শিশুপুত্রসহ ফাঁসিতে ঝুলে গৃহবধূর আত্মহত্যা
কিশোরগঞ্জের ভৈরবে তিন বছরের শিশুপুত্রসহ ফাঁসিতে ঝুলে আহত্মহত্যা করেছে জোনাকী বেগম (২৩) নামের এক গৃহবধূ। ঘটনাটি ঘটেছে আজ সোমবার (১৫ মে) ভৈরব উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুর পাক্কার মাথা শান্তিপাড়া এলাকায়।
নিহত গৃহবধূর ওই এলাকার উসমান মেম্বারের বাড়ির ফারুক মিয়ার ছেলে ইতালি প্রবাসী ফরহাদ মিয়ার স্ত্রী।
পুলিশ ও প্রতিবেশীরা জানায়, ৩ দিন আগে শাশুড়ি বেবী বেগমের সঙ্গে জোনাকীর বাকবিতণ্ডা হয়। একপর্যায়ে শাশুড়ি বেবী বেগমের সঙ্গে তাঁর ধস্তাধস্তি হয়। তাঁর শ্বশুর, স্বামী, দেবর ও ননদসহ পরিবারের অন্য সদস্যরা ইতালিতে বসবাস করেন। এ বছর কোরবানির ঈদে মা বেবী বেগম ও স্ত্রী জোনাকী বেগমসহ শিশুপুত্র আলিফকে ইতালি নেওয়ার কথা ছিল। ইতালি যাওয়া নিয়েই দ্বন্দ্ব শুরু হয় বউ-শাশুড়ির।
প্রতিবেশীদের অভিযোগ, শাশুড়ির অত্যাচারেই গৃহবধূ জোনাকী আত্মহত্যার পথ বেছে নিয়েছেন। ঝগড়ার পর বাড়ি-ঘর তালা দিয়ে উভয়েই নিজ নিজ বাবার বাড়ি চলে যান। আজ সকাল ১০টায় গৃহবধূ জোনাকী ও শিশুপুত্র আলিফ বাড়িতে আসে। সকাল ১০টার দিকে মা-ছেলেকে আইসক্রিম খেতে দেখে প্রতিবেশীরা। একপর্যায়ে বাড়ির মেইন গেইট ও ঘরের দরজা বন্ধ করে দেন জোনাকী বেগম। দিনের বেলায় গেইট লাগানোর কারণে প্রতিবেশীদের সন্দেহ হয়। এই খবর পেয়ে গৃহবধূর স্বজনরা এসে দেখতে পায় শিশু সন্তানসহ জোনাকী ফাঁসিতে ঝুলে আছে। পরে স্বজনরা সেখান থেকে উদ্ধার করে ভৈরব উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে আসে।
এ বিষয়ে মৃত জোনাকীর বোন জামাই জাকির মিয়া জানান, ২০১৭ সালে ভৈরব উপজেলার কালিকাপ্রসাদ ইউনিয়নের বাসস্ট্যান্ড এলাকার বিচাইল্লা বাড়ির রইছ মিয়ার মেয়ে জোনাকী বেগমের সঙ্গে একই উপজেলার শিবপুর ইউনিয়নের শম্ভুপুরের শান্তিপাড়া এলাকার ফারুক মিয়ার ছেলে ইতালী প্রবাসী ফরহাদ মিয়ার পারিবারিকভাবে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে ভালোভাবে চলছিল তাদের সংসার। যখন জোনাকী ও তাঁর সন্তানকে প্রবাসী স্বামী ইতালি নেওয়ার কাগজপত্র তৈরি করেন তখন থেকেই শাশুড়ির সঙ্গে বাধে বিপত্তি। শুরু হয় প্রতিনিয়ত বউ-শাশুড়ির ঝগড়া-কলহ। কোনো কোনো সময় ধস্তাধস্তির ঘটনাও ঘটে। জোনাকীকে বিয়ে করার আগে ফরহাদ আরেকটি বিয়ে করেছিলেন। তিন মাসও সেই বউ শাশুড়ির যন্ত্রণায় সংসার করতে পারেননি। তাঁর যন্ত্রণায় অতিষ্ঠ হয়ে প্রথম বউ চলে যান।
জাকির মিয়ার অভিযোগ, তাঁর শালী জোনাকীকে শাশুড়ি আত্মহত্যা করতে বাধ্য করেছেন। আজ সকালে জোনাকী তাদের ফোন দিয়ে বাঁচবেন না বলে জানান। পরে তাঁরা খবর পেয়ে ছুটে এসে মা ও ছেলেকে ঘরের সিলিং ফ্যানে ফাঁসিতে ঝুলে থাকতে দেখেন।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কর্তব্যরত চিকিৎসক সৌরভী আক্তার জানান, গৃহবধূ জোনাকী বেগম ও তাঁর শিশু সন্তান আলিফকে হাসপাতালে আনার আগেই মৃত্যু হয়েছে।
এ বিষয়ে ভৈরব থানার উপপরিদর্শক (এসআই) রাজীব মিয়া বলেন, ‘ঘটনার খবর পেয়ে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে প্রাথমিক সুরুতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেছি। মা ও ছেলের গলায় আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এটি হত্যা না আত্মহত্যা ময়নাতদন্তের পর বোঝা যাবে।’
ভৈরব থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মাকছুদুল আলম জানান, খবর পেয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে পুলিশ পাঠানো হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।