রাজশাহীতে করোনায় ৮০ বছরের ফেরিওয়ালার মৃত্যু

Looks like you've blocked notifications!
রাজশাহীতে করোনাভাইরাসে মৃত আবদুস সোবহান। ছবি : সংগৃহীত

রাজশাহীতে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত আবদুস সোবহান নামের এক বৃদ্ধের (৮০) মৃত্যু হয়েছে। রাজশাহী সংক্রামক ব্যাধি (আইডি) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রোববার সকাল পৌনে ৮টার দিকে মৃত্যু হয় তাঁর। আবদুস সোবহান রাজশাহীর বাঘা উপজেলার দক্ষিণ গাঁওপাড়া গ্রামের বাসিন্দা।

বিষয়টি নিশ্চিত করে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, গত ১৭ এপ্রিল জ্বর ও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া নিয়ে রামেক হাসপাতালের মেডিসিন ওয়ার্ডে ভর্তি হন আবদুস সোবহান। তিন দিন পর চিকিৎসকদের সন্দেহ হলে তাঁর করোনা টেস্ট করা হয়। এরপর তাঁর করোনা ধরা পড়ে। পরে তাঁকে রাজশাহী সংক্রামক ব্যাধি হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।

বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আক্তারুজ্জামান জানান, ওই বৃদ্ধ ফেরি করে বাঁশের তৈরি বিভিন্ন সামগ্রী বিক্রি করতেন। ৮০ বছর বয়সেও তিনি এ কাজ করতেন। সম্প্রতি তিনি আশপাশের গ্রামে গিয়ে তাঁর তৈরি সামগ্রী বিক্রি করেছেন। এরপর তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন।

ডা. আক্তারুজ্জামান আরো জানান, ওই বৃদ্ধ গত ১২ ও ১৪ এপ্রিল উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের বহির্বিভাগে চিকিৎসা নিয়েছেন। প্রাথমিক অবস্থায় তিনি নিজেকে অ্যাজমা রোগী দাবি করেন। এরপর পরীক্ষা-নিরীক্ষায় তাঁর টাইফয়েড ধরা পড়ে। ১৭ এপ্রিল অবস্থার অবনতি হলে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগে চলে আসেন তিনি। তখন কর্তব্যরত চিকিৎসক ওই বৃদ্ধকে রামেক হাসপাতালে রেফার্ড করেন।

এদিকে, রামেক হাসপাতালের চিকিৎসকদের সন্দেহ হলে ২০ এপ্রিল আবদুস সোবহানের এক্স-রে করার পর করোনার লক্ষণ ধরা পড়ে। এরপর তাঁর নমুনা সংগ্রহ করে রামেকের পিসিআর ল্যাবে পাঠানো হয়। সেখানে পরীক্ষার পর ২০ এপিল সন্ধ্যায় আবদুস সোবহানের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়। এরপর তাঁকে পাঠানো হয় রাজশাহী আইডি হাসপাতালের আইসোলেশনে। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় আজ রোববার সকালে তাঁর মৃত্যু হয়।

এদিকে, ২০ এপ্রিল আবদুস সোবহানের করোনা শনাক্তের খবর শুনে রাতেই বাঘার দক্ষিণ গাঁওপাড়া গ্রামে তাঁর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শাহিন রেজা। ওই সময় উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ কর্মকর্তা ডা. আক্তারুজ্জামান ও বাঘা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নজরুল ইসলাম তাঁর সঙ্গে ছিলেন। এ সময় তাঁরা জানতে পারেন, করোনা পজিটিভ ওই বৃদ্ধের দুটি পরিবার রয়েছে। উভয় পরিবারের লোকজন রামেক হাসপাতালে নেওয়ার আগ পর্যন্ত তাঁকে দেখাশোনা করেছেন। এর আগে স্থানীয় পল্লীবাংলা ডায়াগনস্টিক সেন্টারে তাঁর ইসিজি পরীক্ষা করা হয়। তাঁকে রাজশাহী নিয়ে যান বুলবুল নামের এক মাইক্রোবাসের ড্রাইভার।

ইউএনও শাহিন রেজা বলেন, ‘আমরা ওই পরিবার সম্পর্কে বিস্তারিত খোঁজখবর নেওয়ার পর তাঁদের সঙ্গে সম্পৃক্ত পাঁচটি বাড়ি, মাইক্রোবাসের চালক বুলবুলের বাড়ি ও পল্লীবাংলা ডায়াগনস্টিক সেন্টার দুই সপ্তাহের জন্য লকডাউন করে দিই। এসব পরিবারের মাঝে খাবার পৌঁছে দেওয়া হয়েছে।’

এদিকে, আবদুস সোবহানের করোনা শনাক্তের পরই চিকিৎসার সময় তাঁর সংস্পর্শে আসায় রামেক হাসপাতালের ২১ জন চিকিৎসক, ১২ জন সেবিকা ও ৯ জন কর্মীকে কোয়ারেন্টিনে পাঠানো হয়। একই সঙ্গে হাসপাতালের মেডিসিন ইউনিটের ৪২ নম্বর ওয়ার্ডটি লকডাউন করা হয়।

রামেক হাসপাতালের উপপরিচালক ডা. সাইফুল ফেরদৌস জানান, গত ২২ ও ২৩ এপ্রিল ২১ জন চিকিৎসকসহ ৪২ জনেরই নমুনা সংগ্রহ করে পিসিআর ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়েছে। তাঁদের কারো দেহে করোনা শনাক্ত হয়নি। এ ছাড়া বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও স্থানীয় একটি ক্লিনিকেও চিকিৎসা নিয়েছিলেন আবদুস সোবহান। ওই দুই প্রতিষ্ঠানের ৯ জনের নমুনা সংগ্রহ করে পরীক্ষা করা হয়। তাঁদেরও পরীক্ষার রিপোর্ট নেগেটিভ আসে।

রাজশাহীতে গত ১২ এপ্রিল প্রথম কোভিড-১৯ রোগী শনাক্ত হয়। এরপর গত ২০ এপ্রিল পর্যন্ত মোট আটজন করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। তাঁদের মধ্যে পাঁচজন নারী ও তিনজন পুরুষ। আক্রান্তদের মধ্যে পুঠিয়া উপজেলায় পাঁচজন, বাগমারায় একজন, মোহনপুরে একজন ও বাঘা উপজেলায় একজন রয়েছেন। এই সাতজনই ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুর থেকে এসেছিলেন। তাঁরা নিজ নিজ বাড়িতে আইসোলেশনে থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এর মধ্যে আবদুস সোবহানের মৃত্যু হয়।