যাত্রীবেশে বাসে উঠে চালককে ছুরি মেরে ডাকাতি, গ্রেপ্তার ৬

Looks like you've blocked notifications!
ডাকাত চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। আজ রোববার র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখা এই তথ্য জানিয়েছে। ছবি : ফোকাস বাংলা

প্রথমে ভুয়া মুঠোফোনের নম্বর দিয়ে কাউন্টার থেকে উত্তরবঙ্গের বাসের টিকেট কাটতেন তারা। এরপর পরিকল্পনা অনুযায়ী, গভীর রাতে বাস নির্জন স্থানে পৌঁছালে ধারালো অস্ত্র দেখিয়ে পুরো বাসের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ডাকাতি করতেন একটি চক্র।

দীর্ঘদিন ধরে ডাকাতি করে চলা এমন একটি চক্রের ছয় সদস্যকে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‍্যাব)। গতকাল শনিবার ঢাকার আশুলিয়া ও গাইবান্ধায় অভিযান চালিয়ে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। আজ রোববার দুপুরে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এই দাবি করেন র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

গ্রেপ্তারকৃত ব্যক্তিরা হলেন- নয়ন চন্দ্র রায় (২২), মো. রিয়াজুল ইসলাম লালু (২২), মো. ওমর ফারুক (১৯), মো. ফিরোজ কবির (২০), আবু সাঈদ মোল্লা (২৫) ও শাকিল মিয়া (২৬)।

সংবাদ সম্মেলনে র‍্যাব দাবি করে, চক্রটি হানিফ পরিবহণ, শ্যামলী পরিবহণ, রত্না স্পেশাল, সিটিবাড়ি স্পেশাল, সৈকত পরিবহণসহ একাধিক বাসে ডাকাতি করে আসছিল। গত ৩১ আগস্ট রাতে যাত্রীবেশে রাজধানীর গাবতলী থেকে ছেড়ে যাওয়া হানিফ পরিবহণের একটি বাসে উঠেন ডাকাতদলের সদস্যরা। রাত ৩টার দিকে ধাপেরহাট এলাকায় পৌঁছালে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয় তারা। এরপর ছুরিকাঘাত করে বাসের চালক মনজুর হোসেনকে (৫৫)। পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

এ ঘটনায় বাসের সুপারভাইজার মো. পইমুল ইসলাম বাদী হয়ে রংপুর জেলার পীরগঞ্জ থানায় একটি মামলা করেন। এরপর থেকে তদন্ত শুরু করে র‍্যাব। সর্বশেষে গতকাল তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘গত ৩১ আগস্ট হানিফ পরিবহণের একটি বাস পঞ্চগড়ের উদ্দেশ্যে গাবতলী ছেড়ে যায়। বাসটি সাভারে পৌঁছুলে পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী ডাকাত দলের তিনজন (রিয়াজুল ইসলাম ওরফে লালু, আবু সাঈদ মোল্লা ও অপর একজন) এবং নবীনগর পৌঁছলে ডাকাত দলের আরও তিনজন (নয়ন চন্দ্র রায়, ওমর ফারুক ও ফিরোজ কবির) যাত্রীবেশে বাসে ওঠে। রাত আনুমানিক আড়াইটার দিকে বাসটি গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার বিটিসি মোড় অতিক্রম করার পর বাসে যাত্রীবেশে থাকা ডাকাত দলের সদস্যরা ডাকাতির জন্য বাসটি তাদের নিয়ন্ত্রণে নেওয়ার চেষ্টা করে।’

‘প্রথমে তারা বাসের চালক মনজুর হোসেনকে ধারালো ছুরি দিয়ে আঘাত করে। এ সময় চালক বাসটি ঘুরিয়ে আনার চেষ্টা করলে তারা আবার চালকের কাঁধে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে বাসটির নিয়ন্ত্রণ নেয়। এরপর ডাকাত দলের সদস্য রিয়াজুল ইসলাম ওরফে লালু বাসটি চালাতে থাকে ও দলের অন্য সদস্যরা বাসে লুটপাট করতে করতে রংপুরের শটিবাড়ীস্থ ভাবনা ফিলিং স্টেশনে ইউটার্ন করে আবার উল্টো পথে রওয়ানা করে।’

খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘পলাশবাড়ী পৌঁছার আগে ডাকাতেরা ঢাকা-রংপুর মহাসড়কে পীরগঞ্জের চম্পাগঞ্জ হাইস্কুলের সামনে রাত ৩টার দিকে যাত্রীসহ বাসটি রেখে পালিয়ে যায়। এ সময় ডাকাতরা যাত্রীদের মুঠোফোন ও নগদ ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা লুট করে পালিয়ে যায়। পরবর্তীতে গুরুতর আহত অবস্থায় বাসচালক মনজুর হোসেনকে পলাশবাড়ী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে গেলে কতর্ব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।’

জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে র‍্যাবের এ কর্মকর্তা বলেন, ‘তারা একটি সংঘবদ্ধ ডাকাত দলের সক্রিয় সদস্য। দলটির সদস্য ১০ থেকে ১২ জন। গ্রেপ্তারকৃত নয়ন চন্দ্র রায় ডাকাত দলের মূল হোতা। তিনি ডাকাত দলটি নিয়ন্ত্রণ করতেন। দলের সদস্যরা দীর্ঘদিন উত্তরবঙ্গগামী বাসে সাধারণ যাত্রীবেশে উঠে ডাকাতি করে আসছিল। তারা গত বছরের ডিসেম্বর থেকে এখন পর্যন্ত সাত থেকে আটটি বাসে ডাকাতি করেছে। এর আগে ডাকাতচক্রটি পলাশবাড়ী থেকে পীরগঞ্জ ৪৮ কিলোমিটার এলাকায় গত বছরের ১৮ ডিসেম্বর রত্না স্পেশাল, ১ জানুয়ারি সিটিবাড়ি স্পেশাল, ১২ জানুয়ারি সৈকত পরিবহণ, ৮ মার্চ শ্যামলী পরিবহণ, ৪ এপ্রিল জায়দা পরিবহণ ও ১৯ আগস্ট ডিপজল পরিবহণে ডাকাতি করছে বলে স্বীকার করেছে। সাধারণত, তারা পলাশবাড়ি থেকে পীরগঞ্জ মহাসড়কের নির্জন এলাকা বাস ডাকাতির জন্য বেছে নেয়। ডাকাতি করার পর তারা ফের আশুলিয়ায় ফিরে আসত।’