লটকন চাষে আগ্রহ বাড়ছে কুলিয়ারচরের চাষিদের
প্রচুর ক্রেতা চাহিদাসহ অল্প খরচ আর স্বল্প পরিশ্রমে লাভজনক হওয়ায় লটকন চাষে আগ্রহ বাড়ছে কিশোরগঞ্জের কুলিয়ারচর উপজেলার চাষিদের। কয়েক বছর আগেও পাশের জেলা নরসিংদীতে লটকনের চাষাবাদ হলেও, কুলিয়ারচরের চাষিদের মধ্যে এই সুস্বাদু ফলটির আবাদ নিয়ে তেমন কোনো আগ্রহই ছিল না এখানকার লোকজনের মধ্যে।
কিন্তু ব্যাপক ক্রেতা চাহিদা আর অনেক মুনাফা দেখে কয়েক বছর ধরে এখানকার চাষিরাও লটকনের আবাদ শুরু করে। স্থানীয় কৃষি বিভাগের পরামর্শ আর সহযোগিতায় লাভজনক এই ফলটি চাষ বর্তমানে এখানে বেড়েই চলছে।
বর্তমানে দেশের শহর-বন্দর আর গ্রাম-গঞ্জের সুস্বাদু আর মুখরোচক ফলের নাম লটকন। ছেলে-বুড়ো সবার কাছেই ফলটির ব্যাপক কদর। তাই এর বাজারদরও বেশ ভালো। ভিটামিন সি, ডি ও কার্বোহাইড্রেড যুক্ত পুষ্টিগুণে সমৃদ্ধ এ ফল। ফলে দিন দিন ভোক্তাদের মধ্যে এই ফলের সমাদর বেড়েই চলেছে। তাই এর বাজারের চাহিদা ব্যাপক। ফলন বিক্রিতে ভাবনা না থাকায় এবং বিক্রি করে ভালো মুনাফা হওয়ায় চাষিদের মধ্যে এই লটকন চাষে তাই আগ্রহ বেশি।
কুলিয়ারচর উপজেলার আব্দুল্লাহপুর ও সালুয়া ইউনিয়নে চলতি মৌসুমে লটকনের বাম্পার ফলন হয়েছে। এই দুটি ইউনিয়নজুড়ে প্রতিটি বাড়ির বসতভিটার আঙিনাসহ প্রতিটি বাগানের গাছ লটকনের হলুদ রঙে রঙিন হয়ে গেছে। পুরো এলাকায় এখন গাছ ভর্তি লটকন। থোকায় থোকায় ঝুলে থাকা পাকা পাকা লটকন সবার মন কাড়ছে।
লটকন চাষিরা জানায়, চলতি মৌসুমে এখানে লটকনের আবাদ বেশ ভালো হয়েছে। এ ছাড়া এখানকার লটকন অন্যান্য এলাকার লটকনের তুলনায় অনেক মিষ্টি হওয়ায় ব্যাপক ক্রেতা চাহিদা রয়েছে। লটকন চাষে তারা যে পরিমাণ লাভবান হয়, অন্য কোনো ফসলে এর ধারে কাছেও যেতে পারে না। তাই দিন দিন তারা লটকন চাষে আগ্রহী হয়ে উঠছে।
আব্দুল্লাহপুরের লটকন চাষি আবদুল খালেক মিয়া জানান, তাঁর এক বিঘা জমির লটকনের বাগানে এবার ভালো ফলন হয়েছে। তিনি এ পর্যন্ত চার লাখ টাকার লটকন বিক্রি করেছেন। এই লটকনের বাগানের টাকায় তাঁর সংসার চলে।
সিরাজ মিয়া জানান, তাঁর দেড় বিঘা জমির লটকন বাগান। লটকনের আবাদে তেমন কোনো পরিচর্যা করতে হয় না। এক বিঘা ধান চাষ করে ২০ মণের মতো ধান হয়। সেটি বিক্রি করে খরচ বাদে তেমন কিছুই থাকে না। আবার অনেক সময় প্রাকৃতিক অবস্থার কারণে ফসল নষ্ট হলে লোকসানও গুনতে হয়। অপরদিকে দুটি লটকন গাছের ফলন বিক্রি করেই বছরে ২০-৩০ হাজার টাকা কম করে হলেও আয় হয়।
অন্যদিকে মৌসুমী ফল লটকনের বেচা-কেনাকে কেন্দ্র করে প্রতিদিন কুলিয়ারচর বাজারে বসছে হাট। হাটে আশপাশের এলাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ও খুচরা ক্রেতা-বিক্রেতার আগমনে মুখর হয়ে ওঠে এই হাট। এই হাট থেকে লটকন কিনে স্থানীয় ও দূর-দূরান্তের ব্যবসায়ীরা রাজধানী ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করে মুনাফা করছে বলে জানায় তারা।
কুলিয়ারচরের আব্দুল গফুর বেপারি ও সালুয়ার পরাগ মিয়া জানান, এই এলাকার লটকন সুস্বাদু হওয়ায় দেশব্যাপী ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। তারা এখানকার চাষিদের কাছ থেকে লটকন কিনে ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে নিয়ে বিক্রি করেন। এতে তাদের ভালোই মুনাফা হয়। চলতি মৌসুমের শুরুতে ৮০-৯০ টাকা এবং বর্তমান ভরা মৌসুমে ৪০-৫০ টাকা কেজি দরে লটকন বিক্রি করেছেন বলেও জানান তাঁরা।
কুলিয়ারচর উপজেলা উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা আক্রাম হোসেন জানান, এখানকার লটকন অনেক মিষ্টি এবং কোয়ালিটি অনেক ভালো। লাভজনক এবং পরিচর্যা খরচ কম করতে হয় বলে এখানে লটকনের আবাদ বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাঁরা সব সময় চাষিদের পাশে থেকে পরামর্শসহ প্রয়োজনীয় সহযোগিতা করে থাকেন। ভিটামিন সি সমৃদ্ধ লটকন মুখ রুচিকারক ফল।
বিষমুক্ত ও করোনাকালীন ফল হিসেবে চাষিসহ ব্যবসায়ীরা বেশ লাভ হয়েছে জানিয়ে আক্রাম হোসেন আরো বলেন, এবার এখানকার লটকনের ফলন বেশ ভালো হয়েছে।