যমুনার ভাঙনে টাঙ্গাইলে একদিনেই গৃহহীন ৯২ পরিবার

Looks like you've blocked notifications!
কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ভৈরববাড়ি গ্রামে যমুনা ভাঙন। ছবি : এনটিভি

যমুনার ব্যাপক ভাঙনের কবলে পড়েছে টাঙ্গাইলের সদর, নাগরপুর ও কালিহাতী উপজেলা। এরই মধ্যে কালিহাতী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের ভৈরববাড়ি গ্রামে যমুনা ভাঙনে ৯২টি পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়েছে। শতাধিক মানুষ অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ড কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, গত শুক্রবার রাত থেকে ভাঙন শুরু হয় গ্রামটিতে। যমুনার পানি কমতে থাকায় ওই দিনে রাত থেকে পরের দিন শনিবার দুপুর পর্যন্ত ১৪টি বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যায়। এ ছাড়া গত শনিবার ৭৮টি বাড়ি ভাঙন শুরু হওয়ার পর ভেঙে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে।

হঠাৎ করে একদিনে একটি গ্রামের এতগুলো পরিবার গৃহহীন হয়ে পড়ায় ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে হাহাকার শুরু হয়েছে। আতঙ্ক দেখা দিয়েছে  গ্রামটিতে। গত শনিবার দুপুরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ক্ষতিগ্রস্তদের মধ্যে আর্থিক সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

বর্ষার আসতে না আসতেই টাঙ্গাইলে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিক বৃদ্ধি পাচ্ছে। পানি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেখা দিয়েছে তীব্র ভাঙন। এরই মধ্যে টাঙ্গাইল সদর উপজেলার চর পৌলী, কাকুয়া, হুগড়া, মাহমুদনগর; কালিহাতি উপজেলার বেলটিয়াবাড়ি ও নাগরপুর উপজেলার সলিমাবাদ এলাকায় ভাঙন দেখা দিয়েছে। গত এক সপ্তাহে প্রায় দেড় শতাধিক ঘরবাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এমন ভাঙনে দিশেহারা হয়ে পড়েছে ভাঙন কবলিত মানুষজন। অনেকে ঘরবাড়ি সরিয়ে নেওয়ার সুযোগটুকুও পাচ্ছে না। এসব ভাঙন কবলিত মানুষজন ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি হারিয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে।

এদিকে, পানি উন্নয়ন বোর্ড পৌলী এলাকায় মাত্র ৩০০ মিটার এলাকায় জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন রোধের চেষ্টা করলেও তা কোনো কাজে আসছে না।

গত শনিবার বিকেলে সরেজমিন ভৈরববাড়ি গ্রামে গিয়ে দেখা যায়, ভাঙনের শিকার পরিবারগুলো বাড়িঘরের জিনিসপত্র নিয়ে রাস্তায় জমা করে রেখেছে। কেউ কেউ নিরাপদ স্থানে আত্মীয়স্বজনের বাড়িতে আশ্রয় নিয়েছে। গ্রামটিতে যাওয়ার পথে দেখা যায়, বেশ কিছু অংশ গাইড বাঁধ দেওয়া আছে। গাইড বাঁধের পর আরও কিছু অংশে জিও ব্যাগ ফেলা হয়েছে ভাঙন  প্রতিরোধে। এ বছর বর্ষা মৌসুমের শুরুতে এ জিও ব্যাগগুলো ফেলা হয়েছে বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে।

ওই গ্রামের আব্দুল মালেক জানান, তার একটি মুরগির খামার ও বসতবাড়ি শুক্রবার রাতে নদীগর্ভে চলে গেছে। সব হারিয়ে এখন তিনি অসহায়। আগামীতে কীভাবে চলবেন সেই চিন্তায় চোখে অন্ধকার দেখছেন। কিন্তু শনিবার সকালেই তিনি সব হারিয়ে পথে বসেছেন।

দুর্গাপুর ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান এস এম আনোয়ার হোসেন জানান, ৯২টি পরিবার শুক্রবার রাত ও শনিবারের ভাঙনে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

জেলা প্রশাসক ড. মো. আতাউল গনি শনিবার সকালে ভাঙন কবলিত ওই গ্রাম পরিদর্শন করেছেন। নদীতে ঘরবাড়িসহ সবকিছু বিলীন হয়ে যাওয়া ১৪টি পরিবারকে তিনি পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন। এ ছাড়া ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলোকে খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. সিরাজুল ইসলাম জানান, ভাঙন কবলিত ওই গ্রামে জরুরি ভিত্তিতে জিও ব্যাগ ফেলে ভাঙন প্রতিরোধে কাজ শুরু করা হয়েছে।