‘লকডাউন আর ঈদের ছুটিতে’ ডেঙ্গুর বাড়াবাড়ি : মন্ত্রী
গত বছরের তুলনায় এ বছর ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব বৃদ্ধির কারণ সম্পর্কে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী মো. তাজুল ইসলাম বলেছেন, ‘জলবায়ুর প্রভাব থাকলেও সবচেয়ে বড় বিষয়টি হচ্ছে- করোনার কারণে লকডাউন এবং ঈদের ছুটি। এ সময় অনেকেই বাসা বাড়ি ছেড়ে নিজ এলাকায় যাওয়ায় এবং নির্মাণশ্রমিকরা ছুটিতে থাকায় এডিস মশার প্রভাব কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে। মে-জুন থেকে আরম্ভ করে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর পর্যন্ত এডিস মশার প্রকোপ বেশি থাকে। কারণ এ সময় থেমে থেমে বৃষ্টি হয়।’
আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর হোটেল সোনারগাঁওয়ে ‘ইইউ সাপোর্ট টু হেলথ অ্যান্ড নিউট্রিশন টু দি পুওর ইন আরবান বাংলাদেশ’ প্রকল্পের সমাপনী কর্মশালায় প্রধান অতিথির বক্তব্য শেষে সাংবাদিকদের মন্ত্রী এ কথা বলেন।
এ সময় মন্ত্রী জানান, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার রিপোর্ট অনুযায়ী, সারা বিশ্বে প্রতি বছর ১০ থেকে ৪০ কোটি পর্যন্ত মানুষ ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়। সাত লাখের বেশি মানুষ মারা যায়। ২০১৯ সালে আমাদের দেশে মারাত্মক আকার ধারণ করলেও ২০২০ সালে এটিকে আমরা নিয়ন্ত্রণে রাখতে সক্ষম হয়েছিলাম।
নগরবাসীর সচেতনতা, সিটি করপোরেশন ও মন্ত্রণালয়ের সর্বাত্মক কার্যক্রমের ফলে আগামী এক মাসের মধ্যেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে বলে জানান মন্ত্রী।
তাজুল ইসলাম বলেন, সিটি করপোরেশনের মেয়র ও কাউন্সিলর জনগণকে সঙ্গে নিয়ে নিবিড়ভাবে কাজ করছে। সকাল-বিকেল নিয়মিত স্প্রে করা হচ্ছে। কিভাবে এডিস মশার প্রজনন ধ্বংস করা যাবে সেসব বিষয়ে মানুষকে ভিন্নভাবে সচেতন করা হয়েছে। আমি আশা করি, মাসখানেকের মধ্যেই এডিস মশা একটি সহনশীল জায়গায় চলে আসবে। তিনি জানান, ডেঙ্গু একটি গ্লোবাল চ্যালেঞ্জ। শুধু বাংলাদেশই এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করছে না। এশিয়াসহ বিশ্বের অনেক দেশেই ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব মোকাবিলা করছে। ডেঙ্গু মোকাবিলায় যেসব দেশ সফলতা পেয়েছে তাদের অভিজ্ঞতা এবং আমাদের সমন্বিত প্রচেষ্টায় এই চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করা সম্ভব হবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।
এর আগে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মন্ত্রী বলেন, পৌরসভাগুলোকে শক্তিশালী করতে কাজ করছে সরকার। এরই মধ্যে কিছু পৌরসভায় প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া প্রতিষ্ঠানগুলোর কিছু জনবল সংকট রয়েছে। আগামী দুই বছরের মধ্যে পৌরসভাগুলি তাদের সংকট কাটিয়ে সক্ষমতা অর্জন করবে।
তাজুল ইসলাম আরও বলেন, গ্রামীণ এলাকার তুলনায় নগর এলাকায় স্বাস্থ্যসেবা কিছুটা ভালো তবে এটি সন্তোষজনক অবস্থায় নেই। পৌরসভাগুলোতে স্বাস্থ্য সেবায় পর্যাপ্ত জনবল নেই উল্লেখ করে তিনি বলেন, এই প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি করতে হবে যাতে করে তারা নিজেরা নাগরিক সেবা প্রদান করতে পারে।
স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মরণ কুমার চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্য শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ বিভাগের সচিব মো. আলী নূর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তিবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মেজবাহ উদ্দিন, প্রকল্প পরিচালক ও অতিরিক্ত সচিব মুস্তাকিম বিল্লাহ ফারুকী, বাংলাদেশে ইইউ প্রতিনিধি মি. মারিজিও চিয়ান বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন।
এই প্রকল্পের আওতায় ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃক সরাসরি নির্বাচিত এনজিওর মাধ্যমে চারটি সিটি করপোরেশন, ১০টি পৌরসভা এলাকায় পাঁচ লাখ তিন হাজার ৬২৭টি পরিবারকে বিনামূল্যে ভাউচার কার্ডের মাধ্যমে স্বাস্থ্যসেবা প্রদান করা হয়।
এ ছাড়া, দক্ষতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে পৌরসভার তিন হাজার ৬১৮ জন নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি এবং পৌরসভা ও উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের এক হাজার ৮০১ জন কর্মকর্তাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।