কক্সবাজারে গৃহবধূ ধর্ষণ মামলা

‘র‍্যাব থাকাকালেই ভুক্তভোগীর স্বামীর কাছে ফোনে মুক্তিপণ চান আশিকুল’

Looks like you've blocked notifications!
কক্সবাজারে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলামকে মাদারীপুর থেকে রোববার রাতে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব। ছবি : ফোকাস বাংলা

কক্সবাজারে বেড়াতে গিয়ে গৃহবধূকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণ মামলার প্রধান আসামি আশিকুল ইসলামকে মাদারীপুর থেকে গতকাল রোববার রাতে গ্রেপ্তার করেছে র‍্যাব। র‍্যাবের পক্ষ থেকে আজ সোমবার সকালে জানানো হয়, ঘটনার দিন যখন র‍্যাব ভুক্তভোগী ওই নারীর স্বামীকে সহযোগিতার জন্য যায়, তখন র‍্যাব থাকাকালেই ওই নারীর স্বামীকে ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করেন আশিকুল ইসলাম। এরপর থেকেই ভুক্তভোগী ওই নারীকে খুঁজতে থাকে র‍্যাব।

রাজধানীতে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আজ এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান র‌্যাবের আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, ঘটনার পর আশিক কক্সবাজার থেকে মাদারীপুরে গিয়ে আত্মগোপন করেন। গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে গতকাল রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়। আশিকের বিরুদ্ধে চুরি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি ও ইয়াবা কারবারে জড়িত থাকার অভিযোগে অন্তত ১৭টি মামলা রয়েছে।

র‌্যাবের কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, ‘র‍্যাব যখন সহযোগিতা করার জন্য ভুক্তভোগীর স্বামীর কাছে যায়, তখনও র‍্যাব থাকাকালে আশিক ফোন দিয়ে মুক্তিপণ দাবি করেন। তখন থেকেই বিভিন্ন হোটেলে আমরা ভুক্তভোগীকে খুঁজতে থাকি। এর পর ভুক্তভোগী নিজেই আটকে থাকা কক্ষ থেকে কোনোভাবে বের হয়ে তাঁর স্বামীকে অন্য একটি নম্বর থেকে ফোন করেন। পরে র‍্যাব ঘটনাস্থলে যায় এবং পরে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হয়।’

এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে আজ সোমবার র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হয়, বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ভুক্তভোগী ওই নারী স্বামী-সন্তানসহ কক্সবাজারের একটি হোটেলে অবস্থান করছিলেন। তাঁদের সঙ্গে আট মাস বয়সের একটি শিশু সন্তান ছিল। জন্মগতভাবে শিশুটির হার্টে ছিদ্র থাকায় তার চিকিৎসায় ১০ লাখ টাকার প্রয়োজন ছিল। শিশুটির চিকিৎসার অর্থ জোগারের আশায় স্বামীসহ কক্সবাজারে অবস্থান করছিল পরিবারটি। তারা বিত্তবান পর্যটকদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য চাইতেন। এ সময় তিনি অপহরণ ও ধর্ষণের শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এ ঘটনার পর ভুক্তভোগীর স্বামী র‍্যাব-১৫-এর কাছে তাঁর স্ত্রীকে উদ্ধারের জন্য সহায়তা চান। এরপর র‍্যাব তাঁকে নিয়ে ওই নারীকে উদ্ধারের জন্য বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায় এবং একপর্যায়ে তিনি উদ্ধার হন। এরই ধারাবাহিকতায় গত ২৩ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার রাতে জিম্মি করার সহযোগিতার অভিযোগে জিয়া গেস্ট ইন হোটেলের ম্যানেজার রিয়াজ উদ্দিন ছোটনকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

এর মধ্যে ধর্ষণের অভিযোগটি সংবাদমাধ্যমে গুরুত্বসহ প্রচারের পর ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়। ওই হোটেলের সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ ও বিশ্লেষণ করে আসামিদের শনাক্ত ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার লক্ষ্যে গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানো হয়।

এরই ধারাবাহিকতায় গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে র‍্যাব সদর দপ্তর গোয়েন্দা শাখা, র‍্যাব-৮ ও ১৫-এর অভিযানে গতকাল রোববার রাতে মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড এলাকায় অভিযান চালিয়ে মামলার প্রধান আসামি মো. আশিকুল ইসলামকে গ্রেপ্তার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে ধর্ষণের বিষয়টি স্বীকার করেন আশিকুল।

