রূপপুরে কর্মরত ইউক্রেনের নাগরিকরা উদ্বিগ্ন পরিবারের চিন্তায়

Looks like you've blocked notifications!

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে ইউক্রেনের ২১০ নাগরিক কাজ করছেন। সেখানে তাদের পরিবারের লোকজন কেমন আছে, কীভাবে তাদের অনিশ্চিত জীবন কাটছে; তা নিয়ে তারা উদ্বিগ্ন। পত্রিকার পাতা, টেলিভিশন খুললেই ভেসে উঠছে ইউক্রেনের বিভিন্ন স্থাপনার ধ্বংসযজ্ঞের চিত্র। ক্ষণে ক্ষণে জ্বলছে গুরুত্বপূর্ণ অনেক স্থাপনা। এমন অবস্থায় প্রাণ বাঁচাতে নিরাপদ স্থানে সরে যেতে ছোটাছুটি করছেন মানুষ।

রুশবাহিনীর হামলায় এরই মধ্যে বহু নিরীহ মানুষের প্রাণ গেছে। এতে অনেকেই তাদের প্রিয়জনকে হারিয়েছেন। হাজার মাইল দূরে বাংলাদেশের ঈশ্বরদীর রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রে কাজে আসা দুই শতাধিক ইউক্রেন নাগরিকও তাদের স্বজনদের নিয়ে উদ্বিগ্ন। মন কাঁদছে তাদের। কারণ ভালো নেই তাদের স্বজনরা। তবে এত দূর থেকে কী-ই বা করার আছে তাদের। কিছু করার না থাকলেও স্রষ্টার কাছে অন্তত প্রার্থনা তো করতে পারছেন।

জানা গেছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ প্রকল্পে প্রায় ২৫ হাজার কর্মী কর্মরত রয়েছে। এর মধ্যে পাঁচ হাজার ৪০০ কর্মী রাশিয়াসহ কয়েকটি দেশের। এরমধ্যে ইউক্রেনেরও ২১০ জন নাগরিক রয়েছেন। তাদের মধ্যে মাত্র ১০-১২ জন কর্মকর্তা পরিবারসহ বসবাস করছেন প্রকল্পের গ্রিনসিটিতে।

প্রকল্প সূত্রে জানা যায়, ইউক্রেনের কর্মীরা রাশিয়ান পারমাণবিক করপোরেশন রোসাটম কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের কাজে কোনো অসুবিধা হচ্ছে না রাশিয়া-ইউক্রেন নাগরিকদের। কোনো উত্তেজনাও নেই তাদের মধ্যে। কিন্তু যাদের পরিবার-পরিজন ইউক্রেনে রয়েছে তাদের জন্য দুশ্চিন্তায় রয়েছেন ইউক্রেনের নাগরিকরা।

রূপপুর প্রকল্পে ইউক্রেন-রাশিয়ার যুদ্ধের কোনো নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কি না জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা বলেন, এ যুদ্ধে প্রকল্পের কাজে সাময়িক প্রভাব পড়তে পারে, তবে তা দীর্ঘায়িত হবে না। এতে প্রকল্পটির কাজের গতিও বাধাগ্রস্ত হবে না। তবে প্রকল্পের অর্থায়নে সামান্য কিছু বিলম্ব হতে পারে।

ইউক্রেনের একজন নাগরিক তার দোভাষীর মাধ্যমে বলেন, ‘আমার দেশে এখন যুদ্ধ চলছে, যা প্রত্যাশিত ছিল না। সেখানে আমার পরিবারের লোকজন কেমন আছে, কীভাবে তাদের অনিশ্চিত জীবন কাটছে—তা নিয়ে আমরা উদ্বিগ্ন রয়েছি।’

দোভাষী শরিফুল আলম ওই ইউক্রেনের নাগরিকের কথা ভাষান্তর করে জানান, তাদের দেশে যুদ্ধ চললেও এখানে (রূপপুরে) রাশিয়া ও ইউক্রেনের নাগরিকরা একে অপরের সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নিয়েই কাজ করছেন। তাদের মধ্যে কোনো বৈরী সম্পর্ক নেই। তবে দ্রুত যুদ্ধ বন্ধ না হলে মানসিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন বলে মনে করেন তারা।

রূপপুর প্রকল্পের সাইট ইনচার্জ রুহুল কুদ্দুস জানান, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে চলমান যুদ্ধের প্রভাব রূপপুর পারমাণবিক বিদুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজে পড়বে না। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটি নির্মাণ করছে রাশিয়া। ১৮টি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান এ কাজে যুক্ত। তাদের তত্ত্বাবধানে রয়েছে রাশিয়ার রাষ্ট্রীয় পারমাণবিক প্রতিষ্ঠান রোসাটম। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধে বাংলাদেশের সবচেয়ে ব্যয়বহুল এই প্রকল্পটি বাস্তবায়নে সরকার ও দায়িত্বশীলরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছেন। এরই মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়নে দায়িত্ব পালনকারী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে রোসাটম কর্তৃপক্ষের অনানুষ্ঠানিক আলোচনা হয়েছে।

বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিমন্ত্রী স্থপতি ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘পুরো বিষয়টি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় দেখছে। এখানে ন্যাশনাল স্ট্যান্ডের ব্যাপার আছে।’

ঈশ্বরদী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইমরুল কায়েস বলেন, ‘যুদ্ধের প্রভাব যেন রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রের নির্মাণকাজে না পড়ে সে ব্যাপারে আমরা সতর্ক অবস্থানে রয়েছি। বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয় এবং রাশিয়ায় বাংলাদেশ দূতাবাস থেকে পাওয়া তথ্যের ভিত্তিতে ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।’

ইতোমধ্যে রোসাটম এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণের প্রতিশ্রুতি ও কাজের সময়সূচিতে কোনো পরিবর্তন হবে না। এখন পর্যন্ত রূপপুর প্রকল্পের কোনো কাজ বাধাগ্রস্ত হয়নি।

ঈশ্বরদী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ‘প্রকল্পের সার্বিক নিরাপত্তায় সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রয়েছে পুলিশ প্রশাসনসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।’

প্রসঙ্গত, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎকেন্দ্রটিতে এক হাজার ২০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতার ভিভিআর-প্রযুক্তির রি-অ্যাক্টরের দুটি ইউনিট স্থাপন করা হচ্ছে। দেশের প্রথম পরমাণু বিদ্যুৎকেন্দ্রটি রাশিয়ার আর্থিক ও কারিগরি সহায়তায় নির্মাণ করা হচ্ছে। সরকারের লক্ষ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে বিদ্যুৎকেন্দ্রের প্রথম ইউনিট থেকে বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হবে। আর দ্বিতীয় ইউনিট চালুর কথা রয়েছে ২০২৪ সালে।