ময়মনসিংহে ভূমিসেবা সপ্তাহে ৯ গুণ ফি আদায়

Looks like you've blocked notifications!
সরিষা ইউনিয়ন পরিষদ অফিস। ইনসেটে ভূমি অফিসের এমএলএসএস মো. স্বপন। ছবি : সংগৃহীত 

ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলায় ভূমিসেবা সপ্তাহেও জমির কর পরিশোধ করতে গিয়ে ঘুষসহ ১০ গুণ টাকা দিতে হয়েছে অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। সরকারঘোষিত ভূমিসপ্তাহ পালনকালেও ভূমি অফিসের একটি অসাধু চক্রের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছে সাধারণ মানুষ।

ভূমি অফিসের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অধিক ফি বাণিজ্যের অভিযোগ প্রকাশ্যে আসার পর অতিরিক্ত টাকা ফেরত নিতে ভুক্তভোগীকে চাপ প্রয়োগ করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ উঠেছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিস ও ইউনিয়ন  ভূমি অফিসে কর্মরত থেকে ঘুষের বাণিজ্য নিয়ন্ত্রণ করছেন এক পরিবারের বাবা-ছেলে মিলে তিনজন। তাদের মধ্যে বাবা মো. নূরুল ইসলাম ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলা ভূমি অফিসের পরিচ্ছন্নকর্মী। তাঁর ছেলে নয়ন মিয়া একই উপজেলার জাটিয়া ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এমএলএসএস এবং অপর ছেলে স্বপন মিয়া সরিষা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে এমএলএসএস পদে কর্মরত। এই পরিবারটির কাছেই জিম্মি এলাকার সাধারণ মানুষ।

সম্প্রতি উপজেলার সরিষা ইউনিয়ন সহকারী ভূমি কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম ও স্বপন মিয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেছে এক সাংবাদিক পরিবার।

অভিযোগে জানা যায়, গত ৩ জুন বৃহস্পতিবার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার সরিষা ইউনিয়নে ভূমি কর পরিশোধ করতে যান মাছিমপুর গ্রামের আব্দুর রাশিদ। ভূমির উপর কত টাকা কর হয়েছে জানতে চাইলে ভূমি অফিসের এমএলএসএস মো. স্বপন কাগজপত্র যাচাই-বাচাই করে চার হাজার ৫০০ টাকা দাবি করেন। আব্দুর রাশিদ পূর্ব পরিচিত স্বপন মিয়ার হাতে চার হাজার ৫০০ টাকা দিয়ে রশিদ চান। এ সময় তাঁকে সরিষা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম স্বাক্ষরিত ৫৫২ টাকা কর পরিশোধের চারটি রশিদ দেওয়া হয়। রশিদে দেখা যায়-২৪৪২৭৭ নম্বর রশিদের বিপরীতে ১০ টাকা, ২৪৪২৭৮ এবং ২৪৪২৭৯ নম্বর রশিদে ২০২ টাকা,  এবং ২৪৪২৮০ নম্বর রশিদে ১৩৮ টাকা কর আদায় করা হয়েছে।

বিষয়টি নিয়ে আব্দুর রাশিদ চ্যালেঞ্জ করলে স্বপন মিয়া জানান, আপনার জমিতে প্রচুর রাজস্ব আসে। আমরা সবাই মিলে (ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা, এমএলএসএস মো. স্বপনসহ অন্যরা) সরকারি কর ফাঁকি দিয়ে আপনাকেও বাঁচিয়ে দিলাম আর আমরাও কিছু টাকা নিলাম। আমরা ঠিক থাকলেই সরকার ঠিক।

পরে ৫ জুন আব্দুর রাশিদ ভূমি অফিসের দুর্নীতির বিষয়টি নিয়ে তাঁর ছেলে সাংবাদিক আব্দুল কাইয়ুমের মাধ্যমে ঈশ্বরগঞ্জের সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) অবহিত করেন। এরপর ভূমি অফিসের এমএলএসএস মো. স্বপন মিয়া আব্দুর রাশিদকে ফোন করে অতিরিক্ত টাকা ফেরত দিতে চান এবং বলেন, ‘আমি (স্বপন মিয়া) দুই হাজার টাকা নিয়েছি তা ফেরত দেব।’ 

ইউনিয়ন ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা মো. নজরুল ইসলাম এবং অফিস সহকারী আজিজুল ইসলাম এক হাজার টাকা করে নিয়েছেন। তাদের কাছ থেকে টাকা উদ্ধার করা সম্ভব না। কিন্তু আব্দুর রাশিদ টাকা ফেরত নিতে অস্বীকৃতি জানান। অবস্থা বেগতিক দেখে স্বপন মিয়া  ঈশ্বরগঞ্জ সাব-রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখক মো. আবুল খায়েরের মাধ্যমে টাকা ফেরত দেওয়ার চেষ্টা করেন। ব্যর্থ হয়ে তিনি প্রভাবশালী ব্যক্তিদের মাধ্যমে ঘুষের টাকা ফেরত নিতে ভুক্তভোগীকে হুমকি-ধমকি দিচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

বাবা-ছেলে ও সরিষা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের নায়েব নজরুল ইসলামের বিরুদ্ধে জমি খারিজ করে দেওয়ার নামে ঘুষ বাণিজ্যের অসংখ্য অভিযোগ রয়েছে।

এ ব্যাপারে ৫ জুন ঈশ্বরগঞ্জের সহকারী কমিশনার (ভূমি) অনামিকা নজরুল বলেন, ‘অভিযোগ পেয়েছি, ব্যবস্থা নেব।’

কিন্তু আজ বুধবার পর্যন্ত অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে ওই ভূমি কর্মকর্তা কোনো ব্যবস্থা নেননি।

এ বিষয়ে আজ বিকেলে ময়মনসিংহের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সমর কান্তি বসাক বলেছেন, ‘বিষয়টি দ্রুত তদন্ত করে ব্যবস্থা নিতে উপজেলা ভূমি কর্মকর্তাকে এখনই নির্দেশ দিচ্ছি। দোষীদের বিরুদ্ধে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এ বিষয়ে সরিষা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল ইসলাম অভিযোগ করে জানান, দুই সপ্তাহ আগে তাঁর ভাগ্নি আমেনা ভূমি কর দিতে গেলে ২০২ টাকা করের রশিদ দিয়ে এক হাজার টাকা নিয়েছেন সরিষা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের আজিজুল ও স্বপন। এ দুজন হরহামেশাই মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করে চলেছেন।

জনস্বার্থে এই দুই কর্মচারীর বদলি ও শাস্তি দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে কথা বলতে সরিষা ইউনিয়ন ভূমি অফিসের এমএলএসএস মো. স্বপন সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এসিল্যান্ড (উপজেলা সহকারী কমিশনার, ভূমি) স্যার আমাকে ডেকেছেন। ঘটনা পুরোপুরি সত্য নয়।’