‘যেন কারওয়ান বাজারে করোনা নেই’

Looks like you've blocked notifications!
রাজধানীর কারওয়ান বাজার। ছবি : সংগৃহীত

কারওয়ান বাজার, সময়টা আজ বুধবার ভোর। মানুষ গিজগিজ করছে। তাঁদের প্রায় সবাই বণিক শ্রেণির। কেউ গ্রাম থেকে কাঁচামাল বিক্রি করতে এসেছেন, কেউ বিক্রিতে সহযোগিতা করছেন; কেউ বা শহুরে খুচরা বিক্রেতা।

ব্যবসায়ী ছাড়া মুটে বা মিন্তির (মাথায় করে মালামাল বহন করেন) সংখ্যাও নেহাত কম নন। বেশির ভাগ মানুষের মুখে মাস্ক নেই। স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলার বালাই নেই। এসব নিয়ে তাঁদের খুব একটা ভাবনাও নেই। এভাবেই চলছে রাজধানীর কারওয়ান বাজারের দিন-রাতের কার্যক্রম।

রাত ভারী হতে থাকে। শহর যখন ঘুমাতে ব্যস্ত হয়ে ওঠে, তখন কারওয়ান বাজার জেগে উঠতে থাকে। দিন কিংবা রাত— কারওয়ান বাজার কখনও ঘুমায় না। কারণ, এখানে থাকা মানুষের কাজের শেষ নেই, ব্যস্ততারও শেষ নেই।

আজ যেমন পরিস্থিতি, একই পরিস্থিতি এখানকার নিত্যদিনের। একটু পেছন ফিরে দেখা যাক। গত বছরের জুন মাসের এক গভীর রাতে বাজারে গিয়ে দেখা যায়, হাজার হাজার মানুষ, কিন্তু একটা বড় অংশের মুখে মাস্ক নেই। সেবার ৩০০ জনের মতো মানুষের মুখ গুণে ২৪০ জনের মুখে মাস্ক দেখা গিয়েছিল। গত বছরের ডিসেম্বর এবং এ বছরের ফেব্রুয়ারি মাসের এক রাতে কাওয়ান বাজারে গিয়েও একই দৃশ্য দেখা যায়।

মঙ্গলবার দিবাগত রাতে ঢাকার বাইরে থেকে একদল ব্যবসায়ী পিকআপে ফুলকপি নিয়ে এসেছেন। ওই পিকআপে থাকা ছয়জনের মধ্যে একজনের মুখে মাস্ক রয়েছে, বাকি পাঁচজনের মুখে মাস্ক নেই। পিকআপ থেকে কয়েকজনকে ফুলকপি নামাতে দেখা গেলেও কারও মুখে মাস্ক দেখা যায়নি।

রাজধানীর বিভিন্ন কাঁচা বাজারের খুচরা বিক্রেতারা এসেছেন তরকারি কিনতে। তাঁরা মূলত ভ্যানে ও রিকশায় চড়ে বাজারের আসেন। এমন ২৫টি ভ্যান ও রিকশা গুণে দেখা গেছে, মোট ছয়জনের মুখে মাস্ক ছিল। বাকি চারজনের মাস্ক ছিল নাক-মুখের নিচে থুতনিতে রাখা। তাহলে মোট ২৫টি বাহনে থাকা ৫৬ জনের মধ্যে ৫০ জনের মুখেই মাস্ক ছিল না।

বাজারের ভেতরে মানুষে ঠাসা পুরো স্থান। শতশত মানুষের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি মানুষের মুখে মাস্ক নেই। রাজধানীর মোহাম্মদপুর থেকে তরকারি কিনতে এসেছেন শাহজান হোসেন। তাঁর মুখে মাস্ক ছিল। তিনি বলেন, ‘এখানে মাস্ক পরে থাকলেই মনে হয় নিজেকে কেমন যেন দেখা যাচ্ছে। দেখুন, বেশির ভাগের মুখেই মাস্ক নেই। যেন কারওয়ান বাজারে করোনা নেই।’

শরিফুল ইসলাম এসেছেন একটি পিকআপে কলা ও লাউ নিয়ে। তাঁর সঙ্গে আরও চারজন এসেছেন। তাঁদের কারও মুখেই মাস্ক নেই। আশপাশে দাঁড়িয়ে থাকা ১৩ জনের মধ্যে দুজনের মুখে মাস্ক ছিল। শরিফুল বলেন, ‘মাস্ক পরে কাজ করতে কষ্ট হয়। ঝামেলা মনে হয়। আর আপনি একা মাস্ক দিয়ে কী করবেন? হাজার হাজার লোক, কিন্তু কতজনের মুখে মাস্ক আছে, তা আপনি গুণতে পারবেন।’

নামজুল হুদা এসেছেন ভ্যান নিয়ে। মো. রফিকুলের তরকারি নিয়ে যাচ্ছেন শুক্রবার বাজারে। দুজনের কারও মুখে মাস্ক ছিল না। রফিকুল বলেন, ‘মাস্ক নিয়ে আসা হয়নি। দেখি এখানে কিনতে পাওয়া যায় কি না।’

অথচ, নভেল করোনাভাইরাসের সংক্রমণ নতুন করে বেড়েছে। গত ফেব্রুয়ারিতে করোনার সংক্রমণ তিন শতাংশের নিচে ছিল। কিন্তু, গতকাল মঙ্গলবার করোনায় আক্রান্ত শনাক্ত হয়েছে তিন হাজার ৫৫৪ জন, যা মোট পরীক্ষার শতকরা ১৩ দশমিক ৬৯ শতাংশ। করোনার সংক্রমণ আরও বাড়বে বলে ধারণা বিশেষজ্ঞদের। তারা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে না চলার কোনো সুযোগ নেই।

করোনারোধে গঠিত জাতীয় টেকনিক্যাল কমিটির সদস্য অধ্যাপক ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। এই পরিস্থিতিতে মাস্ক পরা ছাড়া বাইরে যাওয়া কোনোভাবেই উচিত হচ্ছে না। যারা মাস্ক ছাড়া ঘুরছে, তারা নিজেদের ও অন্যদের ক্ষতি করছে। এদের বিরুদ্ধে সরকারকে কঠোর পদক্ষেপ নেওয়া উচিত। মানুষকে ভালোভাবে বলেও যদি কাজ না হয়, প্রয়োজনে গণহারে জরিমানা শুরু করার কথা ভাবা যেতে পারে।’