লালমনিরহাটে পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যা : চার আসামির জামিন আবেদন খারিজ
লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে ধর্ম অবমাননার অভিযোগ তুলে আবু ইউনুছ মো. সহিদুন্নবী জুয়েলকে (৪২) পিটিয়ে ও পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় চার আসামির জামিন আবেদন খারিজ করে দিয়েছেন হাইকোর্ট।
চার আসামি হচ্ছেন মো. আশরাফুল ইসলাম, মো. বাইজিদ বোস্তামি, মো. আবদুর রহিম ও মো. হেলাল উদ্দিন। এরা সবাই লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার বুড়িমারী বাজার এলাকার বাসিন্দা।
আজ রোববার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিম ও বিচারপতি মো. মোস্তাফিজুর রহমানের সমন্বয়ে গঠিত ভার্চুয়াল হাইকোর্ট বেঞ্চ শুনানি শেষে আসামিদের জামিন আবেদন খারিজ করেন। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানিতে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারোয়ার হোসেন বাপ্পী।
পুলিশ জানায়, সহিদুন্নবী জুয়েল গত বছরের ২৯ অক্টোবর বিকেলে সুলতান রুবায়াত সুমন নামের একজনকে সঙ্গে নিয়ে বুড়িমারী বেড়াতে আসেন। বিকেলে বুড়িমারী কেন্দ্রীয় জামে মসজিদে আসরের নামাজ আদায় করেন তাঁরা। নামাজ শেষে পাঠ করার জন্য মসজিদের সানসেটে রাখা কোরআন শরিফ নামাতে গিয়ে অসাবধানতাবশত কয়েকটি কোরআন ও হাদিসের বই তাঁর পায়ে পড়ে যায়। এ সময় কোরআন ও হাদিস বই তুলে চুম্বনও করেন জুয়েল। বিষয়টি নিয়ে তাঁর সঙ্গে মুয়াজ্জিনের কথাকাটাকাটি হয়। এরপর আশপাশের লোকজন ছুটে এসে সন্দেহবশত জুয়েল ও সুলতান রুবায়াত সুমনকে পাশে ইউনিয়ন পরিষদ ভবনের একটি কক্ষে আটকে রাখেন। খবর পেয়ে পাটগ্রাম উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউএনও, ওসি বুড়িমারী ইউনিয়ন পরিষদে যান।
সন্ধ্যায় পুরো বাজারে এবং পার্শ্ববর্তী গ্রামে গুজব ছড়িয়ে পড়ে যে, কোরআন অবমাননার দায়ে দুই যুবককে আটক করা হয়েছে। এ সময় উত্তেজিত হয়ে বিক্ষুব্ধ জনতা ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) ভবনের দরজা-জানালা ভেঙে প্রশাসনের কাছ থেকে জুয়েলকে ছিনিয়ে নিয়ে পিটিয়ে হত্যা করে। পরে লাশ টেনে পাটগ্রাম বুড়িমারী মহাসড়কে নিয়ে আগুনে পুড়িয়ে ছাই করে দেয় স্থানীয়রা। এ সময় বিক্ষুব্ধ জনতা মহাসড়কে আগুন জ্বালিয়ে অবরোধ করে বিক্ষোভ মিছিল করে।
এ ঘটনায় নিহত জুয়েলের চাচাতো ভাই সাইফুল আলম, পাটগ্রাম থানার উপপরিদর্শক (এসআই) শাহজাহান আলী ও বুড়িমারী ইউপি চেয়ারম্যান আবু সাঈদ নেওয়াজ নিশাত বাদী হয়ে পৃথক তিনটি মামলা দায়ের করেছেন।
এ ঘটনায় বিভিন্ন সময়ে ওই মসজিদের খাদেম ও মুয়াজ্জিনসহ প্রায় অর্ধশত ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয় এবং তাদের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। অপরদিকে এ ঘটনায় গঠিত জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটি ধর্ম বা কোরআন অবমাননার কোনো ঘটনা ঘটেনি বলে তাদের প্রতিবেদনে উল্লেখ করে।
এতে আরো বলা হয়, ‘লালমনিরহাটের বুড়িমারীতে গুজব ছড়িয়ে গণপিটুনি দিয়ে আবু ইউনুছ মো. সহিদুন্নবী জুয়েলকে হত্যা ও লাশ পোড়ানো হয়েছে। সেখানে কোরআন অবমাননার কোনো সত্যতা পাওয়া যায়নি।’
নিহত সহিদুন্নবী জুয়েল রংপুর শহরের শালবন মিস্ত্রীপাড়া এলাকার আবদুল ওয়াজেদ মিয়ার ছেলে। তিনি রংপুর ক্যান্টনমেন্ট পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের সাবেক লাইব্রেরিয়ান এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্র। গত বছর চাকরিচ্যুত হওয়ায় কিছুটা মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলেন তিনি।