রুম্পার প্রেমিক সৈকত আটক
স্টামফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের ছাত্রী রুবাইয়াত শারমিন রুম্পার প্রেমিক রাইমান সৈকতকে আটক করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা দক্ষিণ বিভাগ (ডিবি)।
বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদুর রহমান। তিনি বলেন, রাজধানীর খিলগাঁও এলাকা থেকে শনিবার সন্ধ্যায় সৈকতকে আটক করা হয়।
মাসুদুর রহমান বলেন, ‘সৈকত রুম্পার প্রেমিক। তাঁকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। রুম্পা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে তিনি জড়িত কি না, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। জিজ্ঞাসাবাদের জন্য গোয়েন্দা কার্যালয়ে নেওয়া হয়েছে।’
সৈকত স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির বিবিএ বিভাগের ৫৯তম ব্যাচের শিক্ষার্থী। তিনি পরিবারের সঙ্গে শান্তিনগরে ভাড়া বাসায় থাকেন।
এর আগে শনিবার দুপুরে ডিএমপির রমনা জোনের সিনিয়র সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) শেখ মোহাম্মদ শামীম এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘প্রেম-সংক্রান্ত কারণেই রুম্পাকে হত্যা করা হয়েছে, এটা নিশ্চিত। আমরা সৈকতকে খুঁজছি। প্রাথমিক তদন্তে আমরা নিশ্চিত হয়েছি এই তথ্য।’
জ্যেষ্ঠ সহকারী পুলিশ কমিশনার আরো বলেন, ‘ছাদ থেকে ফেলে দেওয়ার আগে রুম্পাকে হত্যা করা হয়েছে। ভবনটির ছাদের পরিবেশ অনেক নোংরা। ছাদের ওপর রুম্পার সঙ্গে কারো ধস্তাধস্তি বা হাতাহাতি হয়নি। ছাদে এমন কিছু ঘটলে ছাপ থাকত। তাঁকে একটি কক্ষে হত্যা করে সম্ভবত দুজন মিলে ছাদ থেকে নিচে ফেলে দিয়েছে।’
রাজধানীর সিদ্ধেশ্বরীর সার্কুলার রোডের আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পেছনের দুটি ভবনের মাঝখান থেকে গত বুধবার রাতে রুম্পার লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। রুম্পার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ সদর উপজেলার বিজয়নগর গ্রামে। তাঁর পরিবার মালিবাগের শান্তিবাগের একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পাশের বাসায় ভাড়া থাকত।
পরে পরিবার গিয়ে রুম্পার লাশ শনাক্ত করে। ওই ভবন দুটির একটিতে নারী হোস্টেল, অন্যটিতে পুরুষ হোস্টেল। এর বাইরে পারিবারিক বাসাও আছে। পুলিশের ধারণা, পুরুষ হোস্টেলের একটি কক্ষে হয়তো রুম্পাকে হত্যা করা হয়েছে। রুম্পার মৃত্যুর ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার রমনা মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আবুল খায়ের বাদী হয়ে একটি হত্যা মামলা করেন।
রুম্পার বাবা রোকন উদ্দিন পুলিশের পরিদর্শক হিসেবে হবিগঞ্জের একটি ফাঁড়িতে কাজ করেন। তিনি ওই দিনের ঘটনার কথা উল্লেখ করে বলেন, রুম্পা প্রাইভেট পড়িয়ে বাসার নিচে এসে চাচাতো ভাইকে দিয়ে ফোন ও ব্যাগ বাসায় পাঠিয়ে দেয়। রুম্পা বাসায় না গিয়ে অন্য কোথাও চলে যায়। তখন রুম্পার মোবাইলে তার এক বান্ধবী ফোন করে। ফোনটি রিসিভ করেন তার মা। সেই বান্ধবী রুম্পা কোথায় আছে, সেই খবর জানতে চায়। রুম্পার সেই বান্ধবী আয়েশা শপিং কমপ্লেক্সের পাশের একটি ভবনে থাকেন বলে জানান রোকন উদ্দিন। তিনি দাবি করেন, রুম্পার ওই বান্ধবীই হয়তো তাঁকে ডেকে নিয়েছিল।
রুম্পার বাবা আরো বলেন, ‘(আজ) রোববার স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা শুরু। পরীক্ষা দেওয়ার জন্য আমার মেয়ে ভার্সিটিতে সাড়ে ১৩ হাজার টাকা জমা দিয়েছিল। পরীক্ষার প্রবেশপত্রও নিয়েছে। কিন্তু পরীক্ষার আগেই তাকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে।’
স্টামফোর্ড ইউনিভার্সিটির ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী ও রুম্পার কাছের বন্ধু আবদুল্লাহ শাকিল এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘আমি যতটুকু জানি, প্রায় এক বছর বিবিএ ডিপার্টমেন্টের রাইমান সৈকত নামের এক ছেলের সঙ্গে রুম্পার সম্পর্ক ছিল। কিন্তু গত তিন মাস তাঁদের সম্পর্কটা ভালো যাচ্ছিল না। রুম্পা সব সময় মন খারাপ করে থাকত। বলত, সৈকতের সঙ্গে তাঁর ঝামেলা চলছে। আমরা ধারণা করছি, এ ঘটনার সঙ্গে ওই সম্পর্কের বিষয় জড়িত থাকতে পারে, আবার নাও পারে।’
রুম্পার লাশের ময়নাতদন্তের ব্যাপারে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক সোহেল মাহমুদ এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘রুম্পাকে ছাদ থেকে ফেলে দেওয়া হয়েছে, এটা নিশ্চিত। প্রথম যখন আমি লাশ দেখি, তখন তাঁর দুই পা ও হাত ভাঙা দেখেছি। মাথায় আঘাত পেয়েছে। চোখে-মুখে রক্ত ছিল। তবে হত্যার আগে ওই তরুণী ধর্ষণের শিকার হয়েছেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়ার জন্য আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি। আলামত পরীক্ষাগারে পাঠানো হয়েছে। প্রতিবেদন পেলে আসল ঘটনা জানা যাবে।’