যশোরের খেজুর গুড়ের ঐতিহ্য রক্ষায় গাছি সমাবেশ
যশোরের ঐতিহ্যবাহী ব্র্যান্ডপণ্য খেজুর রস ও গুড়ের ঐতিহ্য ধরে রাখতে যশোরের চৌগাছায় গাছি সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে উপজেলার রামভদ্রপুর-কুষ্টিয়া, ফতেপুর ও ভাদড়া গ্রামের গাছিদের নিয়ে এ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। সেফ দ্য ট্র্যাডিশন ও ইনভাইরনমেন্ট এই সমাবেশের আয়োজন করে।
সমাবেশে সংগঠনের সভাপতি মোহাম্মদ আবু বকর বলেন, ‘যশোর জেলার ব্র্যান্ড-পণ্য খেজুর রসের গুড়ের ঐতিহ্য হারিয়ে যেতে বসেছে। অথচ, আমাদের জেলা ব্রান্ডিং স্লোগান ‘নানা রঙের ফুলের মেলা খেজুর গুড়ে যশোর জেলা’। এরমধ্যে খেজুরের গুড়ই আমাদের প্রাচীন ঐতিহ্য। আর সেই ঐতিহ্য আজ হুমকির মুখে। হারিয়ে যাচ্ছে গাছি। কমে গেছে গাছ। ‘খেজুরের রস- যশোরের যশ’ ছিল সারা বাংলার মুখে মুখে। এখন সেটিও অনেকটাই ম্লান। খেজুর গাছ ও গাছি হারিয়ে গেলে আমরা যশোরের মানুষ কীভাবে দেশের মানুষের প্রশ্নে উত্তর দেব?’
গাছি ও খেজুর গাছ নিয়ে করণীয় এখনই ঠিক করা উচিৎ। সেক্ষেত্রে সংশ্লিষ্টদের এগিয়ে আসা দরকার মন্তব্য করে আবু বকর বলেন, ‘সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের অধীনে খেজুর গাছ উন্নয়ন বোর্ড এবং গাছি প্রশিক্ষণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা গেলে যশোরের ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখা সম্ভব। খেজুর গাছ শুধু ঐতিহ্য নয়, মাটিক্ষয় রোধ, বজ্রপাত নিয়ন্ত্রণ ও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।’
গাছি আইনাল বলেন, ‘আমরা বাপ-দাদার আমল থেকে খেজুর গাছ কেটে আসছি। কিন্তু, বর্তমানে খেজুর গাছ কমে যাওয়ায় ১৭টা গাছ কাটি প্রতি বছর। এখন আর কেউ খেজুর গাছ লাগায় না। এ গাছ হয়তো আর বেশিদিন থাকবে না। এ জন্য উদ্যোগ দরকার।’
সমাবেশে গাছিরা বলেন, ‘অনেকে পেশা বদল করেছেন। কারণ, অন্যান্য চাষাবাদে প্রণোদনা, পুরস্কার, মাঠ পর্যায়ে বৈঠক, পরামর্শসহ অনেক কিছুই করা হয়। আপদকালীন ঋণও পান বলে শুনেছি। আমরা তার কিছুই পাই না। ফলে, আমাদের ছেলেমেয়েরা আর গাছি পেশা ধরে রাখতে উৎসাহ পায় না। যদি সব কিছু নিয়ে সরকারি উদ্যোগ সাড়া ফেলে, তবে যশোর যশ আবারও এই গুড়ের মাধ্যমে উঠে আসা সম্ভব। কারণ, আমাদের যশোরের গুড় এক সময় অনেক পরিমাণে বিদেশেও যেত। আর এটি বাণিজ্যিকভাবে করা গেলে সরকার প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারবে। গাছিও পাবে নতুন জীবন।’
অনুষ্ঠানে স্থানীয় ধূলিয়ানী ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান মোমিনুর রহমান বলেন, “যশোরের ঐতিহ্য রক্ষায় ‘সেভ দ্য ট্রাডিশন অ্যান্ড এনভারনমেন্ট মাঠ পর্যায়ে কাজ করছে। এটা অনেক বড় উদ্যোগ। আমরা চাই, যশোরের খেজুর রস গুড়ের ঐতিহ্য টিকে থাক।”
গাছি সমাবেশে আরও উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের পরিবেশবিষয়ক সম্পাদক মেহেদী হাসান সাকিল, ইউপি সদস্য আব্দুর রশিদ, রিপন মাহমুদ, নাছিমা খানসহ গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গ।