রাজশাহীতে করোনা ইউনিটে ১৬ জনের মৃত্যু, নিয়ন্ত্রণে নতুন ইউনিট

Looks like you've blocked notifications!
দেশে করোনার অন্যতম হটস্পট এখন রাজশাহী। ফাইল ছবি : স্টার মেইল

রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের করোনা ইউনিটে ২৪ ঘণ্টায় ১৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এর মধ্যে আটজন করোনা পজিটিভ ছিলেন। সাতজন মারা যান উপসর্গ নিয়ে চিকিৎসাধীন অবস্থায়। আর মৃত একজনের রিপোর্টে করোনা নেগেটিভ এসেছে। হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী এসব তথ্য জানিয়েছেন।

পরিচালক আজ বুধবার সকালে জানান, ২৪ ঘণ্টার মধ্যে করোনা ইউনিটে ১৬ জনের মৃত্যু হয়। এদের মধ্যে অর্ধেকেই রাজশাহীর। অন্য আটজনের মধ্যে চাঁপাইনবাবগঞ্জের তিনজন, নাটোরের দুজন, নওগাঁর দুজন ও একজন অন্য জেলার। মৃত ১৬ জনের মধ্যে তিনজন মারা গেছেন আইসিইউতে। এ ছাড়া ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে একজন, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে একজন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে পাঁচজন, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে দুজন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে একজন এবং ১ নম্বর ওয়ার্ডে তিনজন মারা গেছেন। মৃত ১৬ জনের মধ্যে পুরুষ ১১ জন ও নারী পাঁচজন।

৬১ বছরের ঊর্ধ্বে মারা গেছেন আটজন, ২১ থেকে ৩০ বছরের একজন, ৩১ থেকে ৪০ বছরের দুজন, ৪১ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে দুজন এবং ৫১ থেকে ৬০ বছরের মধ্যে তিনজন। আর করোনা পজিটিভ হয়ে যে আটজনের মৃত্যু হয়েছে, তাদের পাঁচজনের বাড়ি রাজশাহী, একজন চাঁপাইনবাবগঞ্জের, নাটোরের একজন ও নওগাঁর একজন।

এ ছাড়া উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুবরণকারী আটজনের মধ্যে তিনজনের বাড়ি রাজশাহী, চাঁপাইনবাবগহ্জের দুজন, নাটোরের একজন ও অপরজন অন্য জেলার। আর করোনা ইউনিটে মৃত নওগাঁর একজনের নেগেটিভ রিপোর্ট এসেছে।

হাসপাতাল পরিচালক জানান, কোভিড রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালের ৪৮ বেডের ১৭ নম্বর ওয়ার্ডটিকে করোনা ওয়ার্ডে রূপান্তর করা হয়েছে। সেখানে সেন্ট্রাল অক্সিজেনের সংযোগ দেওয়া হয়েছে। এর ফলে আইসিইউ এর ২০টি বেড এবং কেবিনের ১৫টি বেড ছাড়াও হাসপাতালের ১০টি ওয়ার্ড এখন করোনা ডেডিগেটেড ওয়ার্ড। সব মিলে করোনা ইউনিটে এখন বেড সংখ্যা ৩৫৭টি। বুধবার সকালে ৩৫৭ বেডের বিপরীতে রোগী ভর্তি ছিলো ৪১০ জন। বাড়তি রোগীদের ওয়ার্ডগুলোর মেঝে ও বারান্দায় রেখে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তবে সেখানেও তাদের অক্সিজেনের ব্যবস্থা করা হয়েছে।

ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানী আরও জানান, অক্সিজেন সেচুরেশন একদম নীচে নেমে গেছে অর্থাৎ যাদের অক্সিজেন দেওয়া প্রয়োজন, বর্তমানে হাসপাতালে শুধু সেসব করোনা রোগীকেই ভর্তি করা হচ্ছে। আর করোনা আক্রান্ত যেসব রোগীর অক্সিজেন দেওয়ার প্রয়োজন নেই, তাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হচ্ছে না। বাড়িতে রেখেই তাদের চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। 

হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানায়, বুধবার সকাল ৬টা থেকে আগের ২৪ ঘণ্টায় করোনা ইউনিটে নতুন রোগী ভর্তি হয়েছে ৬০ জন এবং সুস্থ হয়ে বাড়ি ফিরেছে ৪২ জন। বর্তমানে হাসপাতালের আইসিইউয়ের ২০টি ও কেবিনের ১৫টি বেডসহ ১০টি করোনা ওয়ার্ডে ৩৫৭ বেডের বিপরীতে ভর্তি রোগী আছেন ৪১০ জন। এর মধ্যে আইসিইউয়ের ২০টি বেডে ২০ জন, কেবিনের ১৫টি বেডের বিপরীতে ১৬ জন, ৩৯ নম্বর ওয়ার্ডে ১৬টি বেডের বিপরীতে চারজন, ২৯ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৮টি বেডে ৪৭ জন, ২৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি বেডের বিপরীতে ৩৮ জন, ২২ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি বেডের বিপরীতে ৫০ জন, ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে ১০টি বেডের বিপরীতে দুজন, ১৬ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি বেডের বিপরীতে ৫২ জন, ৩ নম্বর ওয়ার্ডে ৩২টি বেডের বিপরীতে ৪৮ জন, ১ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৬টি বেডের বিপরীতে ৪৮ জন, ১৫ নম্বর ওয়ার্ডে ৩৬টি বেডের বিপরীতে ৪৪ জন এবং ১৭ নম্বর ওয়ার্ডে ৪৮ বেডের বিপরীতে ৪১ জন রোগী ভর্তি আছেন। হাসপাতালের করোনা ইউনিটে বর্তমানে যে ৪১০ জন চিকিৎসা নিচ্ছেন, তাদের মধ্যে ২৭৪ জনই রাজশাহীর। এ ছাড়া চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৬০ জন, নাটোরের ২৬ জন, নওগাঁর ৩৪ জন, পাবনার নয়জন, কুষ্টিয়ার তিনজন, চুয়াডাঙ্গার দুজন ও অপর দুজন অন্য জেলার।  

এদিকে গতকাল মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজশাহী মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের দুটি পিসিআর ল্যাবে রাজশাহী ও চাঁপাইনবাবগঞ্জের ৫৫৪ জনের নমুনা পরীক্ষায় ১৭৬ জনের শরীরে করোনাভাইরাস পাওয়া গেছে। এর মধ্যে রাজশাহীতে শনাক্তের হার ৩৩ দশমিক ০৪ শতাংশ। চাঁপাইনবাবগঞ্জে শনাক্তের হার ২৫ দশমিক ৭৭ শতাংশ।

করোনা সংক্রমণের ঊর্ধ্বগতির কারণে রাজশাহী মহানগর এলাকায় ১৪ দিনের সর্বাত্মক লকডাউনের আজ বুধবার ১৩তম দিন চলছে। লকডাউনের ফলে মহানগর এলাকায় ওষুধ ও কৃষিপণ্যের দোকান এবং জরুরি সেবার দোকান ছাড়া সব ধরনের ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকার কথা থাকলেও নগরীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ছাড়া অন্যান্য এলাকায় মানা হচ্ছে না এ নিয়ম। সব ধরনের দোকানই খোলা রয়েছে। কাঁচাবাজার নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত খোলা থাকলেও সেখানে উপেক্ষিত হচ্ছে স্বাস্থ্যবিধি। জরুরি সেবা, রোগী পরিবহণ ও কাঁচামাল পরিবহণের সঙ্গে জড়িত যানবাহন ছাড়া মহানগর এলাকার সঙ্গে সারা দেশের সরাসরি বাস ও ট্রেন যোগাযোগ বন্ধ রয়েছে। তবে মহানগর এলাকার বাইরে বানেশ্বর থেকে সারা দেশের বাস চলাচল করছে। সেখান থেকে ছোট ছোট যানবাহনে মানুষ মহানগর এলাকায় প্রবেশ করছে। ফলে লকডাউন কার্যত অকার্যকর হয়ে পড়েছে। নানা অজুহাতে নগরীতে লোকজনের চলাচল বেড়েছে। রিকশা ও অটোরিকশার চলাচলও রয়েছে স্বাভাবিক।