রোহিঙ্গা সংকট মোকাবিলায় আন্তর্জাতিক সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান 

Looks like you've blocked notifications!
বাংলাদেশের সমুদ্র উপকূলের শরণার্থী শিবিরগুলোতে মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত লাখ লাখ রোহিঙ্গা নাগরিক বসবাস করছে। ফাইল ছবি

বাংলাদেশে রোহিঙ্গা শরণার্থী সংকটের চার বছর হতে চলল। মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলো সম্মিলিতভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই সংকট মোকাবিলায় সহযোগিতা বাড়ানোর আহ্বান জানিয়েছে।

আজ মঙ্গলবার মানবিক সহায়তাকারী সংস্থাগুলোর যৌথ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ আহ্বান জানায়।

আজ বাংলাদেশ সরকার এবং মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো রোহিঙ্গাদের মানবিক সংকটের জন্য প্রণীত ২০২১ সালের যৌথ সাড়াদান পরিকল্পনা (জেআরপি) প্রকাশ করেছে। এই পরিকল্পনায় আট লাখ ৮০ হাজারেরও বেশি রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং কক্সবাজারের উখিয়া ও টেকনাফ উপজেলার চার লাখ ৭২ হাজার ঝুঁকিপূর্ণ স্থানীয় জনগোষ্ঠীর চাহিদা পূরণের জন্য ৯৪ দশমকি ৩ কোটি মার্কিন ডলারের আবেদন করা হয়েছে। এবারের জেআরপিতে সব মিলিয়ে প্রায় ১৪ লাখ মানুষের সুরক্ষা এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারিত হয়েছে, যার অর্ধেকই নারী ও শিশু।

আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে ২০২১ সালের জেআরপির জন্য এখন পর্যন্ত প্রায় ৩৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার তহবিলের প্রতিশ্রুতি পাওয়া গেছে। যা মোট আবেদনের ৩৫ শতাংশের বেশি।

এবারের জেআরপি বাংলাদেশ সরকার এবং জাতিসংঘের সংস্থা ও এনজিওসহ ১৩৪টি অংশীদারের প্রচেষ্টাকে সংযুক্ত করেছে। অংশীদারদের মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি বাংলাদেশি এনজিও রয়েছে। এই আবেদনে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা জোরদার করা, মানসম্পন্ন জীবনরক্ষাকারী সহায়তা প্রদান, ক্যাম্পের আশপাশের জনগোষ্ঠীর জীবনমান উন্নয়নের পাশাপাশি মিয়ানমারে পরিস্থিতি অনুকূল হলে নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ স্থায়ী প্রত্যাবাসনের লক্ষ্যে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের দক্ষতা ও সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়তা করার ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

অনেক প্রতিবেদনে দেখা গেছে, স্থানীয় জনগোষ্ঠীর গুরুত্বপূর্ণ চাহিদাগুলোর মধ্যে রয়েছে জরুরি স্বাস্থ্যসেবা এবং খাদ্য ও নগদ অর্থের সরবরাহ। এ ছাড়া কোভিড-১৯ এবং এর বিস্তারের ফলে স্থানীয় বাংলাদেশি জনগোষ্ঠীর খাদ্যনিরাপত্তা ও জীবনমানের ওপর যে প্রভাব পড়েছে সে সংক্রান্ত বিষয়গুলোও উঠে এসেছে। কোভিড-১৯ মহামারি শরণার্থী ও বাংলাদেশি উভয় জনগোষ্ঠীর ঝুঁকি বাড়িয়ে দিয়েছে।

কক্সবাজারের একটি ক্যাম্পে অবস্থানরত ৩০ বছর বয়সী হোসনে আরা বলেন, মিয়ানমারে অনেক ভোগান্তির পর আমরা এখন ক্যাম্পে থাকছি। কিন্তু এই জায়গাটি খুবই ঘিঞ্জি এবং আরও অনেক স্বাস্থ্যসহায়তা প্রয়োজন তিনি আরও বলেন, আমার বাচ্চাদের জন্য খাবার, পোশাক, ওষুধ এবং প্রয়োজনীয় জিনিস ব্যবস্থা করা বেশ কঠিন। 

ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপের (আইএসসিজি) সিনিয়র কো-অর্ডিনেটর নিকোল এপটিং বলেন, এ বছরের আবেদনের ৪০ শতাংশেরও বেশি অর্থ প্রয়োজন হবে সবচেয়ে জরুরি ও মৌলিক দুটি চাহিদা অর্থাৎ খাদ্যনিরাপত্তা এবং স্বাস্থ্যসেবা খাতে। এ ছাড়া নিরাপদ পানি, স্যানিটেশন, হাইজিন ও শিক্ষার পাশাপাশি বিশেষ করে নারী ও শিশুদের প্রজনন স্বাস্থ্যের বিষয়টি গুরুত্ব পেয়েছে। রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সুরক্ষা সংশ্লিষ্ট উদ্বেগগুলো দূর করাও অগ্রাধিকার তালিকায় রয়েছে। 

নিকোল এপটিং আরও বলেন, বিগত বছরগুলোতে রোহিঙ্গা শরণার্থী এবং স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবনরক্ষায় জরুরি সেবাসমূহ যথাযথভাবে পৌঁছে দিতে বাংলাদেশ সরকারের নেতৃত্ব এবং আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহযোগিতা বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ ছিল। ২০১৭ সালে সংকটের শুরু থেকে বিগত চার বছরে জেআরপির মাধ্যমে ২৩২ কোটি মার্কিন ডলার তহবিলের প্রতিশ্রুতি এসেছে। যা প্রয়োজনীয় চাহিদার ৬৯ শতাংশ। 

আইএসসিজির সিনিয়র এ কো-অর্ডিনেটর বলেন,  পরিস্থিতি অনুকূল এবং নিরাপদ থাকলে রোহিঙ্গা শরণার্থীরা মিয়ানমারে ফিরে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী। স্বেচ্ছায়, নিরাপদ, মর্যাদাপূর্ণ, স্থায়ী প্রত্যাবাসন না হওয়া পর্যন্ত, মানবিক সহায়তা প্রদানকারী সংস্থাগুলো শরণার্থীদের প্রতি সহানুভূতি ও সংহতি প্রদর্শনের আহ্বান জানাচ্ছে। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে বাংলাদেশ সরকার এবং জনগণের প্রতি সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আবেদন জানাচ্ছে।

উল্লেখ্য, ইন্টার সেক্টর কো-অর্ডিনেশন গ্রুপ (আইএসসিজি) বাংলাদেশের কক্সবাজারে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের সাড়াদানের জন্য সেক্টরভিত্তিক সমন্বয় করছে। আইএসসিজি ক্ষতিগ্রস্ত জনগণকে সময়োপযোগী, সমন্বিত, চাহিদা-ভিত্তিক মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করার জন্য একটি প্লাটফর্ম। আইএসসিজি বর্তমানে ১০টি সক্রিয় সেক্টরের মাধ্যমে তা সমন্বয় করছে। শিক্ষা, জরুরি টেলিযোগাযোগ, খাদ্যনিরাপত্তা, স্বাস্থ্য, লজিস্টিক, পুষ্টি, সুরক্ষা, আশ্রয়/এনএফআই, সাইট ম্যানেজমেন্ট এবং সাইট ডেভেলপমেন্ট এবং ওয়াশ।