শত কোটি টাকা আত্মসাৎ : কর্ণফুলী মাল্টিপারপাসের ১০ জন গ্রেপ্তার

Looks like you've blocked notifications!

অধিক মুনাফার প্রলোভন দেখিয়ে কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড প্রতারণার মাধ্যমে গ্রাহকদের কাছ থেকে শত কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে জানিয়েছে র‌্যাব। এ অভিযোগে গতকাল সোমবার দিবাগত রাত থেকে আজ মঙ্গলবার সকাল পর্যন্ত রাজধানীর মিরপুর থেকে ১০ জনকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-৪।

আজ দুপুরে কারওয়ান বাজারে র‍্যাবের মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে র‌্যাব-৪-এর অধিনায়ক ও অতিরিক্ত ডিআইজি মোজাম্মেল হক এ কথা জানান।

মোজাম্মেল হক বলেন, মিরপুরের ১১ নম্বর সেকশনের নান্নু সুপার মাকের্টে অভিযান চালিয়ে কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের চেয়ারম্যানের অন্যতম সহযোগী এবং প্রকল্প পরিচালক মো. শাকিল আহম্মেদসহ (৩৩) ১০ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। অভিযানকালে সভাপতি জসিমসহ সমিতির কার্যকরী কমিটির অন্য সদস্যরা পালিয়ে যান।

শাকিল ছাড়া গ্রেপ্তারকৃতরা হলেন চাঁন মিয়া (৩৮), এ কে আজাদ (৩৫), মো. রেজাউল (২২), তাজুল ইসলাম (৩১), শাহাবুদ্দিন খাঁন (২৮), আব্দুস ছাত্তার (৩৭), মাসুম বিল্লা (২৯), টিটু মিয়া (২৮) ও আতিকুর রহমান (২৮)। এ সময় প্রতারণায় ব্যবহৃত ১৭টি মুদারাবা সঞ্চয়ী হিসাব বই, ২৬টি চেক বই, দুটি ডিপোজিট বই, তিনটি সিল, ১২০টি ডিপিএস বই, একটি রেজিস্ট্রার বই, একটি নোটবুক, একটি স্যালারি শিট, ৩০টি জীবন-বৃত্তান্ত, পাঁচটি ক্যালেন্ডার, আট পাতা ডিপিএসের মাসিক হিসাব বিবরণী, তিনটি পাসপোর্ট, একটি ডিভিআর মেশিন, ভুক্তভোগীদের অভিযোগ কপি জব্দ করা হয়।

মোজাম্মেল হক বলেন, ‘প্রতারণার নতুন নতুন কৌশল ব্যবহার করে সাধারণ জনগণকে বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে এক শ্রেণির পেশাদার প্রতারক চক্র। সম্প্রতি মাল্টিলেভেল মার্কেটিং (এমএলএম), ই-কমার্স, সমবায় সমিতি, এনজিও, অনলাইন ব্যবসার মাধ্যমে অসংখ্য মানুষকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলে সর্বস্বান্ত করার বেশ কিছু অভিযোগ পেয়েছে র‌্যাব। এসব প্রতারকদের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বেশকিছু সফল অভিযানও পরিচালনা করা হয়েছে। পলাতক আসামি জসিম উদ্দিনের বাড়ি মুন্সীগঞ্জ। তিনি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অনার্স পাস করেন।  তার দুই স্ত্রী ও দুই ছেলে সন্তান রয়েছে। আগে একটি ইন্সুরেন্স কোম্পানিতে রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

