রাজধানীর মলমূত্রের ৯৯ শতাংশই চার নদীতে যায়
রাজধানী ঢাকার আশপাশের চারটি নদী দূষণের জন্য ঢাকা ওয়াসাকে দায়ী করেছেন জাতীয় নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী। তিনি বলেছেন, ঢাকার আশপাশের চারটি নদীর দূষণে যদি কোনো একক প্রতিষ্ঠানকে দায়ী করা হয়, তাহলে সেটি হবে ঢাকা ওয়াসা। ঢাকার যত মলমূত্র আছে, তার ৯৯ দশমিক ৯ শতাংশই এ চার নদীতে যায়। এটা কীভাবে যায়। ওয়াসার দায়িত্ব ছিল এসবের সমাধান করা।
আজ শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে বিশ্ব পরিবেশ দিবস উপলক্ষে হিউম্যান রাইটস অ্যান্ড পিস ফর বাংলাদেশের এক আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। আগামীকাল ৫ জুন বিশ্ব পরিবেশ দিবস।
নদী রক্ষা কমিশনের চেয়ারম্যান বলেন, রাজধানী থেকে একই পাইপ দিয়ে মলমূত্র ও বৃষ্টির পানি নদীতে গিয়ে পড়ে। অথচ ওয়াসার দায়িত্ব ছিল টয়লেটের ময়লাসহ পানি এবং গোসলখানাসহ অন্যান্য লাইনের পানি পৃথকভাবে যাওয়ার ব্যবস্থা করা। সেটা তারা করেনি। ফলে দ্রুত নদী দূষণ হচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। পানির অপর নাম জীবন। অথচ এখন এ পানিই আমাদের জন্য মরণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত মার্চ মাসে আমি ঢাকার উত্তরে নদী সফর করেছি, আমি খুঁজেছি কোথায় গেলে আমি এমন একটা নদী পাব, যেখানে মানুষ গোসল করছে। রাজধানী থেকে ৯৫ কিলোমিটার দূরে গিয়ে ‘সুতিয়া’ নামে গোসল করার মতো একটা নদী পাওয়া গেল। সেখানে গিয়ে দেখতে পেলাম, কিছু মানুষ তাতে গোসল করছে, কেউ কেউ মাছ ধরছে। কিন্তু সেখানে গিয়েও জানা গেল সেই নদীতে আকিজ ফ্যাক্টরি তাদের বর্জ্য ফেলছে, এখন সেটিও দূষিত হয়ে পড়ছে।
তিনি আরও বলেন, ঢাকাসহ চারপাশে প্রায় চার কোটি মানুষের বসবাস। তাদের জন্য কোনো একটা নদী বা জলাশয় নেই যেখানে কেউ গোসল করতে পারে। এটাও এক ধরনের মানবাধিকার লঙ্ঘন। ঢাকার চারপাশে এসব নদীতে কোনো ঝিনুক নেই, মাছ নেই, নেই কোনো মাছরাঙা পাখি বা চিল। এখন নদীতে পাওয়া যাচ্ছে সাকার ফিশ। এসব নদীতে সাকার ফিশ বাঁচতে পারে তার কারণ তারা পানি থেকে অক্সিজেন নেয় না। জলের উপরে সাকার ফিশ ৩০ ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে বাঁচতে পারে। এ থেকে নদীগুলোর অবস্থা কী দাঁড়িয়েছে, তা সহজেই বোঝা যায়।
ড. মনজুর আহমেদ চৌধুরী বলেন, পরিবেশ দূষণের কারণেই এখন ডায়রিয়া বা কলেরায় আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। এসব পানি এখন কলেরার উৎস।
২০২৩ সালের ১৭ মার্চ বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকীর আগেই বুড়িগঙ্গা, তুরাগ, টঙ্গীখাল, বালু ও শীতলক্ষ্যা নদী দূষণমুক্ত করার চ্যালেঞ্জ নিয়ে নদী রক্ষা কমিশন কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, বঙ্গবন্ধুর জন্মবার্ষিকী উদযাপনের আগেই আমরা নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করব। এটা আমাদের জন্য চ্যালেঞ্জ। অনেকে এটাকে অসম্ভব বলে উল্লেখ করেছেন। তবে আমি বলব ৯ মাসে যদি যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করা যায়, তাহলে এ ৯ মাসে আমরা কেন নদীগুলোকে দূষণমুক্ত করতে পারব না? আয়োজক সংগঠনের প্রেসিডেন্ট সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন পরিবেশ অধিদপ্তরের সাবেক ডিজি ড. সুলতান আহমেদ, প্রথম আলোর যুগ্ম সম্পাদক সোহরাব হাসান, ডিবিসি নিউজের সম্পাদক প্রণব সাহা, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী এখলাছ উদ্দিন ভূঁইয়া প্রমুখ।