রায় শুনেই সাবেক সাংসদ হাবিবকে জড়িয়ে ধরে কাঁদলেন মেয়ে

Looks like you've blocked notifications!
সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে আজ বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার পর আসামি সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও তাঁর মেয়ে কানেতা ইয়া লাম লামসহ অন্যরা। ছবি : এনটিভি

ঠিক সকাল ১০টা ১০ মিনিটে সাতক্ষীরার চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ূন কবীর আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলা মামলার রায় পড়া শুরু করেন। ম্যাজিস্ট্রেট যখন রায় পড়ছিলেন তখন সব আসামি তাঁর দিকে তাকিয়ে ছিলেন। তাকিয়ে ছিলেন সাবেক সাংসদ হাবিবুল ইসলাম হাবিব ও তাঁর মেয়ে কানেতা ইয়া লাম লাম।

রায় পড়ার সময় আসামিদের ভেতরে উৎকণ্ঠা দেখা যায়। বেশির ভাগ আসামিই মুখ ভার করে দাঁড়িয়ে ছিলেন এজলাস কক্ষে। সে সময় চার-পাঁচজন আসামিকে চোখ মুছতে দেখা যায়। কাঁদতে দেখা যায় হাবিবের মেয়ে কানেতাকে। এভাবে ১০ মিনিট পর অর্থাৎ ১০টা ২০ মিনিটে রায় পড়া শেষ করেন ম্যাজিস্ট্রেট।

এই রায়ে বিএনপির সাবেক সংসদ ও মামলার প্রধান আসামি হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে সর্বোচ্চ ১০ বছর কারাদণ্ডাদেশ দিয়েছেন আদালত। রায় ঘোষণা শেষ হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই হাবিবকে জড়িয়ে ধরেন তাঁর মেয়ে কানেতা। সে সময় কানেতা কাঁদতে কাঁদতে তাঁর বাবাকে বলেন, ‘তোমার কিছুই হবে না বাবা। আমরা তোমাকে নিরপরাধ প্রমাণ করেই ছাড়ব।’ এই কথা শুনে কেঁদে ফেলেন সাবেক সাংসদ হাবিবও। মেয়েকে বুকে টেনে নিয়ে বলেন, ‘শান্ত হও মা। আমরা উচ্চ আদালতে ন্যায়বিচার পাব।’

বাবা হাবিবের বুকের ভেতর থেকে কানেতা বলতে থাকেন, ‘আমার বাবাকে মিথ্যা মামলায় ফাঁসানো হয়েছে। এখানে সব রাজাকারের দল। আর তাই তারা এই রায় দিয়েছে।’ সে সময় গালাগাল করতে থাকেন কানেতা। তারপর হাবিব তাঁর মেয়েকে পুনরায় বুকে টেনে নিয়ে বলতে থাকেন, ‘কাউকে কিছু বলার দরকার নেই মা। আল্লাহ এর বিচার করবেন। এখানে যে সব আসামি আছেন, তারাও সবাই জানেন; আমি তখন কলারোয়ায় ছিলাম না। ঘটনাস্থলে না থেকেও আমাকে মিথ্যা মামলায় সাজা দেওয়া হয়েছে।’

এরপর একে একে আসামিদের এজলাস কক্ষ থেকে বের করা হয়। সে সময় কয়েকজন আসামিকে কাঁদতে দেখা যায়। কাঁদতে কাঁদতে একজন আসামি বলছিলেন, ‘এই রায় মানি না। আমার কোনো দোষ নেই। আমি সুষ্ঠু বিচার চাই।’

আসামিদের যখন আদালত ভবন থেকে নিচে নামানো হয় তখন তাদের স্বজনরা কান্নায় ভেঙে পড়েন। ছলছল চোখে হাত নাড়িয়ে আসামিদের বিদায় জানান তাদের পরিবারের সদস্যরা। এরপর ৩৪ জন আসামিকে প্রিজনভ্যানে তুলে কারাগারে নিয়ে যান আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা।

ভ্যানে করে যখন আসামিদের নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল তখন হাত নেড়ে হাবিব বলছিলেন, ‘আমি কোনো অন্যায় করিনি। আমি আপনাদের সঙ্গে ছিলাম, আপনাদের সঙ্গে আছি; আপনারা ভালো থাকবেন। আল্লাহ হাফেজ।’

সকাল ১০টার কিছু সময় আগে আসামিদের আদালতে নিয়ে আসা হয়। তার আগে থেকেই আসামিদের স্বজনরা উপস্থিত হন আদালত চত্বরে। আদালত চত্বরে থেকে এক নজর দেখার জন্য অপেক্ষা করছিলেন স্বজনরা।

সাতক্ষীরার কলারোয়ায় ২০০২ সালের ৩০ আগস্ট তৎকালীন বিরোধীদলীয় নেতা বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে হামলার ঘটনায় হত্যাচেষ্টা মামলার রায় আজ ঘোষণা করেন চিফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট হুমায়ূন কবির। রায়ে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য হাবিবুল ইসলাম হাবিবকে ১০ বছরসহ ৫০ আসামিকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা দেওয়া হয়। রায় ঘিরে সাতক্ষীরা আদালত এলাকায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সমন্বয়ে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

এই মামলায় আসামির সংখ্যা ৫০ জন। এর মধ্যে ১৫ জন পলাতক রয়েছেন। ৫০ আসামির মধ্যে ‘টাইগার খোকন’ নামের একজন আগে থেকে অন্য মামলায় জেলহাজতে আটক রয়েছেন।