শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ
বাংলাদেশের শিল্পকলা অঙ্গনের অন্যতম নক্ষত্র কাইয়ুম চৌধুরীর পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। একাধারে চিত্রশিল্পী, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব, শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক ও অধ্যাপক কাইয়ুম চৌধুরী ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর মৃত্যুবরণ করেন।
চিত্রকলাকে দেশের গণ্ডি থেকে বহির্বিশ্বে পরিচিত করে তুলতে কাইয়ুম চৌধুরীর ভূমিকা অবিস্মরণীয় । বোদ্ধাদের কাছে তিনি পরিচিত ‘রঙের রাজা’ হিসেবে। বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক অঙ্গনকে স্বীয় প্রতিভার আলোকচ্ছটায় অগ্রসর চিন্তার আলোকে করে রেখেছিলেন প্রাণবন্ত।
বাংলাদেশের চিত্রশিল্প প্রসারে পঞ্চাশের দশক থেকে শুরু করে মৃত্যুর আগ পর্যন্ত শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরী পথিকৃতের ভূমিকা পালন করেন। বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে শিল্প, সংস্কৃতি, সাংবাদিকতা ও শিক্ষাক্ষেত্রে একাধারে বিরামহীন কাজ করেছেন। দেশের সংবাদপত্র ও বই প্রকাশনার শৈল্পিক উৎকর্ষে যেসব শিল্পী ভূমিকা পালন করেছেন কাইয়ুম চৌধুরী তাঁদের অন্যতম। বইয়ের প্রচ্ছদ ও অঙ্গসজ্জায় নতুন এক ধারা সৃষ্টি করেন তিনি।
কাইয়ুম চৌধুরীর জন্ম ১৯৩২ সালের ৯ মার্চ ফেনীতে। ঢাকায় আর্মি স্টেডিয়ামে ২০১৪ সালের ৩০ নভেম্বর বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের সংগীত উৎসব মঞ্চে বক্তব্য রাখার সময় অসুস্থ হয়ে পড়েন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে ঢাকার সিএমএইচে নিয়ে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন। মিরপুর শহীদ বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে দাফন করা হয় বরেণ্য এই শিল্পীকে।
কাইয়ুম চৌধুরী ময়মনসিংহ সিটি কলেজিয়েট স্কুল থেকে এসএসসি (১৯৪৯), ঢাকা আর্ট কলেজ থেকে স্নাতক ডিগ্রি (১৯৫৪) লাভ করেন। ১৯৫৭ সালে ঢাকা আর্ট কলেজে শিক্ষকতা শুরু করেন। তিনি কলেজে শিল্পী কামরুল হাসানের অধীনে ডিজাইন সেন্টার স্থাপন করেন। ১৯৫৮ সালে তিনি পাকিস্তান অবজারভারে প্রধান শিল্পী হিসেবে যোগ দেন। একই সঙ্গে সাপ্তাহিক চিত্রালী ও দৈনিক পূর্বদেশে কাজ করেন। ১৯৬৫ সালে তিনি পুনরায় যোগ দেন আর্ট কলেজে সহকারী অধ্যাপক হিসেবে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউট থেকে ১৯৯৪ সালে অধ্যাপক কাইয়ুম চৌধুরী অবসরে যান। বাংলাদেশের মহান স্বাধীনতা সংগ্রামেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় শিল্পীদের নিয়ে গঠিত ‘চারুকলা শিল্পী সংগ্রাম পরিষদ’-এর আহ্বায়ক ছিলেন তিনি।
শিল্প-সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য সরকার শিল্পী কাইয়ুম চৌধুরীকে একুশে পদক (১৯৮৪) ও স্বাধীনতা পদক (২০১৪) প্রদান করে। এ ছাড়া বঙ্গবন্ধু পুরস্কার (১৯৭৪), জাতীয় গ্রন্থকেন্দ্রের শ্রেষ্ঠ প্রচ্ছদ পুরস্কার (১৯৭৫), বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৭৭), সুলতান পদকসহ অসংখ্য পুরস্কারে ভূষিত হন।