যৌন উত্তেজক সিরাপ বানানোই তাদের কাজ, জরিমানা

পাবনায় যৌন উত্তেজক সিরাপ তৈরির কারখানায় অভিযান চালিয়ে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা এবং কারখানাটি সিলগালা করে দিয়েছে গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ ও জেলা প্রশাসন। আজ বৃহস্পতিবার সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত এই অভিযান পরিচালিত হয়। এ সময় আফুরিয়া ফাস্ট ফুড কারখানায় বিপুল অবৈধ এসএস পাউডার, তাদের উৎপাদিত সিরাপসহ বিভিন্ন কেমিকেল পাওয়া যায়।
সূত্র জানায়, এক যুগ ধরে পাবনার আফুরিয়ায় ফাস্ট ফুড (এইচবিডি) ইন্ডাস্ট্রিজ প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানির মালিক আব্দুর রাজ্জাক ও তাঁর শ্যালক আরিফ ফ্রুট সিরাপ তৈরির অনুমোদন নিয়ে যৌন উত্তেজক সিরাপ তৈরি করে বাজারজাত করে আসছে। তাদের উৎপাদিত এসব যৌন উত্তেজক সিরাপ পান করে এরই মধ্যে অনেকেই সর্বস্বান্ত হয়েছে।
২০১৯ সালের জুন মাসে নওগাঁ শহরে এই কোম্পানির কিংস আপ ফ্রুট সিরাপ পান করার পর এক ব্যক্তি একটি বাড়িতে প্রবেশ করে মাকে হত্যার পর মেয়েকে ধর্ষণ করে। বিষয়টি নিয়ে সারা দেশে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে। এই ফ্যাক্টরির উৎপাদিত হট ফিলিং সেক্সুয়াল ড্রিংকস পান করে নওগাঁয় এ পর্যন্ত তিনজনের মৃত্যু হয়েছে এবং অনেকে অসুস্থ অবস্থায় নওগাঁ হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এ ব্যাপারে নঁওগা থানায় একটি মামলাও হয়েছে।
২০১৯ সালের ২৫ জুন রাতে নওগাঁর অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) লিমন রায়ের নেতৃত্বে নওগাঁ জেলা গোয়েন্দা পুলিশ রাজ্জাক হাজির আফুরিয়া ফাস্ট ফিলিংস নামের এই ফ্যাক্টরিতে অভিযান চালিয়ে রাজা, নজরুলসহ তিনজনকে গ্রেপ্তার করে। সেই সঙ্গে ফ্যাক্টরি সিলগালা করে দেন। একই সঙ্গে নওগাঁ জেলার বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়ে এই কোম্পানির বিপুল মালামাল জব্দ করা হয়। পরে অদৃশ্য ক্ষমতা বলে সেই সিলগালা খুলে পুনরায় ব্যবসা শুরু করা হয়।

অভিযানে নেতৃত্বদানকারী পাবনার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাসুদ আলম জানান, আফুরিয়ার ফাস্ট ফিলিংস ফ্যাক্টরিতে দীর্ঘদিন ধরে হট ফিলিংসসহ কয়েকটি সেক্সুয়াল সিরাপ তৈরি করা হচ্ছে, যা দেশের বিভিন্ন জেলা ও উপজেলার মুদির দোকানে বিক্রি হয়। ফ্যাক্টরির স্বত্বাধিকারী আরিফুল ইসলাম আরিফ ও আব্দুর রাজ্জাক বিভিন্ন সংস্থাকে ম্যানেজ করে মানুষের জন্য ক্ষতিকারক ড্রাগ তৈরি করছে বলে অভিযোগ রয়েছে। ফ্যাক্টরির মালিক পাবনার প্রভাবশালী ব্যক্তিদের ছত্রছায়ায় থাকায় এ বিষয়ে কেউ মুখ খুলতে সাহস পায় না। বিষয়টি আমাদের নজরে এলে ঔষধ প্রশাসন ও জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মাহমুদ হাসানের সমন্বয়ে একটি দল অভিযান চালায়। অভিযানে বিপুল নিষিদ্ধ এসএস পাউডারসহ বিভিন্ন উৎপাদিত পণ্য পাওয়া যায়। তবে কারখানার মালিক রাজ্জাক হাজি ও আরিফ অভিযানের আগেই পালিয়ে যান। অভিযান শেষে তাদের পাঁচ লাখ টাকা জরিমানা এবং কারখানাটি সিলগালা করে দেওয়ায় হয়।
একই সঙ্গে তাদের উৎপাদিত পণ্য ঢাকার একটি রাষ্ট্রীয় ল্যাবে পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। টেস্টে বিএসটিআইয়ের অনুমোদিত পণ্যের সঙ্গে মিল পাওয়া না গেলে পুনরায় মামলা করা হবে বলেও জানান অতিরিক্ত পুলিশ সুপার।
অভিযানের সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট কে এম মাহমুদুল হাসান, ঔষধ প্রশাসন অধিদপ্তর পাবনা জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক সুকর্ণ আহমেদ প্রমুখ।
এ বিষয়ে পাবনার বিশিষ্ট চিকিৎসক ডা. রাম দুলাল ভৌমিক বলেন, এ ধরনের মান নিয়ন্ত্রণহীন যৌন উত্তেজক সিরাপ সেবনে তাৎক্ষণিক উত্তেজনা দেখা দিলেও দীর্ঘমেয়াদি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে লিভার, কিডনি ড্যামেজের পাশাপাশি হৃদযন্ত্র বন্ধ হয়ে মারা যেতে পারেন সেবনকারীরা। ড্রাগের চেয়েও ক্ষতিকর এই সিরাপ। এই পণ্যটির ভোক্তা হলো ট্রাকচালক, রিকশাচালক থেকে শুরু করে বেকার যুবক ও শিক্ষার্থীরা। এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর নজরদারির দাবিও জানান তিনি।