রায় শুনে এক দিকে কান্না, আরেক দিকে উল্লাস
বহুল আলোচিত মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান হত্যা মামলায় রায় ঘোষণা করেছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ মোহাম্মদ ইসমাইল। আজ সোমবার বিকেলে আদালতে রায় ঘোষণার সময় তিন ধরনের শাস্তি ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে তিন রকমের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেন আসামিরা। রায় শুনে কেউ উল্লাস প্রকাশ করেন আবার কেউ কান্নায় ভেঙে পড়েন আবার কেউ ছিলেন স্বাভাবিক।
বিকেল ৪টা ২০মিনিটের দিকে প্রথমে দুই আসামি কক্সবাজারের টেকনাফ মডেল থানার সাবেক ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) প্রদীপ কুমার দাশ ও পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলীকে মৃত্যুদণ্ডাদেশ দেন বিচারক। এ সময় ওসি প্রদীপ কাঠগড়ায় উদ্বিগ্ন হয়ে ছটফট করতে থাকেন। তবে অপর আসামি পরিদর্শক মো. লিয়াকত আলী ছিলেন স্বাভাবিক। তিনি দেয়ালের সঙ্গে হেলান দিয়ে প্যান্টের পকেট দুই হাত ভরে চুপচাপ থাকেন। এ সময় আদালতের ভেতরে থাকা শতাধিক আইনজীবী রায়কে স্বাগত জানিয়ে চিৎকার করে ওঠেন।
এরপর আদালত একে একে সাতজনের নাম বলে তাঁদের অভিযোগ থেকে খালাসের ঘোষণা দেন। এ সময় খালাসপ্রাপ্তরা একে অপরকে জড়িয়ে ধরে আনন্দ প্রকাশ করতে থাকেন। অনেকে বলতে থাকেন, ‘আল্লাহ তোমার কাছে শুকরিয়া।’
অভিযোগ থেকে খালাসপ্রাপ্তরা হলেন সহকারী উপপরিদর্শক (এএসআই) মো. লিটন মিয়া (৩০), কনস্টেবল ছাফানুর করিম (২৫), মো. কামাল হোসাইন আজাদ (২৭), মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, এপিবিএনের উপপরিদর্শক (এসআই) মো. শাহজাহান আলী (৪৭), কনস্টেবল মো. রাজীব হোসেন (২৩) ও আবদুল্লাহ আল মাহমুদ (২০)।
সর্বশেষ আদালত যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের রায় ঘোষণা করেন। রায় শুনে কাঠগড়ায় কান্নায় ভেঙে পড়েন মোহাম্মদ আইয়াজ ও মো. নিজাম উদ্দিন। এরপর তারা অপর যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামি নন্দ দুলাল রক্ষিতকে চড়-থাপ্পড় মারতে থাকেন। সে সময় আইয়াজ বলতে থাকেন, আমাকে বাসা থেকে ধরে নিয়ে যায় নন্দ দুলাল। সে ক্রসফায়ারের ভয় দেখিয়ে আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে। আমার দুই ছেলে মেয়ের এখন কী হবে?
নন্দ দুলালের কারণে আমাদের ফাঁসানো হয়েছে। সে আমাকে মেরে ফেলতে চেয়েছে। আমি জীবন বাঁচানোর জন্য পালাতে চেষ্টা করি। কিন্তু তার কারণে পারিনি। টেকনাফে জন্ম নেওয়াই অপরাধ। আমি কোনো দোষ করিনি। পরে নন্দ দুলালকে ছাড়িয়ে অন্যদিকে নিয়ে যাওয়া হয়।
একইভাবে নিজাম কান্না করতে করতে বসে পড়েন। অপর যাবজ্জীবন দণ্ডাদেশপ্রাপ্ত আসামিদের কেউ কেউ চিৎকার দিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়েন।
বিচারক এ মামলায় ছয়জনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন। তাঁরা হলেন বাহারছড়া পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের উপপরিদর্শক (এসআই) নন্দ দুলাল রক্ষিত (৩০), কনস্টেবল সাগর দেব, ওসি প্রদীপের দেহরক্ষী রুবেল শর্মা (৩০), স্থানীয় বাসিন্দা বাহারছড়া ইউনিয়নের শামলাপুরের মারিশবুনিয়া গ্রামের মো. নুরুল আমিন (২২), মো. নিজাম উদ্দিন (৪৫) ও মোহাম্মদ আইয়াজ (৪৫)।