রাজনৈতিক মতপার্থক্য থাকায় নির্বাচনি পরিবেশ অনুকূলে নয় : সিইসি
প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেছেন, ‘কিছু বিষয়ে এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপাথর্ক্য রয়েছে। এই মতপার্থক্য থাকার কারণে নির্বাচনি পরিবেশটা এখনও অনুকূলে (কনজেনিয়াল) নয়। তবে অচিরেই এই মতপার্থক্যটা দূর হয়ে যাবে বলে আমার প্রত্যাশা।’
আজ বুধবার (১৮ জানুয়ারি) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে ইউরোপিয় ইউনিয়নের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে তিনি সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান।
বুধবার দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে শুরু হওয়া বৈঠকটি চলে দেড়ঘণ্টাব্যাপী। এতে সিইসি কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর ও নির্বাচন কমিশনার আনিছুর রহমান উপস্থিত ছিলেন। তবে নির্বাচন কমিশনার আহসান হাবিব ও রাশেদা সুলতানা এ বৈঠকে অংশ নেননি৷ এ ছাড়া ইসি সচিবসহ উর্ধ্বতন কর্মকর্তারা এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
অন্যদিকে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অ্যাম্বাসেডর চার্লস হোয়াইটলিসহ ১১ জন প্রতিনিধি ছিলেন। যার নেতৃত্বে ছিলেন হোয়াইটলি।
বৈঠক শেষে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমাদের যে রোডম্যাপ আছে, সে রোডম্যাপ অনুযায়ী আমরা এগিয়ে যাচ্ছি। আমাদের প্রস্তুতি রয়েছে এবং আমরা যথাসময়ে নির্বাচন করব। আমরা এটাও উনাদেরকে পরিস্কার করে বলেছি। কিছু কিছু বিষয়ে এখনও রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে মতপাথর্ক্য রয়েছে। এই মতপার্থক্য থাকার কারণে এখনো নির্বাচনি পরিবেশটা অনুকূলে (কনজেনিয়াল) নয়।’
অচিরেই মতপার্থক্যটা দুর হয়ে যাবে আশা প্রকাশ করে সিইসি বলেন,' শেষমেষ সবদলগুলো নির্বাচনে আসবে সে বিষয়ে আমরা আশাবাদ ব্যক্ত করেছি, তবে সে বিষয়ে আমরা নিশ্চিত করে...। আমরা বলেছি যদি নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয় তাহলে চমৎকার প্রতিদ্বন্দ্বিতা হবে। সেই লক্ষ্যে আমাদের পুরো প্রস্তুতি রয়েছে।'
পলিটিক্যাল ডায়লগের বিষয়ে কোনো কথা হয়েছে কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘আমরা নির্বাচন কমিশন থেকে একাধিকবার বলেছি যে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে আলোচনার প্রয়োজন। এবং ব্যাপক অর্থে তাদের মধ্যে সমঝোতা প্রয়োজন, যাতে নির্বাচন সুষ্ঠু পরিবেশে সম্পন্ন হয়। প্রথম থেকেই আমরা এই আবেদন করে আসছি, এখনও করে যাচ্ছি। মতপার্থক্যগুলো রাজনৈতিক ইস্যু, আমাদের জন্য ইস্যু নয়। কাজেই রাজনৈতিক ইস্যুগুলো, যেগুলো নির্বাচনের জন্য অন্তরায় হতে পারে, সেগুলোর সুরাহা রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দকে করতে হবে।’
‘রাজনৈতিক দলগুলোকে সেটা অনুধাবন করতে হবে এবং বুঝতে হবে। তাদেরই এই অসুখ নিরাময় করতে হবে। তাহলেই নির্বাচনটা প্রত্যাশিত মাত্রায় অংশগ্রহণমূলক হবে। সুন্দর, সুষ্ঠু হবে এবং গণতান্ত্রিক চেতনায় যে নির্বাচন প্রত্যাশিত সে নির্বাচনটা ওভাবেই অনুষ্ঠিত হবে।’