মোজাম্মেল হক আরও বলেন, ২০০৩ সালে জসিম অল্প সময়ে অধিক মুনাফা লাভের আশায় কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেড প্রতিষ্ঠা করে। কিন্তু, সমবায় অধিদপ্তরের নিবন্ধন লাভ করে ২০০৬ সালে এবং ২০১৩ সালে সমিতিটির পুনর্নিবন্ধন হয়। প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী ২০১৮/২০১৯ সালের তাদের মোট সদস্য সংখ্যা ৫৩৭ জন। কিন্তু, প্রকৃতপক্ষে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ২৫-৩০ হাজার সদস্য বা গ্রাহক সংগ্রহ করেছে। তিনি কোম্পানিতে নতুন নতুন সদস্য নিতে পুরোনো সদস্যদের চাপ দিতেন এবং তাদের মুনাফার লোভ দেখাতেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটির ২৫ থেকে ৩০ হাজার গ্রাহক রয়েছে। যারা ডিপিএস ও এফডিআরের মাধ্যমে বিনিয়োগ করেছে এবং যার পরিমাণ আনুমানিক শত কোটির বেশি বলে অনুসন্ধানে জানা যায়। টাকা চাইতে গেলে গ্রাহকদের হুমকি-ধামকি, মারধর করা ও মামলার ভয় দেখানো হতো। জসিমের নির্দেশে গ্রেপ্তারকৃত শাকিল ও চাঁন মিয়া ভুক্তভোগীদের মারধরসহ শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন। আর প্রকল্প পরিচালক শাকিল আহম্মেদ টঙ্গী কলেজ থেকে অনার্স পাস করেন। তার এক স্ত্রী ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। ২০১৫ সালে কর্ণফুলী মাল্টিপারপাস কো-অপারেটিভ সোসাইটি লিমিটেডের প্রকল্প পরিচালক হিসেবে যোগ দেন। শাকিল যোগ দেওয়ার পর থেকে গ্রাহকের সংখ্যা দ্রুত বাড়তে থাকে। তিনি অত্যন্ত সুচারুভাবে গ্রাহকদের লোভনীয় অফার দিয়ে সমিতিতে ডিপিএস/এফডিআরে টাকা রাখতে প্রলুব্ধ করতেন।

সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়, এই প্রতারক চক্রের মাঠ পর্যায়ের কর্মী/সদস্য রয়েছে। তারা রাজধানীর মিরপুরের বিভিন্ন বস্তি এলাকার গার্মেন্টসকর্মী, রিকশাচালক, ভ্যানচালক, অটোচালক, সবজি ব্যবসায়ী, ফল ব্যবসায়ী, গৃহকর্মী ও নিম্ন আয়ের মানুষদের টার্গেট করে স্বল্প সময়ে মাসিক মেয়াদ শেষে অধিক মুনাফা লাভের প্রলোভন দেখিয়ে তাদের কোম্পানিতে বিনিয়োগ, ডিপিএস করতে চেষ্টা করতেন। গ্রাহকদের প্রলুব্ধ ও তথ্য সংগ্রহ করে ভুলিয়ে নানান কৌশলে প্রতারক চক্রের অফিস কার্যালয়ে নিয়ে আসার ব্যবস্থা করা হতো। প্রতি গ্রাহক/টার্গেট সংগ্রহের জন্য নির্দিষ্ট অঙ্কের টাকা দেওয়া হতো। প্রতিষ্ঠানে কেউ যদি একটি ডিপিএসে মাসে এক হাজার টাকা করে বছরে ১২ হাজার টাকা জমা দেন, তবে পাঁচ বছরে ৬০ হাজার টাকা জমা হবে। মেয়াদ শেষে তাকে ৯০ হাজার টাকা দেওয়া হবে এবং টার্গেট সংগ্রহকারী ব্যক্তি প্রথম এক বছর প্রতি মাসে ২০০ টাকা এবং পরবর্তী চার বছর প্রতি মাসে ১০০ টাকা করে লভ্যাংশ পাবে। আবার কোম্পানির কোনো সদস্য যদি নতুন কোনো সদস্যকে এক লাখ টাকার এফডিআর করাতে পারেন তাহলে টার্গেট সংগ্রহকারীকে মাসে এক হাজার টাকা এবং এফডিআরকারী সদস্যকে মাসে দুই হাজার টাকা দেওয়ার প্রলোভন দিতেন। প্রকৃতপক্ষে যা বাংলাদেশে কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান দিতে পারে না। গ্রেপ্তারকৃতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।