র‍্যাবের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গ্রেপ্তার হওয়া আশিকুল কক্সবাজার পর্যটক এলাকার একটি সংঘবদ্ধ অপরাধী চক্রের মূলহোতা। এ চক্রের সদস্য সংখ্যা ৩০ থেকে ৩৫ জন। আশিকুল ২০১২ সাল থেকে কক্সবাজার পর্যটক এলাকায় বিভিন্ন অপরাধের সঙ্গে যুক্ত। তিনি প্রথম বার ২০১৪ সালে অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন বলে জানান। তিনি এবং তাঁর সিন্ডিকেট পর্যটন এলাকা কক্সবাজারে চুরি, ছিনতাই, অপহরণ, জিম্মি, চাঁদাবাজি, জবরদখল, ডাকাতি ও মাদক ব্যবসাসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত। তিনি পর্যটন এলাকায় বিভিন্ন হোটেল ম্যানেজারের সঙ্গে যোগসাজসে পর্যটকদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করতেন।

র‍্যাবের দাবি, গ্রেপ্তার হওয়া আশিকুল আরও জানায়, তিনি এবং তাঁর সহযোগীরা ভুক্তভোগী ওই নারী ও তাঁর পরিবারের কাছ থেকে ৫০ হাজার টাকা দাবি করেছিলেন। কিন্তু, ওই নারী ও তাঁর পরিবার টাকা দিতে অস্বীকৃতি জানায়। এরপর লাবণী বিচ এলাকার রাস্তা থেকে ওই নারীকে অটোরিকশায় তুলে নিয়ে যান আসামিরা। এর পর আশিকুল ওই নারীকে ধর্ষণ করেন এবং জিয়া গেস্ট ইন হোটেলে আটকে রেখে তাঁর স্বামীর কাছ থেকে ৫০ হজার টাকা মুক্তিপণ দাবি করেন। এর পর ওই নারীকে হোটেলে আটকে রেখে আশিকুল বের হয়ে যান।

এর পর এ ঘটনাটি স্থানীয় পর্যায়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে জানাজানি হলে আশিকুল আত্মগোপনে চলে যান। এরপর বেশভূষা পরিবর্তন করে ঘটনার দুদিন পর কক্সবাজার থেকে একটি এসি বাসে করে ঢাকায় যান। পরে ঢাকা থেকে পটুয়াখালী যাওয়ার পথে তিনি মাদারীপুরের মোস্তাফাপুর বাসস্ট্যান্ড থেকে গ্রেপ্তার হন।

র‍্যাব বলছে, কক্সবাজারে আধিপত্য বিস্তারসহ বিভিন্ন রকম জবরদখল ও অবৈধ কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত আশিকুল। তিনি পর্যটন এলাকার সুগন্ধা নামক স্থানে জোর করে ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্ট কম টাকা দিয়ে ভাড়া নিয়ে ক্ষেত্রবিশেষে দ্বিগুণ ও তিনগুণ ভাড়া সংগ্রহ করেন এবং মূল মালিকদের বঞ্চিত করে থাকেন। তিনি বিভিন্ন ব্যক্তি-মালিকানাধীন জমি দখল এবং চাঁদা দাবি করে থাকেন। তাঁর চক্রের সদস্যেরা রাত্রিকালীন সি-বিচে আসা পর্যটকদের হেনস্তা, মোবাইল ছিনতাই, ফাঁদে ফেলা ও নিয়মিত ইভটিজিং করতেন। পাশাপাশি হোটেল-মোটেল জোনে সুযোগ বুঝে বিভিন্ন পর্যটকদের ফাঁদে ফেলে ব্ল্যাকমেইল করে অর্থ আদায় করতেন। তাঁর নামে এরই মধ্যে কক্সবাজার সদর থানায় অস্ত্র, মাদক, নারী নির্যাতন ও চাঁদাবাজিসহ ১২টি মামলা চলমান রয়েছে। তিনি পাঁচ বার পুলিশের কাছে গ্রেপ্তার হন এবং দীর্ঘদিন কারাভোগও করেছেন। তাঁর বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।