ইইউ প্রতিনিধি দল ইভিএম নিয়ে প্রশ্ন করেছিলেন উল্লেখ করে সিইসি বলেন, ‘ইভিএম নিয়ে যে অবিশ্বাস ছিল তা অনেকটা কেটে গিয়েছিল। তবে, এটাও জানিয়েছি যে ইভিএম নিয়ে এখনও পুরোপুরি নিশ্চিত হতে পারছি না, কারণ আদৌ ইভিএম এভেইলেবল হবে কি না। আমরা কী পরিমাণ নির্বাচন ইভিএমে করতে পারব, সে বিষয়ে কোনো নিশ্চিত সিদ্ধান্তে আমরা উপনীত হইনি। উনাদেরে সঙ্গে আমাদের এতটুকুই আলোচনা ছিল। আমার মনে হয় যেহেতু উনারা আসছেন উনারাই ভাল করে বলতে পারবেন।’
ইইউয়ের এই প্রতিনিধি দল এর আগেও গত বছর জুলাইতে নির্বাচন কমিশনে এসেছিলেন জানিয়ে হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘তাদের সঙ্গে তখন নির্বাচন নিয়ে মতবিনিময় হয়েছে। এখন যেহেতু আমাদের দশ মাস অতিবাহিত হয়েছে। আমরা নির্বাচন বর্ষে উপনীত হয়েছি। তাই উনারা এটাকে পিরিয়ডিক্যাল বলে থাকেন। উনারা পুনরায় মতবিনিময় করতে আসছেন। মূলত আমাদের নির্বাচনি প্রস্তুতি কেমন তা জানতে এসেছিলেন। আমরা উনারদের কাছ থেকে সুনির্দিষ্টভাবে জানতে চেয়েছি নির্বাচনের কোন কোন বিষয় আপনারা জানতে চান। উনারা বলেছেন, আমরা আমাদের ইলেকটোরাল রোল সম্পর্কে অবহিত করেছি। সংসদীয় আসনের সীমা পুনর্নির্ধারণ, নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক করতে আমাদের কোনও উদ্যোগ আছে কি না, এই বিষয়গুলো তাদের জানিয়েছি। আমাদের বর্তমান অবস্থানটা পরিষ্কার করেছি। এবং আমরা জানিয়েছি আমরা প্রস্তুত আছি।’
প্রতিনিধি দলের পক্ষে থেকে কোনো সুপারিশ আছে কি না জানতে চাইলে কাজী হাবিবুল আউয়াল বলেন, ‘উনারা জানতে চেয়েছেন, আমরা নির্বাচন পর্যবেক্ষণটা কী ধরণের সহযোগিতা দিতে পারব। আমরা বলেছি, গণমাধ্যম আমাদের নির্বাচন কভার করে থাকে, পর্যবেক্ষকরাও করে থাকে। অতীতেও যেভাবে করেছে কিন্তু এবার আমরা যেটা করব, আমাদের তরফ থেকে আমরা ফুললি ওপেন হব। আমাদের তরফ থেকে কোনও অন্তরায় থাকবে না। ফরেন অবজারভার সম্পর্কে আমাদের একটা পলিসি আছে। তারা আমাদের কাছে আবেদন করবেন। আমরা সেটা পাঠিয়ে দেব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে এবং আমাদের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে। কারণ বিষয়টি দ্বিপাক্ষিকভাবে সুরাহা হতে হবে। কিন্তু এতটুকু আমরা বলেছি, আমাদের তরফ থেকে কোনও অন্তরায় থাকবে না।’
সিইসি বলেন, ‘আমরা জেনেছি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, তিনি বিদেশি পর্যবেক্ষকে এলাউ করবেন। কারণ একটা ব্রিটিশ এমপি ডেলিগেশন উনার সঙ্গে মিট করেছিলেন। তখন প্রধানমন্ত্রী সে আশ্বাস দিয়েছিলেন। উনারাও এতে আনন্দিত, আমরাও এতে আনন্দিত। বিদেশি পর্যবেক্ষকরাও যদি এসে আমাদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করে, গ্লোবালিও সারাবিশ্ব দেখবে আমাদের দেশের নির্বাচনটা সুন্দর, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষভাবে অনুষ্ঠিত হয়েছে।’