রাজনৈতিক অনেক বাঁক পরিবর্তনের সাক্ষী মওদুদ আহমদ

Looks like you've blocked notifications!
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদ। ফাইল ছবি

রাজনীতিতে অন্যতম একটি নাম ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। দেশের অনেক রাজনৈতিক বাঁক পরিবর্তনের সাক্ষী ছিলেন যিনি। আইনজীবী হিসেবেও ছিলেন বিখ্যাত, দেশ-বিদেশে দ্যুতি ছড়িয়েছেন তিনি। তবে রাজনীতিতে এক কৌতূহলী চরিত্র ছিলেন মওদুদ আহমদ। ৪৩ বছরের রাজনৈতিক জীবনের প্রায় সব সময়ই যিনি ছিলেন আলোচনার কেন্দ্রে। শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান, হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ ও বেগম খালেদা জিয়া তিন সরকারের আমলে তিনি ছিলেন ক্ষমতার বলয়ে।

বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মওদুদ আহমদের জন্ম ১৯৪০ সালের ২৪ মে নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায়। তাঁর বাবা মমতাজ উদ্দিন আহমদ ও মা বেগম আম্বিয়া খাতুন। ছয় ভাইবোনের মধ্যে মওদুদ আহমদ চতুর্থ।

১৯৭৭ আনুষ্ঠানিকভাবে রাজনীতিতে নাম লেখান ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ। তবে তারও আগে পেশাজীবী হিসেবে আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় বঙ্গবন্ধুর আইনজীবী, মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক ও মানবাধিকার আইনজীবী হিসেবে নানা ভূমিকায় নিজেকে রেখেছিলেন রাজনীতির কক্ষপথেই।

মওদুদ আহমদ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স শেষ করে উচ্চ শিক্ষার জন্য পাড়ি জমান লন্ডনে। বার অ্যাট ল ডিগ্রি নিয়ে দেশে ফিরে নামেন আইন পেশায়। আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর বিরুদ্ধে শামিল হন আইনি লড়াইয়ে। সে সময় বঙ্গবন্ধুর পক্ষে আইনি লড়াই করতে খ্যাতিমান ব্রিটিশ আইনজীবী টমাস উইলিয়াম কিউসিকে আনতে বিশেষ ভূমিকা রেখেছিলেন মওদুদ। দেশের প্রথম পোস্ট মাস্টার জেনারেল ছিলেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।

বিএনপির প্রতিষ্ঠাকালীন সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ জিয়াউর রহমান সরকারের উপদেষ্টার দায়িত্ব পান ১৯৭৭ সালে, ১৯৭৯ সালে প্রথমবারের মতো সংসদ সদস্য নির্বাচিত হলে তাঁকে উপপ্রধানমন্ত্রী করা হয়। পরে কর্মসূচির বিরোধীতাসহ নানা কারণে মন্ত্রিসভা থেকে তাঁকে অব্যাহতি দেন জিয়াউর রহমান।

১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমান শহীদ হন এবং এক বছরের ভেতর হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদ রাষ্ট্রক্ষমতা গ্রহণ করেন। ১৯৮৫ সালের নির্বাচনে মওদুদ আহমদ আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন এবং জাতীয় পার্টির সরকারের তথ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পান।

এর এক বছর পর ১৯৮৬ সালে মওদুদ আহমদকে আবারও উপ-প্রধানমন্ত্রী করা হয়। ১৯৮৮ সালে তিনি প্রধানমন্ত্রী হন। ১৯৮৯ সালে তাঁকে শিল্প মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব দেওয়া হয় এবং এরশাদ তাঁকে উপ-রাষ্ট্রপতি করেন। ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে জনরোষের মুখে ক্ষমতা ছেড়ে দেয় এরশাদ সরকার। এরপর জাতীয় পার্টি থেকে মনোনয়ন নিয়ে ১৯৯১ সালের আবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন মওদুদ আহমদ।

১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে মওদুদ আহমদ বিএনপিতে ফিরে আসেন। ২০০১ সালে নির্বাচনে তিনি বিএনপি থেকে মনোনয়ন নিয়ে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। পাঁচবারই মওদুদ আহমেদ নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা থেকে নির্বাচিত হন।

রাজনৈতিক আদর্শ যাই থাকুক মওদুদ আহমদ লেখালেখিতে নির্মোহভাবে তুলে ধরেছেন দেশের রাজনীতি ও নেপথ্যের ঘটনা। লিখেছেন অন্তত এক ডজন বই। যা নিয়ে অনেক সময় দলের বিরাগভাজনও হয়েছেন।

রাজনীতিবিদ ও লেখক সত্ত্বার বাইরে খ্যাতিমান এই আইনজীবী ও সংবিধান বিশেষজ্ঞ ছিলেন দেশের বাইরে বেশ কিছু নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক।

ব্যক্তিগত জীবনে ছিলেন মওদুদ আহমদ ছিলেন পল্লীকবি জসীম উদদীনের জামাতা। অনিবার্য নিয়তি মৃত্যু তাঁকে আড়াল করলেও দেশের রাজনীতির ইতিহাসে আলোচিত নাম হিসেবেই থাকবেন ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ।