রোহিঙ্গা পরিস্থিতি নিয়ে জাতীয় সংলাপ ডাকুন : রিজভী

Looks like you've blocked notifications!
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য দেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। ছবি : এনটিভি

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী বলেছেন, ‘রোহিঙ্গা সংকট কোনো দলীয় বিষয় নয়, এটা একটা জাতীয় সংকট। এই সংকট বাংলাদেশের অস্তিত্বের প্রশ্ন। ফলে জাতীয় সংলাপ ডাকুন। খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিয়ে সংলাপে বসুন। রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে তাঁর অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগান।’

আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন রিজভী।

এ সময় বিএনপি নেতা আরো বলেন, ‘বুধবার সংসদে দাঁড়িয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, রোহিঙ্গা সমস্যা জিয়াউর রহমানের সৃষ্টি। আসলে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে নিজেদের দুর্বলতা ও ব্যর্থতার গ্লানি ঢাকতেই প্রধানমন্ত্রী আজগুবি কথা বলছেন। ইতিহাস সাক্ষী, দেশের জনগণ সাক্ষী, মিয়ানমার বারবার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে বাংলাদেশের দিকে ঠেলে দিয়ে সমস্যা সৃষ্টি করতে চেয়েছিল। কিন্তু ১৯৭৮ সালে সেটি শক্ত হাতে মোকাবিলা করেছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। ১৯৯২ সালেও রোহিঙ্গা সংকট কঠোর ও সফলভাবে মোকাবিলা করেছেন দেশনেত্রী খালেদা জিয়া।’

রিজভী আরো বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যু দলীয় স্বার্থে ব্যবহার করতে গিয়ে এখন সমস্যাটিকে উপক্রান্ত অবস্থায় সমাধান না করে লেজেগোবরে পাকিয়ে ফেলা হয়েছে। রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে ব্যর্থতায় প্রমাণিত হয়েছে—এ সরকার বন্ধুহীন হয়ে পড়েছে। সে জন্যই প্রধানমন্ত্রী নিজের ব্যর্থতা আড়াল করতে গিয়ে অন্যের সফলতা নিয়ে অবান্তর কথা বলছেন।’

খালেদা জিয়াকে কারাগারে হত্যার চক্রান্ত চলছে

এ সময় বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার অসুস্থতার কথা উল্লেখ করে রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘খালেদা জিয়া গুরুতর অসুস্থ। কারাগারে যথাযথ ও প্রয়োজনীয় চিকিৎসা না দিয়ে তাঁকে চিরতরে পঙ্গু করে দেওয়ার ষড়যন্ত্র বাস্তবায়নের অপকৌশল প্রয়োগ করছে সরকার।’

এ সময় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব আরো বলেন, ‘বিনা চিকিৎসায় তাঁকে (খালেদা জিয়া) কারাগারে সুপরিকল্পিতভাবে হত্যার চক্রান্ত চলছে। ৬৪৫ দিন ধরে বিনা অপরাধে কারাবন্দি খালেদা জিয়া যে গুরুতর অসুস্থ, এটা দেশের প্রতিটি মানুষ জানেন। সুচিকিৎসার অভাবে ৭৫ বছর বয়সী সাবেক প্রধানমন্ত্রীর শারীরিক অবস্থা দিন দিন আশঙ্কাজনকভাবে অবনতি ঘটছে।’

