‘রোহিঙ্গারা যাতে ভোটার হতে না পারে, সজাগ থাকতে হবে’
আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘কোনো অবস্থাতেই যাতে এক ব্যক্তি দুই জায়গায় ভোটার হতে না পারে। রোহিঙ্গা বা অন্য কোনো দেশের নাগরিক যেন অবৈধভাবে ভোটার হতে না পারে সে বিষয়ে নির্বাচন কমিশনকে অত্যন্ত সজাগ থাকতে হবে। প্রয়োজনে এসব অপরাধের কঠোর শাস্তির বিধি-বিধান করতে হবে।’
আজ সোমবার বিকেলে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘জাতীয় ভোটার দিবস’ উপলক্ষে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন আইনমন্ত্রী।
ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিন (ইভিএম) প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে মন্ত্রী বলেন, ‘বর্তমান যুগ প্রযুক্তির যুগ। প্রযুক্তির কল্যাণেই বিশ্বের অনেক দেশ উন্নয়নের শিখরে পৌঁছে গেছে। এখন প্রযুক্তিকে বাদ দিয়ে কাঙ্ক্ষিত উন্নয়ন করা দূরূহ ব্যাপার। নেতিবাচক ধারণা কিংবা অজ্ঞতার কারণে প্রযুক্তি গ্রহণ না করলে আমাদেরকে বিভিন্ন ক্ষেত্রে পিছিয়ে পড়তে হবে এবং উন্নয়নের অগ্রযাত্রা ব্যাহত হবে। এর অন্যতম উদাহরণ হলো- পরপর দুইবার বিনামূল্যে সাবমেরিন কেবল নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব পাওয়া সত্ত্বেও তৎকালীন বিএনপি সরকার অজ্ঞতার কারণে সেই প্রস্তাব নাকচ করে দিয়েছিল এবং পরবর্তী সময়ে এই নেটওয়ার্কের সাথে যুক্ত হওয়ার জন্য বাংলাদেশকে প্রায় একযুগ অপেক্ষা করতে হয়েছিল। এর ফলে বাংলাদেশকে দীর্ঘদিন আধুনিক যোগাযোগ প্রযুক্তির সুবিধা থেকে বঞ্চিত হতে হয়েছে এবং এর প্রভাব আমরা উপলব্ধি করেছি। এ রকম ভুল আর করতে চাই না। যে প্রযুক্তির দ্বারা দেশ ও জাতির কল্যাণ হবে, তা অবশ্যই গ্রহণ করব।’
আনিসুল হক বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, ব্রাজিল, রাশিয়া, ফ্রান্স, জাপান, অস্ট্রেলিয়া, পেরু, কাজাখস্তান ও সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ বিভিন্ন দেশ ইভিএম পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চালু করলেও বাংলাদেশের কেউ কেউ পুরোপুরিভাবে না জেনেই ইভিএমের বিষয়ে নেতিবাচক ধারণ পোষণ করছে। বাস্তবতা হলো ১৯৭৫-এর পর বাংলাদেশের ভোট গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যে অপসংস্কৃতি চালু হয়েছিল তা সম্পূর্ণ দূর করতে হলে নতুন প্রযুক্তি গ্রহণের বিকল্প নেই।’
মন্ত্রী আরো বলেন, ‘ইভিএম পদ্ধতি এই অপসংস্কৃতি দূর করতে মাইল ফলক হিসেবে কাজ করবে। তবে ইভিএম- পদ্ধতিকে আরো আধুনিক ও স্বচ্ছ করার জন্য ধারাবাহিক গবেষণা করতে হবে।’ তিনি আরো বলেন, ‘এ ছাড়া ভবিষ্যতে এমন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হবে যাতে মানুষ ঘরে বসেই অনলাইনে তার নিজের ভোট নিজে দিতে পারে এবং তার ভোটটি কোথায় গেল তা যেন নিশ্চিত হতে পারেন। কোন কেন্দ্রে মোট কত ভোট পড়েছে এবং কারা কারা ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে তাদের ছবি ও আইডি নম্বরসহ অনলাইনে তালিকা প্রকাশ করা যায় কি না সে ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করতে হবে। এতে ভোটারের সংখ্যা ও উপস্থিতি নিয়ে কারো মনে কোন সংশয় থাকবে না এবং যিনি ভোট দিবেন তাকে ভোট গ্রহণের একটি কনফারমেশন স্লিপ দেওয়া যায় কি না সে ব্যাপারেও চিন্তা-ভাবনা করা যেতে পারে।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা কোনো জায়গায় অনলাইনে আবেদন করলে এবং আবেদন সাবমিট হয়ে গেলে তো এ রকম স্লিপ পেয়ে থাকি। তা ছাড়া ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ভিশন পুরোপুরিভাবে বাস্তবায়ন করতে গেলেও ইভিএম এর মাধ্যমে ভোটগ্রহণ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা দরকার হবে।’
নির্বাচন কমিশনের সিনিয়র সচিব মো. আলমগীরের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তৃতা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কে এম নুরুল হুদা, নির্বাচন কমিশনার মাহবুব তালুকদার, মো. রফিকুল ইসলাম, কবিতা খানম ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) শাহাদাত হোসেন চৌধুরী।