বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার হত্যা

যে যুক্তিতে অব্যাহতি চেয়েছিলেন অমিত সাহা

Looks like you've blocked notifications!
বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী (২২) হত্যা মামলার আসামি বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহাকে গত ৯ সেপ্টেম্বর আদালতে হাজির করা হয়। ছবিটি সেদিন তোলা। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ রাব্বী (২২) হত্যা মামলার আসামিরা নিজেদের নির্দোষ দাবি করে মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়ে আবেদন করে। এর মধ্যে আলোচিত আসামি অমিত সাহা নয়টি যুক্তি দেখিয়ে নিজেকে নির্দোষ দাবি করে মামলা থেকে অব্যাহতি চান।

আজ মঙ্গলবার দুপুরে এ মামলায় ২৫ আসামির মধ্যে ২২ আসামি আদালতে আইনজীবীর মাধ্যমে মামলা থেকে অব্যাহতির আবেদন করে। কিন্তু আদালত অব্যাহতির আবেদন নাকচ করে আসামিদের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করে বিচার শুরুর নির্দেশ দিয়েছেন।

এ মামলায় বিভিন্ন আসামি বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে অব্যাহতির আবেদন করে। অব্যাহতির আবেদনে মামলার অন্যতম আসামি বহিষ্কৃত ছাত্রলীগ নেতা অমিত সাহার অব্যাহতির আবেদন থেকে জানা গেছে, নয়টি কারণ দেখিয়ে তিনি ফৌজদারি কার্যবিধির ২৬৫(গ) ধারা মোতাবেক মামলা থেকে অব্যাহতি চেয়েছেন।

অব্যাহতির প্রথম কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, মামলা দায়েরের সময় নিহত আবরারের বাবা তাঁর এজাহারে ১৯ জনের নাম উল্লেখ করলেও আসামি অমিত সাহার নাম তাতে ছিল না।

দ্বিতীয় : আসামি অমিত সাহা ঘটনার দিন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন না, তিনি পূজার ছুটিতে গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনায় অবস্থান করেছিলেন।

তৃতীয় : আসামি অমিত সাহাকে দুই দফায় রিমান্ডে নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী শারীরিক ও মানসিকভাবে নির্যাতন চালিয়েও হত্যার সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকাবিষয়ক কোনো স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি আদায় করতে পারেনি।

চতুর্থ : যেসব আসামি ম্যাজিস্ট্রেটের কাছে ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬৪ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি দিয়েছে তারাও আসামি অমিত সাহাকে জড়িয়ে কোনো বক্তব্য দেয়নি।

পঞ্চম : অমিত সাহা মামলার প্রকৃত ঘটনাস্থল বুয়েটের শেরে বাংলা হলের ২০‌১১ নম্বর রুমের আবাসিক ছাত্র; শুধু এ কারণেই ঘটনার সময় উপস্থিত না থাকা সত্ত্বেও তাকে আসামি করা হয়েছে।

ষষ্ঠ : অমিত সাহা বুয়েট ছাত্র আবরার হত্যার সঙ্গে জড়িত নয়। সে ঘটনা সংঘটিত করার জন্য কাউকে সহায়তা করেনি এবং সহআসামি কাউকে হত্যাকাণ্ড সংঘটনের জন্য প্ররোচনাও দেয়নি। তাই আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ১১৪/৩০২/১০৯/৩৪ ধারা বিধান মোতাবেক অভিযোগ গঠনের কোনো উপাদান বিদ্যমান নেই।

সপ্তম : যেসব সাক্ষী তদন্তকারী কর্মকর্তার নিকট ফৌজদারি কার্যবিধির ১৬১ ধারা মোতাবেক জবানবন্দি দিয়েছে তারাও হত্যার সঙ্গে অমিত সাহার জড়িত থাকার ব্যাপারে কোনো জবানবন্দি দেয়নি। এমনকি অমিত সাহার নামও বলেনি।

