শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা : ৪ দিনেও গ্রেপ্তার হয়নি অভিযুক্ত শিক্ষার্থী
সাভারের আশুলিয়ায় কলেজ-শিক্ষক উৎপল কুমার সরকারকে প্রকাশ্যে ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে পিটিয়ে ও খুঁচিয়ে হত্যার ঘটনার চার দিন পার হয়ে গেছে। এ ঘটনায় মামলা হয়েছে; তবে এখনও কাউকে গ্রেপ্তার করতে পারেনি পুলিশ।
যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে জ্ঞানের আলো ছড়াচ্ছিলেন উৎপল কুমার সরকার, সেখানেই তাঁর হত্যাকাণ্ডে আতঙ্কিত শিক্ষার্থীরাও।
দশ বছর ধরে আশুলিয়ার চিত্রশাইল এলাকার হাজী ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে শিক্ষকতা করে আসছিলেন উৎপল কুমার সরকার।
গত শনিবার ওই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ছাত্রীদের ক্রিকেট খেলা চলাকালে প্রকাশ্যে দশম শ্রেণির এক শিক্ষার্থী ক্রিকেট স্টাম্প দিয়ে প্রথমে উৎপল সরকারকে উপর্যুপরি আঘাত করেন, পরে স্টাম্পের সুচালো অংশ দিয়ে তলপেটে খুঁচিয়ে গুরুতর জখম করে পালিয়ে যান।
এ সময় এক শিক্ষক ওই শিক্ষার্থীকে ধরেও ছেড়ে দেন। এ ঘটনায় বাদী হয়ে আশুলিয়া থানায় একটি মামলা করেছেন নিহত শিক্ষকের বড় ভাই অসীম কুমার সরকার।
এদিকে, এ ঘটনায় পুলিশ হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ক্রিকেট স্টাম্প ও সিসি ক্যামেরার হার্ডডিস্ক জব্দ করেছে।
আশুলিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এস এম কামরুজ্জামান বলেছেন, অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারে একাধিক টিম মাঠে রয়েছে। শিগগিরই তাকে গ্রেপ্তার করা হবে বলেও জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে শিক্ষার্থীরা বলছে—শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে প্রকাশ্যে শিক্ষককে হত্যাকাণ্ড ছিল পূর্বপরিকল্পিত। সেখানে সিসি ক্যামেরা সচল থাকলেও পরিকল্পনা অনুসারে আগেই বিদ্যুৎ সংযোগ বন্ধ করে দেয় ওই শিক্ষার্থী।
ঘটনাটি পূর্বপরিকল্পিত দাবি করে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান জানান, সাভারের একটি মাদ্রাসা থেকে ঝরে পড়া ওই অভিযুক্ত শিক্ষার্থী হাজি ইউনুস আলী স্কুল অ্যান্ড কলেজে গতবছর নবম শ্রেণিতে ভর্তি হয়। জন্ম সনদ অনুযায়ী তার বয়স ১৯ বছর হলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে ১৬ বছর।
ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান বলেন, ‘আইনের দৃষ্টিতে ১৬ বছর বয়স তো শিশু।’
‘এত বড় একটি জঘন্য হত্যাকাণ্ড ঘটিয়ে তাকে বাঁচানোর জন্য বয়স কমিয়ে দেওয়া হয়েছে কি না’, তা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ সাইফুল হাসান।
হত্যাকাণ্ডের মোটিভ সম্পর্কে একাধিক শিক্ষার্থী নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছে, অভিযুক্ত শিক্ষার্থীর বাবা উজ্জ্বল হোসেনের ব্যবসায়িক অংশীদার হোটেল ব্যবসায়ী মাজেদ। ওই কলেজের প্রথম বর্ষে পড়ুয়া মাজেদের শ্যালিকার ছোট বোনের সঙ্গে অভিযুক্ত শিক্ষার্থীকে কিছুদিন আগে ক্লাসরুমে আপত্তিকর অবস্থায় ধরে ফেলেন শিক্ষক উৎপল কুমার সরকার। বিষয়টি ওই ছাত্রীর পরিবারকে জানানোর পর থেকেই উৎপলের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে ওই শিক্ষার্থী। এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতেই শিক্ষক উৎপলকে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পিটিয়ে হত্যা করা হয়েছে বলে অভিযোগ শিক্ষার্থীদের।
এদিকে, শিক্ষক হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে আজও সাভারে বিক্ষোভ কর্মসূচির ডাক দিয়েছে বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী ও শিক্ষকেরা।