রমজানের শুরুতেই নিত্যপণ্যের দামে খুলনায় ক্রেতাদের নাভিশ্বাস

Looks like you've blocked notifications!
খুলনার বাজারের ছবি ইউএনবির

রমজান এলেই যেন হালচাল পাল্টাতে থাকে নিত্যপণ্যের। বিশেষ করে রোজার নৈমিত্তিক কিছু সামগ্রীর। এবার খুলনার নিত্যপণ্যের বাজারে কিছু পরিবর্তন আসতে দেখা গেছে। যার তালিকায় রয়েছে ছোলা, চিড়া, মুড়ি, বেসন, ভোজ্য তেল, চিনি, পেঁয়াজ, রসুন, আলু, খেজুর, কলা, রুহ আফজাসহ ফল।

বাজারে আসা ক্রেতারা বলছেন, রোজা আসলেই যেন ডাকাতের মতো হয়ে ওঠে ব্যবসায়ীরা। এ ছাড়া রোজার কয়েক সপ্তাহ আগে বাজারে তেল, পেঁয়াজ, রসুন, ছোলাসহ অন্যান্য রমজানের প্রয়োজনীয় সামগ্রীগুলোর দাম হু হু করে বাড়তে থাকে। 

অপরদিকে, ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, বাজার অন্যান্য বছরের তুলনায় এবার স্বাভাবিক আছে। পেঁয়াজের আমদানি বন্ধ, এখন কাটিকাটা পেঁয়াজ নেই, বীজের পেঁয়াজও। তাই দাম বেশি মনে হচ্ছে। রোজার নিত্যপণ্যের বাজার দাম বাড়তির কারণে দুশ্চিন্তায় পড়েছেন সাধারণ আয়ের মানুষ। এ ছাড়া ইফতারের একটি গুরুত্বপূর্ণ অনুষঙ্গ হচ্ছে খেজুর। সারা বছর তুলনায় যে পরিমাণ খেজুর বিক্রি হয়, তার বহুগুণে বিক্রি হয়ে থাকে রমজান মাসে। সাধারণ ক্রেতাদের দাবি–এবারও ব্যতিক্রম ঘটেনি এই পণ্যে, দাম বেড়েছে কয়েকগুণ।

খুলনার মহানগরীর ময়লাপোতা, ডাকবাংলো, নিউমার্কেট, চিত্রালী ও দৌলতপুর খুচরা ফলের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খেজুর আম্বার ১৫০০টাকা, আজোয়া ১০০০টাকা, মরিয়ম ৯০০টাকা, শুকারী ৭৫০, মিফজল (বড়) ১৩০০টাকা, মাঝারি ১২০০টাকা এবং ছোট ১০০টাকা, কাচা খেজুর ৫০০টাকা, দাওয়াজ ৪০০টাকা, দালাদা ৫৫০টাকা, ফিড খেজুর ৫০০টাকা, ইরানি মরিয়ম ১০০টাকা, বরই খেজুর ৪০০টাকা, বস্তা খেজুর ১৪০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

অন্যদিকে, আপেল (সবুজ) ৩২০-৩৫০টাকা, ফুজি আপেল ২৬০-৩০০টাকা, বেদানা ৩৫০-৪০০টাকা, কমলা ২২০টাকা, মালটা ২২০টাকা দরে প্রতিকেজি বিক্রি হচ্ছে।

এ ছাড়া ইফতারের নিত্যপণ্যের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, খুলনা ময়লাপোতা সন্ধ্যা বাজারে রমজানের নিত্যপণ্যের মধ্যে সয়াবিন তেল পাঁচ লিটার ৬৯০টাকা, দুই লিটার ৩৭০টাকা, এক লিটার ১৮৫টাকা, মুশরি ডাল দেশি ১৪০টাকা, মোটা ১০০টাকা, ছোলা ৮৫টাকা, চিনি ১১৫টাকা, আলু ২৫ টাকা, ছোলার ডালের বেসন ১১০টাকা, বুট ডালের বেসন ৮৫টাকা, মুড়ি প্যাকেট এক থেকে দুই কেজি ৭০টাকা, চিড়া প্রতিকেজি ৬০ থেকে ৬৫ কেজি, পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, রসুন দেশি (বাছাইকৃত) ১০০টাকা, চায়না ১৫০টাকা, রুহ আফজা বড় ৩৫০টাকা, ছোট ২১০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

নিউ মার্কেট বাজারে রমজানের নিত্যপণ্যের মধ্যে সয়াবিন তেল পাঁচ লিটার ৬৯০টাকা, দুই লিটার ৩৭০টাকা, এক লিটার ১৮৫টাকা, মসুর ডাল দেশি ১৪০টাকা, মোটা ১০০টাকা, ছোলা ৮৫টাকা, চিনি ১১৫টাকা, আলু ২০ টাকা, ছোলার ডালের বেসন ১০০টাকা, বুট ডালের বেসন ৮০টাকা, মুড়ি প্যাকেট এক থেকে দুই কেজি ৭০টাকা, চিড়া প্রতিকেজি ৬০ কেজি, পেঁয়াজ ৩৫ টাকা, রসুন দেশি ৮০টাকা, রুহ আফজা বড় ৩৫০টাকা, ছোট ২১০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে।

