রুহুল বিলে বাউত উৎসব

Looks like you've blocked notifications!
পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়ায় রুহুলবিলে শনিবার বাউত উৎসব মেতেছে শিকারিরা। ছবি : এনটিভি

চলনবিলে অধ্যুষিত উপজেলাগুলোর বিল ও নদীতে শুরু হয়েছে গ্রামবাংলার চিরচেনা ঐতিহ্যবাহী মাছ ধরার বাউত উৎসব। হাজারো সৌখিন মৎস্য শিকারী মেতে উঠেছে মাছ ধরার এই উৎসবে।

পাবনার চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়া উপজেলার বেশ কিছু অংশ জুড়ে রুহুল বিল। গতকাল শনিবার ভোর থেকে দেখা গেছে, মৎস্য শিকারিদের পদচারণায় ভরে ওঠে বিলপাড়। সবার হাতেই রয়েছে মাছ ধরার নানান উপকরণ। কেউ এসেছে পলো নিয়ে, কেউ ধর্ম জাল, চাক জাল, কেউ বা আবার ঠেলা জালি নিয়ে। শিশু থেকে বৃদ্ধ সব বয়সের মানুষই যোগ দিয়েছে মাছ ধরার এই উৎসবে।

পাবনা, নাটোর, সিরাজগঞ্জ ও টাঙ্গাইল জেলার বিভিন্ন উপজেলার হাজারো মানুষের এ যেন এক মিলন মেলা। কেউ মাছ পেয়েছে, কেউ পায়নি, কেউ বা ঠাণ্ডায় কাঁপছে হু-হু করে। কিন্তু বাউত উৎসবের হাসি লেগে আছে সবার মুখে। এ বিলে সপ্তাহের প্রতি শনিবার ও মঙ্গলবার এই বাউত উৎসব অনুষ্ঠিত হয়।

শনিবার ভোর থেকেই নসিমন, করিমন, মোটরসাইকেল, পিকআপ ভ্যান, অটোভ্যানসহ নানা যানবাহনে এসে জড়ো হতে থাকে চাটমোহর ও ভাঙ্গুড়ার রুহুল বিল পাড়ে। ভোরের কনকনে ঠাণ্ডা উপেক্ষা করে রুহুল বিলের বাউত উৎসবে মানুষ ছুটে আসে মাছ শিকারের নেশায়।

রুহুল বিলে প্রতি বছরই শীতের সময়ে বিভিন্ন অঞ্চল থেকে মানুষ ছুটে আসে ঐতিহ্যবাহী এই উৎসবে যোগ দিতে।

চাটমোহরের বামন গ্রামের আব্দুল আলিম বলেন, ‘আমি ছোট বেলা থেকেই রুহুলবিলে পলো দিয়ে মাছ ধরতে আসি। আমার ভাগ্য ভালো। খালি হাতে কখনো ফেরত যাইনি। পাঁচ থেকে ছয় কেজির গজার মাছও পেয়েছি এই বিলে।’

ক্ষোভ প্রকাশ করে পাবনা থেকে আসা মকলেছুর রহমান বলেন, ‘প্রতি বছরই এখানে আসি। কিন্তু এখন আর আগের মতো মাছ পাওয়া যায় না। স্থানীয় কিছু মানুষ গ্যাস ট্যাবলেট দিয়ে অসাধু উপায়ে বিল থেকে মাছ ধরে। ফলে অনেক সময় আমাদের খালি হাতে ফেরত যেতে হয়।’

নাটোর থেকে আগত শিকারী আবু বক্কার বলেন, ‘মোবাইল ফোনের মাধ্যমে বাউতদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে প্রতি বছর এই দিনে রুহুলবিলে মাছ শিকার করতে আসি। মাছ পাই বা না পাই এটি আমার শখ।’

ভাঙ্গুড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সৈয়দ আশরাফুজ্জামান মাছ ধরার এই উৎসব বিষয়ে বলেন, ‘পাবনার ভাঙ্গুড়া ও চাটমোহর উপজেলার বেশ কিছু অংশ নিয়ে ঐতিহ্যবাহী রুহুল বিলের অবস্থান। প্রতিবছর এই উৎসব হয়। হাজারো সৌখিন মাছ শিকারি শীতের এই সময়ে এ উৎসব পালন করে। এই অঞ্চলের মানুষের এটি একটি অতি পুরোনো উৎসব। বিভিন্ন অঞ্চলের মানুষ মিলিত হয়ে মাছ শিকারের এই উৎসব আজও টিকিয়ে রেখেছেন এই অঞ্চলের মানুষ।’

ইউএনও আরও বলেন, ‘এই ঐতিহ্যবাহী উৎসব যেন বিলুপ্ত না হয়ে যায়, সেদিকে সবাইকে লক্ষ্য রাখতে হবে। মাছের অভয়ারণ্য হিসেবে এই বিলের যে অংশ সংরক্ষণ করা আছে সেখানে যেন কেউ মাছ না ধরে। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হওয়া দরকার।’