অষ্টম : এ মামলায় আলামত হিসেবে যে নয়টি বস্তু জব্দ করা হয়েছে সিসি ক্যামেরায়, ভিডিও ফুটেজে আসামির উপস্থিতির কোনো প্রমাণ নেই, যাহা সিআইডি (পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ) ফরেনসিক ল্যাব থেকে মতামত প্রদান করা হয়েছে। অমিত সাহার দৃশ্যমান কোনো ছবি ভিডিও ফুটেজে দেখা যায়নি। এ ছাড়া অমিত সাহা বুয়েটের ১৫ ও ১৬ ব্যাচের ম্যাসেঞ্জার গ্রুপে যে কথা বলার অভিযোগ করা হয়েছে তার সময়কাল ২০১৯ সালের ৬ অক্টোবর ৮টা ৫ মিনিট থেকে ৭ অক্টোবর ২টা ৩০ মিনিট পর্যন্ত দেখানো হয়েছে।

নবম : আসামি অমিত সাহা গ্রেপ্তার থাকার কারণে তার শিক্ষাজীবন ব্যাহত হচ্ছে, তাই এই মামলার এজাহার, অভিযোগপত্র, আলামত ও সাক্ষীদের জবানবন্দি পর্যালোচনা করে মামলার দায় থেকে অব্যাহতি চাওয়া হয়।

শুনানি শেষে বিচারক আসামি অমিত সাহার অব্যাহতির আবেদন নামঞ্জুর করে অভিযোগ গঠনের নির্দেশ দেন। আগামী ২০ সেপ্টেম্বর থেকে টানা ১ অক্টোবর পর্যন্ত এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত।

গত ১২ মার্চ আইন, বিচার ও সংসদবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আবরার হত্যা মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর ফাইল অনুমোদন করেন। গত ১৭ ফেব্রুয়ারি এ মামলার বিচারকাজ দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর জন্য ঢাকার মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটরের (পিপি) কার্যালয়ে আবেদন করেন নিহত আবরার ফাহাদের বাবা মো. বরকত উল্লাহ। এরপর মামলাটি দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে আদালতের কার্যক্রম বন্ধ থাকায় মামলার বিচারকাজ এত দিন বন্ধ ছিল।

এ মামলায় অন্য আসামিরা হলেন—বুয়েট ছাত্রলীগের বহিষ্কৃত সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান রাসেল, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মুহতামিম ফুয়াদ, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক মো. অনিক সরকার ওরফে অপু, সাংগঠনিক সম্পাদক মেহেদী হাসান রবিন ওরফে শান্ত, আইনবিষয়ক উপসম্পাদক অমিত সাহা, উপসমাজসেবাবিষয়ক সম্পাদক ইফতি মোশাররফ সকাল, ক্রীড়া সম্পাদক মো. মেফতাহুল ইসলাম জিয়ন, গ্রন্থ ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক ইশতিয়াক আহম্মেদ মুন্না, কর্মী মুনতাসির আল জেমি, খন্দকার তাবাখখারুল ইসলাম তানভীর, মো. মুজাহিদুর রহমান, মো. মনিরুজ্জামান মনির, আকাশ হোসেন, হোসেন মোহাম্মদ তোহা, মো. মাজেদুর রহমান মাজেদ, শামীম বিল্লাহ, মুয়াজ ওরফে আবু হুরায়রা, এ এস এম নাজমুস সাদাত, আবরারের রুমমেট মিজানুর রহমান, শামসুল আরেফিন রাফাত, মোর্শেদ অমত্য ইসলাম, এস এম মাহমুদ সেতু, মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ।

আসামিদের মধ্যে মুহাম্মদ মোর্শেদ-উজ-জামান মণ্ডল ওরফে জিসান, এহতেশামুল রাব্বি ওরফে তানিম ও মুজতবা রাফিদ পলাতক। বাকি ২২ জন গ্রেপ্তার আছেন। এ মামলায় আটজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।

গত বছরের ১৩ নভেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ডিবি পুলিশের পরিদর্শক (নিরস্ত্র) মো. ওয়াহিদুজ্জামান ২৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

এর আগে ৬ অক্টোবর রাতে বুয়েটের শেরেবাংলা হলের একটি কক্ষে বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা আবরারকে পিটিয়ে হত্যা করেন। এ ঘটনায় ১৯ জনকে আসামি করে পরের দিন ৭ অক্টোবর চকবাজার থানায় একটি হত্যা মামলা করেন আবরারের বাবা।