ময়মনসিংহে মায়ের পরকীয়ার বলি স্কুলছাত্র পারভেজ

Looks like you've blocked notifications!
ময়মনসিংহে পরকীয়ার বলি স্কুলছাত্র পারভেজের মাসহ গ্রেপ্তারকৃত আসামিরা। ছবি : এনটিভি

মায়ের পরকীয়ায় বাধা হওয়ায় ভাড়াটে ঘাতক দিয়ে ছেলে পারভেজকে খুনের রহস্য উদঘাটন করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। ঘাতক রবিউল ইসলামকে গতকাল বুধবার সন্ধ্যায় গাজীপুরের টঙ্গী পশ্চিম থানা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করেছে পিবিআই ময়মনসিংহ শাখা। এ ছাড়া আজ বৃহস্পতিবার পারভেজের মা রোজিনা আক্তারসহ ছয়জনকে আটক করার কথা জানিয়েছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)।

আসামি রবিউল ইসলামের কাছ থেকে মা ও ছেলের ব্যবহৃত মোবাইল ফোন ও সিম কার্ড উদ্ধার করে পিবিআই। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে রবিউলকে আদালতে পাঠানো হয়। আদালতে রবিউল জবানবন্দি দেন। সন্ধ্যায় ময়মনসিংহ পিবিআইয়ের পুলিশ সুপার (এসপি) গৌতম কুমার বিশ্বাস ই-মেইলে এসব তথ্য জানিয়েছেন।

এসপি গৌতম কুমার বিশ্বাস জানান, জেলার ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার মরিচারচর গ্রামের মো. মুঞ্জুরুল হক জীবিকার জন্য মালয়েশিয়ায় থাকেন। তাঁর স্ত্রী রোজিনা আক্তার পাঁচ সন্তান নিয়ে স্বামীর বাড়িতে বসবাস করেন। তাঁর তিন ছেলে, দুই মেয়ে। 

বড় ছেলে পারভেজ মরিচারচর উচ্চ বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণির ছাত্র। গত ৯ অক্টোবর সকালে বাড়ি থেকে বের হয় পারভেজ। কিন্তু সে আর বাড়ি ফিরেনি। পরের দিন ১০ অক্টোবর সকালে ব্রহ্মপুত্র নদে পারভেজের মৃতদেহ ভাসমান অবস্থায় পাওয়া যায়। এ নিয়ে শুরু হয় ব্যাপক চাঞ্চল্য। হত্যার রহস্য উদঘাটনে মাঠে নামে পুলিশ, ডিবি ও র‍্যাব। 

পুলিশের ভাষ্যমতে, স্বামী দীর্ঘ দিন দেশের বাইরে থাকায় রোজিনা আক্তার জড়িয়ে পড়েন পরকীয়ায়। তিনি দিন-রাত মোবাইলে বাইরের লোকদের সঙ্গে কথা বলতেন। পারভেজ বিষয়টি আঁচ করতে পেরে নানাভাবে মাকে বাধা দিতে থাকে। রোজিনা যে নম্বরগুলোতে কথা বলতেন ছেলে পারভেজ কৌশলে সেই নম্বরগুলো ব্লক করে দিত। রোজিনা প্রতিবেশী রবিউলকে দিয়ে নম্বরগুলো আনব্লক করে নিতেন। তাঁর ফোনে টাকাও রিচার্জ করে দিতেন আসামি রবিউল। রোজিনা তাঁকে বখশিস দিতেন। এ ছাড়া টাকার বিনিময়ে রোজিনার সংসারের কাজও করে দিতেন রবিউল।

কোরবানির ঈদের পর আসামি রবিউল ইসলাম রবি টঙ্গীতে গিয়ে পোশাক কারখানায় কাজ নেন। পারভেজের মা মাঝেমধ্যেই ফোন দিতেন রবিউলকে। গত ৯ অক্টোবর রোজিনা জরুরি কাজের কথা বলে রবিউলকে ডেকে আনেন। তারপর রোজিনা ছেলে পারভেজকে খুন করার জন্য রবিউলের সঙ্গে ৫০ হাজার টাকায় চুক্তি করেন বলে পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়।  

ঘটনার বর্ণনা দিয়ে পিবিআই কর্মকর্তা আরো বলেন, রবিউল সেদিন নদীর পাড়ে গিয়ে অপেক্ষা করতে থাকে। রোজিনা তার একটি মোবাইল রবিউলের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য ছেলে পারভেজকে পাঠান। পারভেজ সাইকেলে চেপে নদীর পাড়ে যান। মায়ের কথামতো, মোবাইল ফোন রবিউলের হাতে দিয়ে  পারভেজ বাড়ির দিকে রওনা হন। সঙ্গে সঙ্গে রবিউল তার কাছে থাকা গাছের মোটা ডাল দিয়ে পারভেজের মাথায় একের পর এক আঘাত করতে থাকে। পারভেজ তখন মাটিতে লুটিয়ে পড়ে। রবিউল তখন পারভেজের টাচ ফোন এবং পারভেজের মায়ের দেওয়া বাটন ফোন দুটি নিয়ে দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন।

এরপর রবিউল পরে পারভেজের মা রোজিনার কাছে গিয়ে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেন। তখন রোজিনা বলেন, পারভেজের বাবা বিদেশ থেকে টাকা পাঠালে টাকা দেওয়া হবে।

এরপর আসামি রবিউল ওই রাতেই আবারও টঙ্গীতে ফিরে আত্মগোপন করেন। এ ঘটনায় ১২ অক্টোবর ইশ্বরগঞ্জ থানায় পারভেজের চাচা নুরুল আমিন বাদী হয়ে একটি মামলা করেন। ১৪ অক্টোবর মামলাটি তদন্তের দায়িত্ব পায় পিবিআই। পাঁচ দিনের মাথায় পারভেজ খুনের রহস্য উদঘাটন ও খুনিকে গ্রেপ্তার করে পিবিআই।

এদিকে বুধবার রাতে ময়মনসিংহ র‍্যাব-১৪ বিশেষ অভিযান চালিয়ে পারভেজের মা রোজিনা ও  খুনের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে পাঁচজনকে আটক করে। পরে তাদের ঈশ্বরগনঞ্জ থানায় সোপর্দ করা হয়। অন্যরা হলেন রোজিনার কথিত প্রেমিকা মো. এমদাদুল হক (৫০), সন্দেহভাজন মো. গনি (৪৫), মো. সুলতান উদ্দিন (৪৫) ও মো. রুহুল আমিন (৫৮)।

আজ বিকেলে র‍্যাবের মিডিয়া  কর্মকর্তা জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ সুপার জোনাঈদ আফ্রাদ ই-মেইলে এ তথ্য জানিয়েছেন।