লক্ষ্মীপুরে সহস্রাধিক বসতঘর তছনছ, ভেসে গেছে গরু-মহিষ-নৌকা
বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড় সিত্রাংয়ের প্রভাবে লক্ষ্মীপুরের মেঘনা নদীতে প্রায় ৫ ফুট জলোচ্ছ্বাস ও প্রচণ্ড বেগে বাতাস বয়ে গেছে। এতে জেলা শহরসহ মেঘনা উপকূলে গাছ পড়ে সহস্রাধিক বসতঘর ভেঙে গেছে। জলোচ্ছ্বাসে রাস্তা ভেঙে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ২৪০টি গরু ও ৮টি মহিষ ভেসে গেছে। আমন ফসল ও শীতকালীন শাকসবজির ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। কয়েকটি নৌকাও ভেসে যাওয়ার খবর পাওয়া গেছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সঙ্গে কথা বলে এসব জানা গেছে। প্রায় ৩৬ ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন ছিল লক্ষ্মীপুর।
তবে এসবের কোনো তথ্য নেই জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা এবং জেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তার কার্যালয়ে। কতদিনে তারা তথ্যগুলো সংগ্রহ করতে পারবেন তাও বলতে পারননি কার্যালয়ের কেউ।
জানা গেছে, বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন লক্ষ্মীপুরে মোবাইল নেটওয়ার্কে বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। প্রায় ২০ ঘণ্টা মোবাইল নেটওয়ার্ক ছিল না। বিদ্যুৎ নির্ভর অটোরিকশা চলাচল বন্ধ ছিল। ব্যবসায়ীদেরকে বিপর্যয়ে পড়তে হয়েছে।
মঙ্গলবার রামগতি, কমলনগর ও সদর উপজেলার কয়েকটি এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাবে সৃষ্ট বাতাসের কারণে কয়েকশ ঘর ভেঙে গেছে। এরমধ্যে গাছ ভেঙে পড়ায় অধিকাংশ ঘর ভেঙে যায়। রাত ১টার দিকে ঘূর্ণিঝড়ের প্রভাব কমে গেলেও উপকূলে ৪-৫ ফুটের জলোচ্ছ্বাস হয়েছে বলে স্থানীয়রা জানিয়েছে। কমলনগরের মতিরহাট বাজারের ওপর প্রায় ৪ ফুট পানি ছিল। বাঁধের ওপর দিয়ে জলোচ্ছ্বাসের পানি বাজারে ঢুকে পড়ে। এ জলোচ্ছ্বাসে কমলনগরের বলিরপোল-নাসিরগঞ্জ সড়ক, নবীগঞ্জ-চৌধুরী বাজার সড়ক, তোরাবগঞ্জ-মতিরহাট সড়কসহ রামগতি-কমলনগরের শতাধিক সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চলাচলের অনুপোযোগী হয়ে পড়েছে সড়কগুলো। কমলনগরের কাদিরপণ্ডিতের হাট এলাকার শাহ আলমের নৌকাসহ ৫ জেলের নৌকা জলোচ্ছ্বাসে ভেসে গেছে। এতে তারা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখিন হয়েছেন। সকাল থেকে বিভিন্ন এলাকা নৌকাগুলো খুঁজে পাননি তারা। জেলা শহরের বিভিন্ন স্থানে গাছ ভেঙে পড়ে চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।
সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ ইউনিয়ন সবজিচাষী মো. জাহের ও আবদুল করিম জানিয়েছেন, তাদের প্রায় ৭ একর জমির টমেটো ও পেঁপে গাছ ভেঙে গেছে। ঋণ নিয়ে তারা সবজি চাষ করেছিলেন।
কমলনগরের চর মার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ইউছুফ আলী জানান, তার ইউনিয়নের ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। শতাধিক ঘর ভেঙে গেছে।
চর কালকিনি ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ছায়েফ উল্লাহ জানান, গাছপালা পড়ে ও বাতাসে দুই শতাধিক ঘর ভেঙে গেছে। সহস্রাধিক গাছ বাতাসে উপড়ে পড়েছে।
লক্ষ্মীপুর বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের অভিযোগ কেন্দ্রে কর্মরত মো. সোহেল জানান, সদর উপজেলা জকসিন এলাকায় তাদের ৩৩ কেভি বোল্টের সংযোগ তারের টাওয়ার হেলে পড়েছে। নোয়াখালী থেকে ৪৫ কিলোমিটার এলাকায় বিভিন্ন স্থানে গাছ পড়ে তার ছিঁড়ে গেছে। রামগঞ্জ গ্রিড থেকে বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়ে লক্ষ্মীপুর শহরে সরবরাহ দেওয়া হয়েছে। খুব শিগগিরই পুরো শহরের বিদ্যুৎ সচল করা হবে।
লক্ষ্মীপুর পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন জানান, পল্লী বিদ্যুতের ৩৬৫টি খুঁটি ভেঙে গেছে। ৪৫০টি স্থানে তার ছিঁড়ে গেছে। এতে তাদের প্রায় ৫০ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মোহাম্মদ কামরুজ্জামান জানান, জোয়ারের পানিতে বিভিন্ন এলাকা থেকে ২৪০ মহিষ ও ৮টি গরু ভেসে গেছে। রাতে ঘূর্ণিঝড় শুরু হওয়ার আগে বিপুল সংখ্যক মানুষ আশ্রয়ণ কেন্দ্রে উপস্থিত হয়েছে। ঘূর্ণিঝড়ে কোন হতাহতের ঘটনা নেই।
জেলা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকর্তা ইউনুস মিয়া জানান, ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ বিকেল পর্যন্ত তারা নিরুপণ করতে পারেননি। তবে তারা ক্ষয়ক্ষতির পরিমাণ নির্ণয়ে কাজ করছেন।
লক্ষ্মীপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক ড. জাকির হোসেন জানান, ঝড়ে আমন ফসল ও সবজির ক্ষতি হয়েছে। তার পরিমাণ জানার জন্য তারা কাজ করছেন।