‘শিশুবক্তা’ রফিকুলের জামিন স্থগিত, পাচ্ছেন না মুক্তি
গাজীপুরের গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলায় ‘শিশুবক্তা’ হিসেবে পরিচিতি পাওয়া রফিকুল ইসলাম মাদানীর জামিন আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করেছেন চেম্বার আদালত। এতে করে আপাতত কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না তিনি।
রাষ্ট্রপক্ষের আবেদনের শুনানি নিয়ে গত ২ এপ্রিল আপিল বিভাগের চেম্বার বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম এ আদেশ দেন। তবে, বিষয়টি আজ রোববার (৯ এপ্রিল) জানাজানি হয়।
শিশুবক্তা রফিকুলের আইনজীবী ও রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা জামিন স্থগিতের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
বিষয়টি নিয়ে ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সারওয়ার হোসেন বাপ্পী বলেন, ‘গত রোববার চেম্বার আদালত গাজীপুরের গাছা থানার মামলায় রফিকুলের জামিন স্থগিত করেন। এ মামলায় তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি রয়েছে। অন্য তিনটি মামলায় তার জামিন বহাল রেখেছেন আদালত। এক মামলায় জামিন স্থগিত হওয়ায় তিনি কারাগার থেকে মুক্তি পাচ্ছেন না।’
ভবিষ্যতে কোনো ওয়াজ মাহফিলে রাষ্ট্রবিরোধী ও উস্কানিমূলক বক্তব্য দেবেন না, এই শর্তে ঢাকা ও গাজীপুরের ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের চার মামলায় গত ২৯ মার্চ রফিকুলকে জামিন দেন হাইকোর্ট। বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. আমিনুল ইসলামের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ আদেশ দিয়েছিলেন।
আদালতে মাদানীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট আশরাফ আলী মোল্লা। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল শাহীন আহমেদ খান। পরে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ।
রাষ্ট্রবিরোধী, উসকানিমূলক ও ঔদ্ধত্যপূর্ণ বক্তব্য এবং বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির অভিযোগে ২০২১ সালের ৭ এপ্রিল রাত সাড়ে ৩টার দিকে রফিকুলকে নেত্রকোনার নিজ বাড়ি থেকে আটক করে র্যাব। ওই সময় তার কাছ থেকে চারটি মোবাইল ফোন জব্দ করা হয়। ওই বছরের ৮ এপ্রিল শিশুবক্তা হিসেবে পরিচিত রফিকুল ইসলাম মাদানীর নামে গাজীপুরের গাছা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা করা হয়। র্যাবের নায়েক সুবেদার আবদুল খালেক বাদী হয়ে মামলাটি করেন। এরপর গাজীপুরের বাসন, রাজধানীর মতিঝিল ও তেজগাঁও থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে আরও তিনটি মামলা করা হয়।
ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলার শুনানি শেষে এক আদেশে হাইকোর্ট বলেছিলেন, ‘রফিকুল ইসলাম মাদানীর বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে করা মামলা, তার স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি, চার্জশিট, মামলার এজাহার যাচাই-বাছাই করে আমরা তাকে জামিন দিতে একমত নই। তবে, রফিকুল ইসলাম মাদানী যদি কোনো ওয়াজ মাহফিল বা সভায় রাষ্ট্র ও সমাজ বিরোধী এবং বাংলাদেশের প্রচলিত আইনবিরোধী, ধর্মীয় সংঘাত সৃষ্টি করে এমন বক্তব্য বা বিবৃতি প্রদান না করার হলফনামা আকারে মুচলেকা দেন, তাহলে আমরা তার জামিন বিবেচনা করতে পারি।’
গত বছরের ২৭ জুন বিচারপতি মোস্তফা জামান ইসলাম ও বিচারপতি মো. সেলিমের হাইকোর্ট বেঞ্চ এই আদেশ দেন। হাইকোর্টের আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ঢাকার সাইবার ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে হলফনামা কারা কর্তৃপক্ষের কাছে যায়। সম্প্রতি কাশিমপুর কারা কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে রফিকুল ইসলাম মাদানী হলফনামায় স্বাক্ষর করেন। হলফনামায় তিনি লেখেন, ‘কোনো ওয়াজ মাহফিলে রাষ্ট্র ও সমাজ বিরোধী এবং প্রচলিত আইন বিরোধী কোনো বক্তব্য দেব না। দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন করে ও জনমনে সংঘাতের সৃষ্টি করে এমন বক্তব্য ওয়াজ মাহফিলে দেব না।’