যাবজ্জীবন সাজা পাওয়া পলাতক আসামি ২৯ বছর পর গ্রেপ্তার
১৯৯২ সালের ২৪ জুন। ২৯ বছর আগে এদিন রাতে রংপুরের মিঠাপুকুর থানার গুটিবাড়ী সরকারপাড়া এলাকায় খুন হন ইব্রাহিম ওরফে ইব্রা। ওই ঘটনায় করা হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি আবুল কালাম আজাদকে অবশেষে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব। যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত এ আসামিকে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন বলে জানিয়েছে র্যাব।
রাজধানীর কারওয়ান বাজার মিডিয়া সেন্টারে আজ সোমবার দুপুরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র্যাব-৪-এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক।
র্যাব জানায়, আবুল কালাম আজাদ গ্রেপ্তার এড়াতে বাড়ি ছাড়েন। তিনি নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে কাজ করেন। সর্বশেষ তিনি মিরপুরের আহম্মেদনগরে একটি নির্মানাধীন ভবনে কাজ করছিলেন।
রংপুর থেকে পালিয়ে ঢাকায় চলে আসার পর আবুল কালাম আজাদ বদলে ফেলেন নিজের নাম-পরিচয়ও। নিজেকে আড়াল করার জন্য আজাদ মিয়া নাম ধারণ করে মিরপুর থানাধীন আহম্মেদনগরের ঠিকানা ব্যবহার করে নতুন জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন।
কিন্তু, ২৯ বছর পর শেষ পর্যন্ত আবুল কালাম আজাদ ধরা পড়েছেন র্যাবের হাতে। রাজধানীর মিরপুরের পাইকপাড়া থেকে তাঁকে গ্রেপ্তার করেছে র্যাব-৪ -এর একটি দল।
র্যাব-৪-এর অধিনায়ক (সিও) অতিরিক্ত ডিআইজি মো. মোজাম্মেল হক বলেন, ‘২৯ বছর আগে ১৯৯২ সালের ২৪ জুন রাত সাড়ে ৮টার দিকে বাজার থেকে ফেরার পথে রংপুর জেলার মিঠাপুকুর থানার গুটিবাড়ী সরকারপাড়া এলাকায় খুন হন ভিকটিম মো. ইব্রাহিম ওরফে ইব্রা।’
‘জায়গা-জমি সংক্রান্ত বিরোধ ও পূর্ব শত্রুতার জেরে পরিকল্পিতভাবে কয়েকজন মিলে মো. ইব্রাহিম ধারালো দেশীয় অস্ত্র দিয়ে গুরুতরভাবে আঘাত করে মুমূর্ষ অবস্থায় রাস্তার পাশে ফেলে রেখে পালিয়ে যায়। স্থানীয় হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় পরদিন মারা যান ইব্রাহিম’, যোগ করেন মো. মোজাম্মেল হক।
এরপর মো. ইব্রাহিমের বড় ভাই মো. মফিজ উদ্দিন মিঠাপুকুর থানায় আবুল কালাম আজাদসহ ছয় জনকে আসামি করে একটি হত্যা মামলা করেন বলে র্যাব জানায়।
ওই মামলার তদন্ত শেষে তদন্তকারী কর্মকর্তা র্যাবের হাতে গ্রেপ্তার হওয়া আবুল কালাম আজাদসহ এজহারনামীয় তিন জনের বিরুদ্ধে আদালতে একই বছর ডিসেম্বর মাসে অভিযোগপত্র দাখিল করেন এবং এজাহারনামীয় বাকি তিন জনের বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণ না হওয়ায় অভিযোগপত্র থেকে অব্যাহতি দেন।
পরবর্তী অভিযোগপত্রের ভিত্তিতে রংপুরের অতিরিক্ত দায়রা জজ আদালত মামলার বিচারকাজ পরিচালনা করেন এবং স্বাক্ষ্য-প্রমাণ এবং উভয় পক্ষের যুক্তি-তর্ক শেষে ইব্রাহিম হত্যাকাণ্ডে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকার অপরাধে অভিযোগপত্রে অভিযুক্ত তিন জনকে ২০০৩ সালের ১৩ এপ্রিল যাবজ্জীবন সাজা দেন।
রায় ঘোষণার সময় যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি ফারাজ উদ্দিন (৫০) গ্রেপ্তার থাকলেও সাজাপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি—আবু ডাকাত ও আবুল কালাম আজাদ পলাতক ছিলেন। পরে আবু ওরফে আবু
ডাকাত গ্রেপ্তার হলেও আবুল কালাম আজাদকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।
আজাদকে গ্রেপ্তারে সংশ্লিষ্ট থানা চিঠি পাঠালে করলে র্যাব-৪ গোয়েন্দা নজরদারি শুরু করে। সর্বশেষ গত সোমবার (৬ সেপ্টেম্বর) ভোরে মিরপুর পাইকপাড়া আহম্মেদনগর এলাকা থেকে আজাদকে গ্রেপ্তার করে র্যাব-৪-এর একটি দল।
র্যাবের অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক বলেন, জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়—আবুল কালাম আজাদ মা-বাবার একমাত্র সন্তান। তিনি ১৯৮৭ সালে দাখিল, ১৯৮৯ সালে আলিম, এবং ১৯৯১ ফাজিল পাস করেন। তিনি ২০০৭ সালে নাম-পরিচয় গোপন করে পার্শ্ববর্তী বদরগঞ্জ থানার বাতাসন গ্রামের একটি মেয়েকে বিয়ে করেন। হত্যা মামলার যাবজ্জীবন সাজাপ্রাপ্ত আসামি জানায় স্ত্রীর সঙ্গে তাঁর ছয় মাস পর বিচ্ছেদ ঘটে।
১৯৯২ সালে মামলা হওয়ার পর থেকে ২০০১ সাল পর্যন্ত আবুল কালাম আজাদ রংপুর বিভাগের বিভিন্ন জায়গায় আত্মগোপনে ছিলেন। পরিচিত লোকজন থেকে নিজেকে আড়াল করে রাখতে ২০০১ সালে ঢাকায় আসেন। ২০০১ সাল থেকে গ্রেপ্তারের আগপর্যন্ত তিনি ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় আত্মগোপন করেন। বিভিন্ন এলাকায় নির্মাণাধীন ভবনে শ্রমিক হিসেবে কাজ করেন। সর্বশেষ তিনি মিরপুরের আহম্মেদনগরের একটি নির্মাণাধীন ভবনে কাজ করছিলেন। নিজেকে আড়াল করার জন্য আজাদ মিয়া নামধারণ করে মিরপুর থানার আহম্মেদনগরকে বর্তমান ঠিকানা হিসেবে ব্যবহার করে জাতীয় পরিচয়পত্র তৈরি করেন। তবে, স্থায়ী ঠিকানা হিসেবে রংপুরের মিঠাপুকুরের গুটিবাড়ী কবিরাজ পাড়া উল্লেখ করেন।