ে বানরের মৃত্যুদণ্ড!

Looks like you've blocked notifications!
মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় লোকালয়ে তাণ্ডব চালিয়ে এক শিশুকে হত্যা ও ৩০ জনকে আহত করার দায়ে এক বন্য বানরের ‘মৃত্যুদণ্ড কার্যকর’ করা হয়। পরে তাকে কবর দেওয়া হয়। ছবি : এনটিভি

মৌলভীবাজারের বড়লেখা উপজেলায় লোকালয়ে তাণ্ডব চালিয়ে এক শিশুকে হত্যা ও ৩০ জনকে আহত করার দায়ে এক বন্য বানরের ‘মৃত্যুদণ্ড কার্যকর’ করা হয়েছে।

গত মঙ্গলবার সকালে ওই বন্য বানরকে ধরতে ঘুমের ওষুধ মেশানো ভাত খাইয়ে বিকেলে আটক করা হয়। বানরকে ধরার পর উত্তেজিত জনতা সালিশ বসিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।

অভিযোগ উঠেছে, বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা এনামুল হক এর আগে এলাকায় গিয়ে ভুক্তভোগী লোকজনকে বানরটিকে মেরে ফেলার নির্দেশ দেন। যদিও বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ আইন অনুযায়ী যে কোনো বন্যপ্রাণী হত্যা দণ্ডনীয় অপরাধ।

জানা গেছে, পাথারিয়া পাহাড়ের দলছুট একটি বন্য বানর গত ১ নভেম্বর বড়লেখা উপজেলার কাঠালতলী এলাকায় লোকালয়ে প্রবেশ করে। বানরটি কাঠালতলী, রুকনপুর, বড়খলা, দক্ষিণ মুছেগুল, উত্তরভাগসহ আশপাশের গ্রামগুলোতে দাপিয়ে নানা তাণ্ডব চালায়। সুযোগ বুঝে সে নিরীহ পথচারীসহ শিশু শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা চালাতে থাকে। ওই বন্য বানরের হামলায় বড়খলা গ্রামের এক শিশু মেয়ের মৃত্যু ঘটে। আহত হয় শিশু, নারীসহ অন্তত ৩০ ব্যক্তি।

বানরের উপদ্রপে অতিষ্ঠ লোকজন স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের শরণাপন্ন হলে তিনি বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের রেঞ্জ কর্মকর্তা এনামুল হককে খবর দেন। ১১ নভেম্বর রেঞ্জ কর্মকর্তা ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করে বনাঞ্চলে প্রত্যাবর্তনের কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে বানরটিকে মেরে ফেলার জন্য ভুক্তভোগী লোকজনকে নির্দেশ দিয়ে যান। আর তখন থেকেই বানরটিকে মেরে ফেলতে ছয়-সাত গ্রামের বাসিন্দারা ধাওয়া শুরু করেন।

অবশেষে মঙ্গলবার সকালে ভাতের সঙ্গে অতিমাত্রায় ঘুমের ওষুধ খাইয়ে বানরকে নেশাগ্রস্ত করে তাকে বাগে আনে। উত্তেজিত জনতা বিকেল ৩টার দিকে একটি ধানক্ষেতের চারদিক ঘেরাও দিয়ে লাঠিসোঁটার আঘাতে অর্ধমৃত করে তাকে আটক করতে সক্ষম হন। পরে কাঠালতলী বাজার সংলগ্ন স্থানে শত শত উৎসব মুখর জনতা সালিশ বসিয়ে তার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করে।

খবর পেয়ে ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন বানরের মৃতদেহ উদ্ধার করে স্থানীয় একটি টিলায় কবরস্থ করেন।

ইউপি চেয়ারম্যান এনাম উদ্দিন জানান, প্রায় ২০ দিন ধরে ছয়-সাত গ্রামের লোকজন ওই বন্য বানরের আক্রমনে আতঙ্কিত ছিল। বানরের হামলায় একটি মেয়েশিশুর মৃত্যু হয়েছে, আহত হয়েছেন আরো ৩০ জন। বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগে খবর দিলে রেঞ্জ কর্মকর্তা এনামুল হক কয়েকদিন আগে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। কিন্তু লোকালয় থেকে তাড়ানোর ব্যবস্থা না নিয়ে তিনি লোকজনকে বানরটিকে মেরে ফেলার নির্দেশ দিয়ে যান। তাঁর উৎসাহে ভুক্তভোগী লোকজন মঙ্গলবার বিকেলে বানরটিকে হত্যার পর মৃতদেহ রাস্তার পাশে ফেলে দেয়। খবর পেয়ে তিনি দুর্গন্ধে পরিবেশের যাতে কোনো ক্ষতি না হয় সেজন্য একটি টিলায় মৃতদেহ মাটি চাপা দিয়েছেন।

বন্যপ্রাণী সংরক্ষণ বিভাগের বড়লেখা রেঞ্জ কর্মকর্তা এনামুল হক বুধবার বিকেলে জানান, বানরের উপদ্রপের খবর পেয়ে এর আগে তিনি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। বানর ধরার বা তাড়ানোর সরকারি কোনো সহায়তা না থাকায় তিনি বানরটিকে মেরে ফেলার জন্য লোকজনকে পরামর্শ দেন। মেরে ফেলার খবর শুনে তিনি বলেন, তাতে ভালোই হয়েছে।