শাল্লায় হামলাকারীরা স্বাধীনতাবিরোধী : ধর্ম প্রতিমন্ত্রী
ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান বলেছেন, ‘শাল্লার নোয়াগাঁও গ্রামে যারা হামলা করেছে তারা দেশের শত্রু, জাতির শত্রু ও স্বাধীনতাবিরোধী। এরা কোনো রাজনৈতিক দলের সদস্য হতে পারে না। এরা সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের সঙ্গে জড়িত।’
প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘একটি কুচক্রী মহল ফেসবুক পোস্টকে কেন্দ্র করে ধর্মীয় উন্মাদনা সৃষ্টি করে নোয়াগাঁও গ্রামে হামলা করেছে। ভাঙচুর ও লুটপাট করেছে। এটি একটি কলঙ্কজনক অধ্যায়। এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত অপরাধীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করা হবে। অপরাধীদের ছাড় দেওয়া হবে না। সরকার নোয়াগাঁও গ্রামবাসীর পাশে আছে, থাকবে।’
আজ বৃহস্পতিবার বিকেলে সুনামগঞ্জের শাল্লা উপজেলার হিন্দু অধ্যুষিত ক্ষতিগ্রস্ত নোয়াগাঁও গ্রাম পরিদর্শন শেষে এসব কথা বলেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী।
প্রতিমন্ত্রী আরও বলেন, ‘বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে যখন বিদেশি অতিথিরা বাংলাদেশে আসছে তখন যারা স্বাধীনতা চায় না, বাংলাদেশ চায় না তারাই এ ঘটনা ঘটিয়েছে। বাংলাদেশের সম্প্রীতি রক্ষায় মিলেমিশে চলাফেরা করতে এদের রুখতে হবে। নোয়াগাঁও গ্রামের কারো গায়ে যাতে কেউ ফুলের টোকা না দিতে পারে সেই লক্ষ্যে নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হবে।’
পরিদর্শন শেষে হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের পক্ষ থেকে নোয়াগাঁও গ্রামের ১৩০টি পরিবারকে ৩০ কেজি করে চাল ও ৯০টি পরিবারকে নগদ পাঁচ হাজার টাকা করে অর্থ সহায়তা দেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।
নগদ অর্থ সহায়তা বিতরণ উপলক্ষে নোয়াগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদালয় প্রাঙ্গণে সংক্ষিপ্ত আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত হয়।
অনুষ্ঠানে জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মতিউর রহমান সভাপতিত্ব করেন। শাল্লা উপজেলা স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি বিশ্বজিৎ চৌধুরী নান্টুর সঞ্চালনায় প্রধান অতিথির বক্তব্য দেন ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান।
সভায় বক্তব্য দেন দিনাজপুর-১ (বীরগঞ্জ-কাহারোল) আসনের সংসদ সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, সুনামগঞ্জ-৫ (দোয়ারাবাজার-ছাতক) আসনের সংসদ সদস্য মুহিবুর রহমান মানিক, সুনামগঞ্জ-১ (ধর্মপাশা-তাহেরপুর-জামালগঞ্জ) আসনের সংসদ সদস্য মোয়াজ্জেম হোসেন রতন, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমন, ধর্ম মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মু. আ. হামিদ জমাদ্দার, হিন্দু ধর্মীয় কল্যাণ ট্রাস্টের সচিব ড. দিলীপ কুমার ঘোষ, সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন, শাল্লা উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আল আমিন চৌধুরী, বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মৃত্যুঞ্জয় ধর ভোলা প্রমুখ।
পুলিশ ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত ১৫ মার্চ সুনামগঞ্জের দিরাই উপজেলায় শানে রিসালাত সম্মেলনে লক্ষাধিক মানুষের সামনে বক্তব্য দেন হেফাজতে ইসলামের কেন্দ্রীয় নেতারা। সেই সূত্র ধরে পরদিন পাশের শাল্লা উপজেলার হবিবপুর ইউনিয়নের নোয়াপাড়া গ্রামের ঝুমন দাস আপন তাঁর ফেসবুকে মাওলানা মামুনুল হককে নিয়ে আপত্তিকর পোস্ট দেন বলে দাবি করা হয়। এক পর্যায়ে ঝুমনকে খুঁজে বের করে গত ১৬ মার্চ রাতে পুলিশে দেয় লোকজন। এরপরও লোকজন শান্ত না হয়ে গত ১৭ মার্চ সকাল থেকে লাঠিসোটা ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে নোয়াপাড়া গ্রাম ঘিরে রাখে। পরে তারা বাড়িঘর ভাঙচুর ও লুটপাট করে।
এ ঘটনায় গত ১৮ মার্চ রাতে হবিবপুর ইউপির চেয়ারম্যান বিবেকানন্দ মজুমদার বকুল ৫০ জনের নাম উল্লেখ করে প্রথম মামলাটি করেন। মামলায় প্রধান আসামি করা হয়েছে দিরাই উপজেলার সরমঙ্গল ইউপির সদস্য নাচনী গ্রামের বাসিন্দা শহিদুল ইসলাম স্বাধীন মিয়াকে। তিনি ওই ইউনিয়নের ওয়ার্ড যুবলীগের সভাপতি বলে জানা গেছে। তবে স্বাধীন মিয়া যুবলীগের কেউ নন বলে দাবি করছেন জেলা যুবলীগের আহ্বায়ক খায়রুল হুদা চপল।
এ ছাড়া অজ্ঞাত আরও দেড় হাজার জনকে আসামি করে পুলিশের পক্ষ থেকে অপর মামলাটি করা হয়। পুলিশের করা মামলার বাদী হয়েছেন শাল্লা থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল করিম।