রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় মায়ের কবরে চিরনিদ্রায় খোকা

Looks like you've blocked notifications!
দাফনের আগে বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকাকে আজ বৃহস্পতিবার রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। ছবি : মোহাম্মদ ইব্রাহিম

রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় চিরনিদ্রায় শায়িত হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ও বীর মুক্তিযোদ্ধা সাদেক হোসেন খোকা। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর জুরাইন কবরস্থানে মায়ের কবরে তাঁকে দাফন করা হয়।

সাদেক হোসেন খোকা ছিলেন অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সর্বশেষ মেয়র। এ ছাড়া তিনি দুইবার প্রতিমন্ত্রী ও মন্ত্রী ছিলেন।

এর আগে ধূপখোলা মাঠে খোকার জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। অসংখ্য মানুষ জানাজায় অংশ নেন। জানাজার পর জুরাইনে নেওয়া হয় জনপ্রিয় এই নেতার মরদেহ। তখন রাস্তার দুইপাশে ছিল মানুষের ভিড়।

জুরাইন কবরস্থানের গেটের সামনে সাদেক হোসেন খোকাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় গার্ড অব অনার দেওয়া হয়। পুলিশ সদস্যদের পাশাপাশি অসংখ্য মানুষ খোকার প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন। পরে মায়ের কবরে শায়িত করা হয় তাঁকে।

এর আগে গোপীবাগে খোকার বাসভবনে মরদেহ রাখা হয়। সেখানে তাঁর প্রতি সম্মান প্রদর্শন করেন স্থানীয় বাসিন্দারা।

বাংলাদেশ সময় গত বুধবার সকাল সাড়ে ১০টার কিছু সময় আগে এমিরেটস এয়ারলাইনসের ফ্লাইটে খোকার মরদেহ নিয়ে নিউইয়র্ক থেকে দেশের উদ্দেশে রওনা দেন তাঁর স্বজনরা। সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ বহনকারী ফ্লাইটটি আজ বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা ২০ মিনিট নাগাদ ঢাকার হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছায়। এয়ারপোর্ট থেকে নেতাকর্মীবেষ্টিত সাবেক মেয়রের মরদেহবাহী অ্যাম্বুলেন্সের চারপাশে বিএনপির নেতাকর্মীরা কেউ হেঁটে, কেউ গাড়ি ও মোটরসাইকেলের বহর নিয়ে এগোতে থাকেন। এ সময় নেতাকর্মীরা স্লোগান দেন ‘খোকা ভাইয়ের স্মরণে, ভয় করি না মরণে’, ‘খোকা ভাইয়ের সংগ্রাম, চলবে অবিরাম’, ‘মুক্তিযোদ্ধা খোকা ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’।

জাতীয় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় বেলা ১১টায় সাদেক হোসেন খোকার জানাজা সম্পন্ন হয়। সাদেক হোসেন খোকার দুই ছেলে ইশরাক হোসেন ও ইশফাক হোসেন ছাড়াও সংসদ ভবনের জানাজায় উপস্থিত ছিলেন সাবেক রাষ্ট্রপতি ও বিকল্পধারা বাংলাদেশের সভাপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরী, প্রবীণ আওয়ামী লীগ নেতা ও সাবেক বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ এমপি, বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর সালেহ উদ্দিন, বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি ও সংসদ সদস্য রাশেদ খান মেমন, সাবেক স্বরাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শামসুল হক টুকু এমপি, সংসদ সদস্য সাবের হোসেন চৌধুরী, এলডিপির সভাপতি অলি আহমদ, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টির সৈয়দ মুহম্মদ ইবরাহিম, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ ও আবদুল মঈন খান প্রমুখ।

পরে সাদেক হোসেন খোকার মরদেহ নেওয়া হয় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। সেখানেও ছিল মানুষের ঢল। সর্বস্তরের মানুষ তাঁর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে।

জাতীয় সংসদে জানাজার পর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাখার পর খোকার মরদেহ নেওয়া হয় নয়াপল্টনে বিএনপির রাজনৈতিক কার্যালয়ের সামনে। দুপুর ১২টা থেকেই বিএনপির নেতাকর্মীরা সেখানে জমায়েত হতে থাকেন। এক সময় নাইটিঙ্গেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত কানায় কানায় পূর্ণ হয়ে যায় মানুষে।

জানাজায় অংশ নেন সর্বস্তরের মানুষ। সেখানে ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতারা। জানাজা পড়ান জাতীয়তাবাদী ওলামা দলের আহ্বায়ক হাফেজ মাওলানা নেসারুল হক।

সাদেক হোসেন খোকা দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন। পরে তিনি ক্যানসারে আক্রান্ত হন। গত ২৮ অক্টোবর শারীরিক অবস্থার অবনতির পরই তাঁকে নিউইয়র্কে ম্যানহাটনে স্লোয়ান ক্যাটারিং ক্যানসার সেন্টারে ভর্তি করা হয়। সাবেক মন্ত্রী সাদেক হোসেন খোকা ২০১৪ সালের মে মাসে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমান। তার পর থেকে সেখানেই অবস্থান করছিলেন বিএনপির এই প্রভাবশালী নেতা।