রমজানজুড়ে অভুক্তদের জন্য ষোলোআনা ফাউন্ডেশনের সেহরি ও ইফতার
নভেল করোনাভাইরাসের কারণে চলমান অচলাবস্থায় গোটা রমজানে রাজধানী ঢাকায় এবং কিশোরগঞ্জে কর্মহীন ও অসহায় মানুষজনের মাঝে ইফতার ও সেহরি বিতরণ করেছে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ষোলোআনা ফাউন্ডেশন। এর পাশাপাশি সংগঠনটির চাল, ডাল, তেলসহ খাদ্যসামগ্রী বন্টনের কাজও চালু রয়েছে। এ ছাড়া ন্যায্যমূল্যবঞ্চিত কৃষকদের কাছ থেকে সবজি ও ফসল কিনে ঢাকায় খাদ্য বিতরণে কাজে লাগাচ্ছে তারা।
শুধু খাবার বিতরণই নয় চিকিৎসক ও স্বাস্থ্যকর্মীদের সুরক্ষা সামগ্রী বিতরণ, হাসপাতালসহ বিভিন্ন স্থানে জীবাণুনাশক ছিটানোর কাজ করছেন ষোলোআনা ফাউন্ডেশনের কর্মীরা। এ ছাড়া সংস্থাটির পক্ষ থেকে ঢাকা ও কিশোরগঞ্জে রাস্তার ধারে হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে।
ষোলোআনা ফাউন্ডেশনের সহ-সভাপতি নুরুজ্জামান সরদার বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে নিরাপত্তার কথা ভেবে যদিও আমাদের বাইরে যাওয়া উচিত নয়, তবুও মানবিক বিবেচনায় আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা বের হচ্ছেন। অনেকটা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করতে হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে যে পরিমাণ খাবারের যোগান প্রয়োজন আমরা তা করে উঠতে পারছি না। তহবিল সংকটের কারণে হিমশিম খাচ্ছি আমরা। সামর্থ্যবানদেরকে কাছে এগিয়ে আসার অনুরোধ করছি।’
সংগঠনের অন্যতম সমন্বয়ক ডা. মাকিন উল্লাহ বলেন, ‘আমাদের বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্বই করোনাভাইরাসের আঘাতে পর্যুদস্ত। তবে আমাদের দেশের মহামারির বাস্তবতাটা একেবারেই আলাদা। করোনা সংক্রমণ রোধে ঘরে থাকা যেমন জরুরি। তেমনি আমাদের বিপুল সংখ্যক কর্মহীন মানুষের নিত্যপ্রয়োজন মেটানোটাও গুরুত্বপূর্ণ এক্ষেত্রে সরকারের পাশাপাশি সামর্থ্যবানদের এগিয়ে আসার বিকল্প নেই।’
সংগঠনটির সহযোগী প্রতিষ্ঠাতা মো. আরিফুল ইসলাম প্রিন্স বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করছি রাতের বেলা এবং ভোর বেলা কাজ করতে যখন জনসমাগম কিছুটা কম থাকে। তাছাড়া রাতে রাস্তায় অভুক্ত মানুষগুলো শুয়ে থাকে। সে সত্যিকারের ক্ষুধার্ত মানুষের কাছে খাবার পৌঁছে দিতে পারলে যথার্থ কাজটা হয়।’
করোনার মতো এমন দুর্যোগে মানুষ যে কতটা অসহায় হয়ে পড়েছে তা উপলব্ধি করা যায় মধ্যবিত্ত পরিবারের আহাজারি শুনলে, এমনটিই জানালেন সংগঠনটির প্রতিষ্ঠাতা মুর্শিদা এনাম মীম। তিনি বলেন, ‘কারো বাচ্চার খাওয়ার দুধ নেই, কারো অসুস্থ বাবা মায়ের জন্য ওষুধ কেনার টাকা নেই, ঘরে তো খাবার নেই-ই। মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো সবথেকে বেশি বিপাকে পড়েছে কারণ তারা কারো কাছে বলতেও পারছেন না লজ্জায়, আবার ক্ষুধাও তো সহ্য করা যায় না। তাই মধ্যবিত্ত পরিবারের জন্য আমরা অনলাইন আবেদনের মাধ্যমে পরিচয় গোপন রেখে ৭ থেকে ১৫ দিনের শুকনো খাবার পৌছে দিচ্ছি ঘরে ঘরে। এ করোনা সংকট থেকে যতদিন না আমরা রেহাই পাচ্ছি আমাদের এই কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে ইনশাআল্লাহ।’
মুর্শিদা এনাম মীম আরো বলেন, ব্যক্তি, পরিবার, সমাজ, রাষ্ট্র সবাই কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে কাজ করলে যেকোনো দূর্যোগ মোকাবেলা অনেকটা করা সহজ হয়। এমন চিন্তা মাথায় রেখেই কাজ করছেন ষোলোআনা ফাউন্ডেশনের সম্মানিত স্বেচ্ছাসেবীরা।