লিবিয়ায় মানবপাচার : ভৈরবের এক আসামি পাঁচ দিনের রিমান্ডে

Looks like you've blocked notifications!
লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের হাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার ছয়জন নিহত ও চারজন আহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলার আসামি মো. বাহারুল আলম ওরফে বাচ্চু মিলিটারির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। ছবি : এনটিভি

লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের হাতে কিশোরগঞ্জের ভৈরব উপজেলার ছয়জন নিহত ও চারজন আহত হওয়ার ঘটনায় করা মামলার আসামি মো. বাহারুল আলম ওরফে বাচ্চু মিলিটারির পাঁচদিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেছেন আদালত। গতকাল সোমবার বিকেলে ২ নম্বর আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. রফিকুল বারী ভার্চুয়াল নিয়মে জামিন আবেদন শুনানি শেষে এ আদেশ দেন।

কোর্ট উপপরিদর্শক (এসআই ) মো. নূরুল ইসলাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডির অর্গানাইজ ক্রাইম বিভাগের পুলিশ পরিদর্শক মো. মিজানুর রহমান আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য সাতদিনের রিমান্ড আবেদন করেন। লিবিয়ায় মানবপাচারকারী চক্রের হাতে হতাহতের ঘটনায় সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের মো. মোবারক হোসেন বাদী হয়ে রোববার সন্ধ্যায় মামলাটি দায়ের করেন। বাদী মো. মোবারক হোসেন লিবিয়ায় নিহত সাদ্দাম হোসেন আকাশের (২৫) বড় ভাই।

ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর গ্রামের তানজিরুলকে প্রধান আসামি করে সাতজনের নাম উল্লেখসহ এবং অজ্ঞাতনামা আরো সাত-আটজনকে আসামি করে মামলাটি দায়ের হয়েছে। এজাহারভুক্ত আসামিদের বিরুদ্ধে প্রলুব্ধ ও প্রতারণার মাধ্যমে মানবপাচার করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে নিহতদের ইতালি পাঠানোর নামে ফাঁদে ফেলে লিবিয়ায় অপহরণ পূর্বক হত্যা ও আহত করার অভিযোগ আনা হয়। মো. বাহারুল আলম ওরফে বাচ্চু মিলিটারি এজাহারভুক্ত দুই নম্বর আসামি।

মামলার এজাহারে বলা হয়, নিহত ও আহতরা স্থানীয় দালাল তানজিরুলসহ অন্যান্য দালালের মাধ্যমে ইতালি যাওয়ার উদ্দেশে লিবিয়া গিয়েছিলেন। তাঁরা পরিবারের ভাগ্য পরিবর্তন ও সংসারের সচ্ছলতা আনতে বাড়িঘর, জমি-জমা বিক্রিসহ ধারদেনা করে চার-পাঁচ লাখ টাকা দালালদের দিয়ে লিবিয়ায় যান। কিন্তু ইতালি না পাঠিয়ে লিবিয়া পর্যন্ত নিয়ে তাদেরকে অপহরণপূর্বক জিম্মি করে এবং বাংলাদেশে স্বজনদের কাছে মুক্তিপণ আদায়ের জন্য নির্যাতনের একপর্যায়ে গত ২৮ মে মানবপাচারকারী ও তাদের সহযোগীদের গুলিতে নিহত ও আহত হয়।

মামলার আসামিরা হলেন ভৈরব উপজেলার শ্রীনগর পূর্বপাড়া গ্রামের তানজিরুল ওরফে তানজিদ, তার বড় ভাই মো. বাহারুল আলম ওরফে বাচ্চু মিলিটারি, তানজিরুলের ভাতিজা নাজমুল, মৌটুপি গ্রামের জবুর আলী, লক্ষ্মীপুর গ্রামের জাফর, শম্ভুপুর গ্রামের স্বপন ও গোছামারা গ্রামের মিন্টু মিয়া।

গত ২৮ মে ২৬ বাংলাদেশিসহ ৩০ অভিবাসী শ্রমিককে গুলি করে হত্যা করে মানবপাচারকারী চক্রের এক সদস্য ও তাদের সহযোগীরা। নিহত বাকি চারজন আফ্রিকান। আহত হয়েছেন আরো ১১ বাংলাদেশি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সহ বিভিন্ন সূত্রে পাওয়া খবর অনুযায়ী ভৈরব থেকে যাওয়া ছয় নিহতের মধ্যে রয়েছেন উপজেলার সাদেকপুর ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামের সাদ্দাম হোসেন আকাশ (২৫), একই ইউনিয়নের মৌটুপি খালপাড়া গ্রামের সৌরভ আহমেদ সোহাগ (১৯), শিবপুর ইউনিয়নের মোহাম্মদ আলী (২০), শ্রীনগর ইউনিয়নের সাকিব মিয়া (২২) ও পৌর এলাকার ঋষিপাড়ার রাজন চন্দ্র ঋষি (২৫)।

ভৈরব থানার পরিদর্শক (তদন্ত) বাহালুল আলম খান বলেন, ‘অনুসন্ধান করে তালিকায় থাকা ভৈরবের পাঁচজনের পরিচয়ের ব্যাপারে আমরা নিশ্চিত হতে পেরেছি। তবে তালিকায় থাকা সাকিল নামের এক ব্যক্তির নামপরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়নি।’

এ ছাড়া আহত চারজনের মধ্যে রয়েছেন ভৈরবের কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের আকবরনগর গ্রামের মাহাবুব মিয়া (২৬), শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর গ্রামের জানু মিয়া (২৪), একই গ্রামের মামুন মিয়া (২১) ও সাদ্দাম মিয়া (২৬)।

আসামিপক্ষে অ্যাডভোকেট মোশতাক হোসেন শুনানি করেন।