রোহিঙ্গা সংকট : মিয়ানমারের ওপর আরো চাপ প্রয়োগ চায় ফ্রান্স
সফররত ফ্রান্সের সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের মন্ত্রী ফ্লোরেন্স পারলি রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে ফেরত নিয়ে যাওয়ায় মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক চাপ বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করেছেন।
ফ্লোরেন্স পারলি আজ সোমবার দুপুরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে তাঁর তেজগাঁওস্থ কার্যালয়ে (পিএমও) সৌজন্য সাক্ষাৎকালে আরো বলেন, তাঁর দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রতি সমর্থন অব্যাহত রাখবে।
‘আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উচিত মিয়ানমারের ওপর আরো চাপ সৃষ্টি করা, যাতে, তারা বাংলাদেশ থেকে নিজেদের রোহিঙ্গা নাগরিকদের দেশে ফিরিয়ে নেয়’, প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব ইহসানুল করিম বৈঠকের পর সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে ফ্রান্সের মন্ত্রীর এই বক্তব্য উদ্ধৃত করেন।
প্রেস সচিব বলেন, রোহিঙ্গাদেরকে বাংলাদেশে আশ্রয়দানসহ বিভিন্ন সহায়তা দেওয়ায় সরকারের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন ফ্লোরেন্স পারলি।
বাংলাদেশের সঙ্গে ফ্রান্সের বিভিন্ন ইস্যুতে মতৈক্য থাকার উল্লেখ করে ফ্রান্সের মন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক ফোরামে বাংলাদেশ ও ফ্রান্স বিভিন্ন ক্ষেত্রে বিশেষ করে জাতিসংঘ শান্তিরক্ষা মিশনে একযোগে কাজ করছে ।
ফ্লোরেন্স পারলি লালমনিরহাটের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এভিয়েশন অ্যান্ড অ্যারোস্পেস ইউনিভার্সিটিতে শিক্ষার্থীদের প্রশিক্ষণ প্রদানের বিষয়ে তাঁর দেশের আগ্রহ ব্যক্ত করেন।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ ও ফ্রান্সের মধ্যে বিদ্যমান সামরিক সহযোগিতায় সন্তোষ প্রকাশ করেন এবং এ ক্ষেত্রে আরো সহযোগিতা জোরদারে গুরুত্বারোপ করেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা এই খাতে ফ্রান্সের সঙ্গে আরো সহযোগিতা দেখতে চাই।’
শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার প্রতিরক্ষা খাতে প্রশিক্ষণের ওপর সর্বাধিক গুরুত্বারোপ করেছে।
নিজ দেশের কোম্পানি থ্যালেস অ্যালানিয়া স্পেস স্থাপিত বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১-এর প্রসঙ্গে ফ্রান্সের মন্ত্রী বলেন, এটি প্রত্যাশা অনুযায়ী কাজ করছে।
জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট ১-এর লাইফটাইম ১৫ বছর এবং তার সরকার বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-২ উৎক্ষেপণ করবে।
আলোচনাকালে করোনাভাইরাসের প্রসঙ্গ উঠলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে ইতালি ফেরত দুজনসহ মোট তিনজনকে করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত চিহ্নিত করা হয়েছে।
তাদের এরইমধ্যে হাসপাতালে আলাদাভাবে (কোয়ারেন্টাইনে) রেখে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে বলেও জানান শেখ হাসিনা।
এ সময় ফ্লোরেন্স পারলিও ফ্রান্সে করোনা ভাইরাসের পরিস্থিতির কথা তুলে ধরেন।
জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উদযাপন প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, করোনাভাইরাসের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি এবং জনস্বাস্থ্যের কথা বিবেচনা করে এটি ভিন্ন আঙ্গিকে উদযাপন করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে ফ্রান্সের সরকার, জনগণ এবং আঁন্দ্রে মাঁরলোর মতো নেতৃস্থানীয় বুদ্ধিজীবীদের সমর্থনের কথা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্মরণ করেন।
প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব ড. আহমদ কায়কাউস, প্রতিরক্ষা সচিব আব্দুল্লাহ আল মহসিন চৌধুরী, সশস্ত্র বাহিনী বিভাগের প্রিন্সিপাল স্টাফ অফিসার (পিএসও) লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. মাহফুজুর রহমান এবং বাংলাদেশে নিযুক্ত ফ্রান্সের রাষ্ট্রদূত জ্যাঁ মারিও সুশোও এ সময় উপস্থিত ছিলেন।
এ ছাড়া ফরাসি মন্ত্রীর কূটনৈতিক উপদেষ্টা জেভিয়ার চ্যাটেল, সামরিক উপদেষ্টা ক্যাপ্টেন ক্রিস্টোফার ক্লুজেল এবং শিল্প উপদেষ্টা হার্ভে গ্র্যানজিঁয়ে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন।