যুদ্ধাহত নরেশের হাতে ভিক্ষার থলি, মেলেনি স্বীকৃতি

Looks like you've blocked notifications!
মুক্তিযুদ্ধে অংশ নেওয়া যুদ্ধাহত নরেশ চন্দ্র বর্মণ। ছবি : এনটিভি

প্রতিদিন সকালে এক মুঠো চাল ভেজে নরেশ চন্দ্রের হাতে তুলে দেন ছোট মেয়ে বাসনা রায় (১৯)। আর সেই চালভাজা খেতে খেতে হাতে ভিক্ষার থলি নিয়ে বেরিয়ে পড়েন নরেশ। দিনভর এ বাড়ি থেকে ও বাড়ি, এ দোকান থেকে ও দোকানে ধরনা দিয়ে কিছু চাল আর দু-চার টাকা যা পান, তাই দিয়ে আধপেটা খেয়ে দিন কাটে নরেশের পরিবারের। বেঁচে থাকার জন্য বয়সের ভারে নুয়ে পড়া শরীরকে এভাবেই টেনে নিয়ে বেড়ান একাত্তরে ৬ নম্বর সেক্টরের বীর মুক্তিযোদ্ধা নরেশ চন্দ্র বর্মণ। এই মুক্তিযোদ্ধা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে টাকা দিতে না পারায় আজও মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতি পাননি বলে অভিযোগ তাঁর পরিবারের। আর এ জন্য যুদ্ধাহত নরেশ তাঁর স্বীকৃতি পেতে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

নীলফামারীর জলঢাকা উপজেলার চিড়াভিজা গোলনা এলাকার পুর্ণচন্দ্র বর্মণের ছেলে নরেশ চন্দ্র বর্মণ। বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণের পর পুরো দেশ যখন উত্তাল, তখন মা-বাবা, ভাই-বোন আর পাড়া-প্রতিবেশীর সঙ্গে নরেশও পাড়ি জমান ভারতে। শরণার্থী হিসেবে আশ্রয় নেন জলপাইগুড়ি জেলার বাতাবাড়ি ক্যাম্পে। সেখান থেকে রায়গঞ্জ ইয়ুথ ক্যাস্পে গিয়ে করতেন শারীরিক কসরত। এর পর মুজিব ক্যাম্পে নেন ২৮ দিনের প্রশিক্ষণ। প্রশিক্ষণ শেষে কালিগঞ্জের আবদুল লতিফের নেতৃত্বে কালিগঞ্জ, বড়খাতা, ভুরুঙ্গামারী ও কুড়িগ্রামে পাক সেনাদের বিরুদ্ধে সম্মুখ সমরে অংশ নেন এই মুক্তিযোদ্ধা।

নরেশের অভিযোগ, স্বাধীনতার পর স্বীকৃতির জন্য অনেকের কাছে দিনের পর দিন ধর্না দিয়েছেন তিনি। তাঁকে আশ্বাসও দিয়েছেন অনেকেই। কিন্তু টাকা দিতে না পারায় আজও মেলেনি স্বীকৃতি।

মুক্তিযুদ্ধের গল্প শুনে শুনে বড় হওয়া মেয়ে বাসনা রায় জানান, নিজেকে গর্বিত ভাবলেও, যখন তাঁর বাবা ভিক্ষা করতে বের হন, তখন চাপা কান্নায় তাঁর বুক ফেটে যায়।

জলঢাকা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নেতা আবদুস সাত্তার বলেন, ‘নরেশ চন্দ্র হলেন একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ভারতীয় কল্যাণ ট্রাস্টে তাঁর নাম রয়েছে। সময়মতো হাজির হতে না পারায় তাঁর গেজেট হয়নি। আর হয়নি বলে আজ তাঁর এই দুঃখ-দুর্দশা। সেজন্য ভাতাদি না পেয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে তাঁকে। শুনেছি এখন ভিক্ষাবৃত্তিতে নেমেছেন নরেশ। আমি তাঁর মুক্তিযোদ্ধা স্বীকৃতির জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করছি।’

নীলফামারীর জেলা প্রশাসক হাফিজুর রহমান চৌধুরী বলেন, ‘নরেশ চন্দ্র বর্মণ একজন প্রকৃত মুক্তিযোদ্ধা। ভারতীয় তালিকায় তাঁর নাম থাকার পরও স্বীকৃতি না পাওয়া দুঃখজনক।’

জেলা প্রশাসক আশ্বাস দিয়ে বলেন, ‘নরেশ চন্দ্রের আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে স্বীকৃতির বিষয়টি নিশ্চিত করার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’