রাঙামাটিতে নির্মাণাধীন সেতুর গার্ডার ধসে নিহত ১, আহত ১৫
রাঙামাটি সদর উপজেলায় একটি নির্মাণাধীন সেতুর গার্ডার ধসে পড়ে এক শ্রমিক নিহত হয়েছেন। এ সময় আহত হয়েছেন আরও ১৫ জন। আহত ব্যক্তিদের মধ্যে অন্তত পাঁচ জনের অবস্থা গুরুতর বলে জানিয়েছেন রাঙামাটি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ত্রিতন চাকমা।
উপজেলার মগবান ইউনিয়নের বরাদম এলাকার দেপ্যছড়িতে রাঙামাটি-কাপ্তাই সড়কে নির্মাণাধীন সেতুতে আজ বৃহস্পতিবার সকালে এ দুর্ঘটনা ঘটে।
নিহত শ্রমিকের নাম মো. রফিক (৪৫)। তাঁর গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের ধর্মপাশা উপজেলায়।
জানা গেছে, রাঙামাটি শহর থেকে আসামবস্তি হয়ে কাপ্তাই পর্যন্ত ১৯ কিলোমিটার সড়কের একাধিক স্থানে ঝুঁকিপূর্ণ বিবেচনায় সেতু নির্মাণ করছিল স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। বিভাগটির হয়ে এ কাজগুলো করছিলেন জসিমউদ্দিন নামের এক ঠিকাদার। তিনি জেলা যুবলীগের একজন নেতাও। এ সড়কের মগবান ইউনিয়নের বরাদম এলাকার দেপ্যছড়িতে নির্মাণাধীন সেতুটি এ দুর্ঘটনায় পড়ল। ১২০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির ৩৬ মিটার ধসে পড়েছে বলে নিশ্চিত করেছেন নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান স্থানীয় সরকার প্রকৌশল বিভাগ। এটি এ সড়কের সবচেয়ে বড় সেতু, যার নির্মাণ-ব্যয় প্রায় চার কোটি ৭৫ লাখ টাকা।
মগবান ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান পুষ্প রঞ্জন চাকমা জানিয়েছেন, সকালে আমার ইউনিয়নের ৫ নম্বর ওয়ার্ডের দেপ্যছড়ি এলাকায় সড়কের সবচেয়ে বড় সেতুটির ঢালাই কাজ ছিল। এর বড় অংশটির কাজ আগেই শেষ হয়েছে। এখন শেষ অংশের কাজ চলছিল। সেখানেই গার্ডার ধসে পড়ে এবং বেশ কয়েকজন শ্রমিক আহত হন। তাঁদের মধ্যে কেউ মারা গেছেন বলেও শুনেছি।’
রাঙামাটি এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী আহমেদ শফি বলেছেন, ‘আমি রাঙামাটির বাইরে সাজেকে আছি। বিষয়টি আমি শুনেছি। যতটুকু জেনেছি, ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এ সেতুটির ৭৫ শতাংশ কাজ শেষ করে শেষাংশের কাজ করছিল। আজ বৃহস্পতিবার গার্ডারের স্ল্যাবের ঢালাই ছিল। কিন্তু, ঠিকাদারের লোকজন যেখানে ঢালাই করবেন, সেটার ওপরই মিকশ্চার মেশিন রেখে কাজ করছিলেন। ফলে, এ দুর্ঘটনা ঘটেছে। এটা ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের দায়িত্বহীনতার কারণেই হয়েছে। আমি ফিরে এসে বিষয়টি দেখব।’
রাঙামাটি সদর উপজেলা এলজিইডি’র নির্বাহী প্রকৌশলী প্রণব রায় চৌধুরী বলেন, ‘যে স্থানে ঢালাই চলছিল, সেটার ওপরই মিকশ্চার মেশিন রেখে কাজ করা হচ্ছিল। ফলে, অতিরিক্ত ভাইব্রেশনে স্প্যানের জয়েন্টে হয়ত সমস্যা হয়েছে। এ জন্য কাজ শুরু করার ১৫ থেকে ২০ মিনিটের মধ্যেই মিকশ্চার মেশিনসহ গার্ডারের মধ্যবর্তী ঢালাইয়ের জন্য প্রস্তুত করা ৩৬ মিটার অংশ ধসে পড়েছে। এতে বেশ কয়েকজন হতাহত হয়েছেন। আমাদের তদারকির কাজে নিয়োজিত লোকজন সেখানে ছিলেন। তবে, তাঁরা কেউ আহত হননি। এ আকস্মিক ঘটনায় আমরাও হতবিহ্বল। আমরা দ্রুত এ কাজ শেষ করব।’
রাঙামাটি সদর হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ত্রিতন চাকমা জানিয়েছেন, সেতু ধসে পড়ে আহত বেশ কয়েকজনকে হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। তাঁদের মধ্যে একজন মারা গেছেন এবং ১৫ জনের মতো আহত ব্যক্তি রয়েছেন। তাঁদের মধ্যে কয়েকজনের অবস্থা বেশ নাজুক।
এ বিষয়ে কথা বলার জন্য ঠিকাদার জসিমউদ্দিনের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁর মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। নানাভাবে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও সম্ভব হয়নি। জানা গেছে, জেলা যুবলীগের এ নেতা এসএস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী হলেও সেতু নির্মাণের এ কাজটি তিনি করছিলেন মেসার্স সেলিম অ্যান্ড ব্রাদার্সের নামে।