রাজশাহীতে দুদক চেয়ারম্যান

শিক্ষক নিয়োগ ও বদলিতে তদবির করলে হাতকড়া

Looks like you've blocked notifications!
রাজশাহীতে আয়োজিত মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ। ছবি : এনটিভি

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেছেন, ‘ঘুষ খাওয়া আর তদবির করা সমান অপরাধ। সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ কিংবা বদলি নিয়ে কেউ তদবির করলে এবং সেই তদবিরে কেউ সাড়া দিলে, উভয়ের হাতে হাতকড়া পরানো হবে।’

আজ শুক্রবার রাজশাহীতে মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে বিশেষ সামাজিক উদ্বুদ্ধকরণ মতবিনিময় সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে দুদক চেয়ারম্যান এ কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘গল্পের ছলে বাচ্চাদের পড়ানো সবচেয়ে ভালো পদ্ধতি। এতে বাচ্চারা শিখবে এবং মনে রাখবে। বাচ্চাদের ভয় দেখিয়ে জয় করা সম্ভব নয়। এটা রাজাদের সময়ে ছিল। এখন রাজাদের সময় নয়। গল্পের ছলে আদর করে বাচ্চাদের শেখাতে হবে।’

ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘শিক্ষক বদলি প্রক্রিয়ায় কী হয়, আমরা জানি। সে কারণে আমরা বলেছি, সবকিছু কম্পিউটারাইজড করতে হবে। কম্পিউটারই বলে দেবে, রহিম কোথায় যাবে, করিম কোথায় যাবে। ক্রাইটেরিয়া ফিস্কড করবেন, কম্পিউটার বলে দেবে কে কোথায় যাবে। বদলি প্রক্রিয়া অনলাইনে হবে, কোনো তদবির চলবে না। তদবির এক ধরনের অপরাধ। তদবিরও একটা দুর্নীতি।’

তদবিরবাজদের হুঁশিয়ারি দিয়ে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘তদবির আর ঘুষ খাওয়া একই। যে কারণে কিছু কিছু তদবিরবাজকে আমরা ধরেছি। জেলে ভরেছি। তদবিরবাজরা সাবধান! তিনি বলেন, নিয়োগ প্রক্রিয়াও স্বচ্ছ হতে হবে। আপনারা এবার দেখেছেন পুলিশের নিয়োগ প্রক্রিয়া। আমরা অনিয়ম বন্ধ করতে পেরেছি। আমি পুলিশকে সাধুবাদ দিয়েছি। একেবারে দুর্নীতিমুক্তভাবে, কারো কথা না শুনে পুলিশের নিয়োগ হয়েছে। শিক্ষক নিয়োগ হবে, কারো তদবিরে নয়। শিক্ষা ব্যবস্থায় কোনো দুর্নীতি সহ্য করা যাবে না। আমরা সহ্য করব না।’

দুদকের কেউ হাত বেঁধে রাখেনি উল্লেখ করে চেয়ারম্যান বলেন, ‘শিক্ষকের পেনশন নিতে গিয়ে কী ভোগান্তি! সেটা আমরা বন্ধ করার চেষ্টা করছি। যারা অপরাধী, তাদের আমরা ধরেছি। আমরা ঘুষ হাতেনাতে ধরেছি। আমাদের কেউ হাত বেঁধে দেয়নি। আমরা যেকোনো লোককেই ধরতে পারি। দুর্নীতি করলেই ধরা হবে। কোনো অনুমতি নিয়ে আমরা কাউকে ধরব না। আমরা সেটা দেখিয়ে দিয়েছি।’

তবে ইকবাল মাহমুদ বলেন, ‘ধরে ধরে জেলে পুরে দেওয়া দুদকের বড় কাজ না। দুদকের বড় কাজ হচ্ছে, দুর্নীতি যেন না হয় সেই কাজটা করা। আমি গত সাড়ে তিন বছরে দেখলাম, অনেক দুর্নীতিবাজকে ধরে জেলে ঢোকানো হলো। কিন্তু লাভের লাভ তেমন কিছুই হলো না। শেষ পর্যন্ত আমার কাছে মনে হয়েছে, আমাদের দুটো জায়গায় কাজ করতে হবে। একটা হচ্ছে প্রাইমারি স্কুল, আরেকটা হাইস্কুল। আমার কাছে মনে হয়েছে, মানসম্মত শিক্ষা পেলে একটা লোক দুর্নীতিবাজ হতে পারে না। একটা লোক দুর্নীতিবাজ হতে পারে না যদি সে প্রাইমারি স্কুলে সততার সঙ্গে, শিক্ষকের কথা শুনে, মা-বাবার কথা শুনে পড়াশোনা করে। সে বড় হয়ে দুর্নীতিবাজ হতে পারে না।’

দুদক চেয়ারম্যান শিক্ষার্থীদের মানসম্মত শিক্ষা দেওয়ার বিষয়ে তাগিদ দেন। আর শিক্ষকদের যেন শুধু নির্বাচন ছাড়া অন্য কোনো কাজে লাগানো না হয়, সে জন্য তিনি সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

জেলা প্রশাসক হামিদুল হকের সভাপতিত্বে সভায় বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব আকরাম হোসেন এবং প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. এ এফ এম মনজুর কাদির।

সভায় রাজশাহী প্রাথমিক শিক্ষক প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের ইনস্ট্রাক্টর এবং বিভিন্ন স্কুলের শিক্ষকরা উপস্থিত ছিলেন। মুক্ত আলোচনায় তাঁরা মানসম্মত প্রাথমিক শিক্ষা বাস্তবায়নের নানা দিক তুলে ধরেন।