প্রাইভেট কোম্পানির চাকুরিজীবী মঈনুল ইসলাম জানান, রমজান আসার আগেই প্রতিটি রোজার জন্য প্রয়োজনীয় জিনিসগুলোর দাম বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে পেঁয়াজ, তেল, চিনি, বেসন, খেজুরের দাম অনেকটাই বৃদ্ধি পেয়েছে। তিনি আরও জানান, সামনে আরও কতো বাড়বে। এছাড়া ফার্মের মুরগি বর্তমানে ২৫০ টাকা, গরুর মাংস ৭০০টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সবজির বাজারে ঢুকতে তো ভয় লাগে, কারণ ৫০-৬০ টাকা নিচে কোনো সবজিই নেই বলে জানান তিনি।

ফুটপাথ ব্যবসায়ী মামুন জানান, প্রতি বছরই গোটা রমজান মাসে পরিবারের ছেলে-মেয়ে সকলে মিলে রোজা রাখি। গরিবের মাংসের চাহিদা পূরণের শেষ সম্বল ব্রয়লার মুরগি, যার বিকল্প নেই।

বর্তমানে ২৫০টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। হঠাৎ এমন দাম বেড়েছে, কারও কোনো মাথা ব্যথা নেই। ব্যবসায়ীরা একটা অজুহাত দেখিয়ে দিলেই হয়। মুরগির খাবারের দাম বাড়তি। সোজা কথা শীতকালে মুরগি মরে যাওয়ার ভয়ে ব্যবসায়ীরা সস্তায় মুরগি বিক্রি করছে। এখন রমজানকে সামনে রেখে সেই ক্ষতি পুষিয়ে নিতে ইচ্ছা মতো দাম হাঁকাচ্ছে।

এ ছাড়া রমজানকে সামনে রেখে রোজার প্রয়োজনীয় সামগ্রীসহ মাছ, মাংস, সবজিসহ অন্যান্য নিত্যপণ্যের দাম অসহনীয় হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছে একাধিক সাধারণ ক্রেতারা।

এদিকে রমজান মাসে রোজাদার মুসল্লিদের একটি প্রধান খাবারের চাহিদা হলো কলা। কলা না হলে যেন রোজাদারদের খাদ্যের তালিকার ঘাটতি থেকে যায়। তবে এবার খুলনায় কলার বাজারগুলো বা রেলস্টেশন থেকে পর্যাপ্ত কলার আমদানি হচ্ছে এমনটি দেখা গেলেও কলার দাম আগের তুলনায় দ্বিগুণ।

বর্তমান এক ডজন মাঝারি আকারের কলার দাম আট থেকে ১০ টাকা। আর বড় সাইজের কলা ডজন ১৪০ থেকে ১৫০ টাকা পর্যন্ত। মোট কথা এখন ছোট কলার দাম ছয় টাকার নিচে নেই। কলার দাম এত বৃদ্ধি পাওয়া অসন্তোষ প্রকাশ করছেন ক্রেতারা। আর বিশেষ করে বেশ বেকায়দায় পড়েছে নিম্ন আয়ের মানুষেরা।

দেখা গেছে, প্রতিদিন শ’ শ’ কলা কাইন নামছে খুলনা রেলস্টেশনে। তারপর ও ব্যবসায়ীদের দাবি কলার সরবরাহ কম। কলার ব্যাপারী মুহসিন আলী বলেন, ‘আমি সৈয়দপুর ও মেহেরপুরের চুয়াডাঙ্গা থেকে কলা আনি। আমার কাছ থেকে পাইকারি ব্যাবসায়ীরা কলা নিয়ে যায়। এ বছর রমজানে আগে কলা চাষিরা আগের তুলনায় একটু বেশি দাম দাবি করছে।’ এ ছাড়া জ্বালানি তেলের দামের কারণে ভাড়া বৃদ্ধি পেয়েছে এরও একটি প্রভাব আছে বলে জানান তিনি।ক্রেতা মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘রোজায় যেন ইফতারি বা সেহরিতে কলা ছাড়া খেতে ভালো লাগে না। বিশেষ করে সেহরির সময়ে কলা খেলে সারাদিন পেটে ঠান্ডা অনুভব হয়। যে কারণে রোজায় কলার চাহিদা ব্যাপক। তবে এ বছর যেন আগের তুলনায় কলার দাম রেকর্ড ছাড়িয়েছে। বাজারে এসছিলাম একটু কাচা দেখে কলা ক্রয় করতে। এসে দেখি মাঝারি আকৃতির কলার দাম ১২০ টাকা ডজন বলছে দোকানি, মানে একটি কলার দাম ১০ টাকা।’