রিজভী আরো বলেন, ‘বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (সাবেক পিজি হাসপাতাল) কর্তৃপক্ষ খালেদা জিয়ার স্বাস্থ্য সম্পর্কে সরকারের শেখানো বক্তব্য ও ব্যাখ্যা দিলেও সুচিকিৎসার কোনো পদক্ষেপই নেয়নি। গত এক সপ্তাহে কোনো চিকিৎসক তাঁকে দেখতে যাননি। তাঁর হাতে যে ব্যথা ছিল, তা পা পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়েছে। সারা শরীরে প্রচণ্ড ব্যথা। নার্সরা তাঁর হাতে-পায়ে হাত দিতে পারছেন না। হাত দিলেই তিনি প্রচণ্ড যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে যাচ্ছেন। তাঁর ডান পায়ের গোড়ালিতে একটা ফোঁড়ার কারণে সেই যন্ত্রণা আরো তীব্রতর হয়েছে। অথচ সরকারি চিকিৎসকরা দেশনেত্রীকে চিকিৎসা করছেন না। তাঁকে জরুরি ভিত্তিতে উন্নত চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন।’

বিএনপির এই নেতা আরো বলেন, ‘দেশবাসী খালেদা জিয়ার অসুস্থতা নিয়ে উৎকণ্ঠায় প্রহর গুনলেও স্বাস্থ্যের সঠিক অবস্থা জনগণের সামনে প্রকাশ করছে না সরকার। খালেদা জিয়ার রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিসের জন্য গঠিত মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান এখনো কোনো মতামত দিচ্ছেন না। অথচ এরই মধ্যে রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিসের তিন জন চিকিৎসক সদস্যের সমন্বয়ে বোর্ডের যে রিপোর্ট, সেটিও প্রকাশ করা হচ্ছে না। মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান তাঁর বোর্ডের অপর তিন জন সদস্যকে নিয়ে অদ্যাবধি কোনো বোর্ড মিটিং করেননি। মেডিকেল বোর্ডের চেয়ারম্যান কী সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, তা অন্য সদস্যদের জানাচ্ছেন না।’

রুহুল কবির রিজভী বলেন, ‘গতকাল বুধবার দেশনেত্রীর সঙ্গে তাঁর ভাই-বোনরা সাক্ষাৎ করে গুরুতর অসুস্থতায় গভীর উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠা প্রকাশ করেছেন। দেশনেত্রী হাইলি অ্যাক্টিভ ডিফরমিং, রিউমেটয়েড আর্থ্রাইটিস, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস, হাইপারটেনশনসহ বিভিন্ন জটিল রোগে ভুগছেন। রোগের প্রয়োজনীয় যথাযথ চিকিৎসা ও পরিচর্যা না হওয়ার কারণে তাঁর হাত ও পায়ের ছোট ছোট জয়েন্টসহ বিভিন্ন জয়েন্ট ফুলে গেছে এবং তাতে তীব্র ব্যথা অনুভূত হচ্ছে। উঠতে-বসতে পারছেন না। জয়েন্টগুলো শক্ত হয়ে যাচ্ছে, যা অচিরেই স্থায়ী রূপ ধারণ করতে পারে। তাঁর হাত-পায়ের আঙুল বেঁকে যাচ্ছে। নিজ হাতে কিছু খেতেও পারছেন না।’

খালেদা জিয়ার জটিল ও গুরুতর রোগগুলো নিয়ে সরকারের মন্ত্রী ও নেতারা উপহাস করছেন অভিযোগ করে রিজভী বলেন, ‘জনগণের সেন্টিমেন্ট তোয়াক্কা করে না বলেই সরকার দেশের একজন জনপ্রিয় নেত্রীর জীবনকে নিঃশেষ করে দেওয়ার সব আয়োজনে ব্যস্ত রয়েছে।’

বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, ‘খালেদা জিয়া বাংলাদেশের প্রতিটি দেশপ্রেমিক জাতীয়তাবাদী শক্তির ঐক্যের প্রতীক, সাহস ও প্রেরণার প্রতীক। সরকারের এই টালবাহানায় খালেদা জিয়ার কোনো ক্ষতি হলে এর পরিণতি ভালো হবে না। এখনো সময় আছে, বিএনপি নেত্রীর বিরুদ্ধে, বিএনপির বিরুদ্ধে চক্রান্ত ও ষড়যন্ত্র বন্ধ করুন।’