মৌলভীবাজারে সন্ধ্যা ৭টায় দোকানপাট বন্ধের নির্দেশ
দেশের মধ্যে করোনা সংক্রমণ হারের শীর্ষে রয়েছে মৌলভীবাজার। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসকের সম্মেলন কক্ষে এ বিষয়ে এক সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত এ সংবাদ সম্মেলনে করোনা সংক্রমণের হাত থেকে জেলাবাসীকে সচেতন করতে নানা উদ্যোগ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। করোনা সংক্রমণের ঝুঁকিতে উৎকণ্ঠায় থাকা জনগণকে রক্ষায় কঠোর হওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে জেলা প্রশাসন, পুলিশ প্রশাসন, স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় পৌরসভা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া, সিভিল সার্জন চৌধুরী ডা. মো. জালাল উদ্দিন, মৌলভীবাজার পৌরসভার মেয়র মো. ফজলুর রহমান।
সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, নতুন করে করোনা সংক্রমণ বেড়েছে। গত ১১ মার্চ থেকে ৩১ মার্চ পর্যন্ত ৪১৪ জনের নমুনা টেস্টের মধ্যে পজিটিভ রিপোর্ট এসেছে ৯২ জনের। এর মধ্যে মারা গেছেন দুজন।
এদিকে, সংক্রমণ রোধে আজ থেকে প্রতিদিন সন্ধ্যা ৭টার পর জেলার সব দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এছাড়া জেলার সব পর্যটন কেন্দ্র বন্ধ রাখা হয়েছে। জাতীয়ভাবে স্বাস্থ্য বিভাগের ১৮ নির্দেশনার পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে আরও ১১টি নির্দেশনা জারি করা হয়।
জেলা প্রশাসক মীর নাহিদ আহসান ও পুলিশ সুপার মোহাম্মদ জাকারিয়া বলেন, ‘সার্বিক পরিস্থিতি মোকাবিলায় স্বাস্থ্য বিভাগ ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে মাঠে সক্রিয় রয়েছে প্রশাসন। সংক্রমণ কমাতে এরইমধ্যে প্রচারণা চালানো হচ্ছে। মাস্ক বিতরণ করা হয়েছে। আইন অমান্য করে অপ্রয়োজনীয় ঘোরাফেরা, জটলা ও আড্ডা দিলে জেল জরিমানাসহ নানা কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।
আজ বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টার পর জেলার ফার্মেসি ব্যতীত সব দোকানপাট বন্ধ রাখার নির্দেশনা দেওয়া হয়। ব্যাংকসহ অন্যান্য আর্থিক ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো দিনের বেলায়ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে খোলার কথা বলা হয়। গণপরিবহণকে অর্ধেক যাত্রী বহন ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার নির্দেশনা দেওয়া হয়।
এছাড়া ১৫ দিনের জন্য জেলার সব পর্যটন কেন্দ্র ও কমিউনিটি সেন্টার বন্ধ করা হয়েছে। এছাড়া সব সামাজিক, ধর্মীয়, রাজনৈতিক অনুষ্ঠান উপলক্ষে গণজমায়েত নিষিদ্ধ করা হয়েছে।
সংবাদ সম্মেলনে জেলার সিভিল সার্জন চৌধুরী ডা. মো. জালাল উদ্দিন জানান, সারা দেশের করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির হার বিবেচনায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সংবাদ বিজ্ঞপ্তি অনুযায়ী মৌলভীবাজার শীর্ষে। মৌলভীবাজারের পর দ্বিতীয় অবস্থানে মুন্সীগঞ্জ, তৃতীয় চট্টগ্রাম, চতুর্থ ঢাকা ও পঞ্চম অবস্থানে রয়েছে সিলেট। সারা দেশে করোনা সংক্রমণ পরীক্ষার বিপরীতে এ পরিসংখ্যান তৈরি হয়।
সিভিল সার্জন আরও জানান, সারা দেশে করোনা সংক্রমণের হার টেস্টের বিপরীতে ১৯ দশমিক ০৯ শতাংশ। সেখানে মৌলভীবাজারে সংক্রমণের হার ২২ দশমিক ২০ ভাগ।
জেলায় এখন পর্যন্ত মোট পজিটিভ রোগী দুই হাজার ৩৯ জন। এর মধ্যে মারা গেছেন ২৪ জন। করোনা চিকিৎসার জন্য জেলা শহরে ৫০, রাজনগরে ৪০ ও অন্যান্য উপজেলায় ১০টি করে বিশেষ শয্যা প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
এদিকে করোনা মোকাবেলায় মৌলভীবাজার জেলা প্রশাসন, উপজেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ, সিভিল সার্জন অফিস ও স্বাস্থ্য বিভাগ, পৌরসভাসহ বিভিন্ন দপ্তর বিনামূল্যে মাস্ক বিতরণ ও জনসচেতনতামূলক কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছে বলে জানানো হয়। সংবাদ সম্মেলনে করোনা সংক্রমণ কমিয়ে আনতে সবার সহযোগিতা চাওয়া হয়।