শ্রিংলার সঙ্গে আলোচনার বিষয় জানার অধিকার রয়েছে : নজরুল ইসলাম
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার বাংলাদেশ সফরে সরকারের সঙ্গে কী কী বিষয়ে আলোচনা হয়েছে, তা জনগণের জানার অধিকার রয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান। তবে কোনো অবস্থায়ই যেন সরকার দেশের স্বার্থ জলাঞ্জলি না দেয়, সে দাবি জানান তিনি।
স্বেচ্ছাসেবক দলের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে আজ বুধবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরে বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের সমাধিতে ফাতেহা পাঠ এবং শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নজরুল ইসলাম খান এ কথা বলেন।
করোনাভাইরাসের মহামারির সময়েও দুর্নীতি, মেজর অবসরপ্রাপ্ত সিনহা মোহাম্মদ রাশেদ খান হত্যার বিষয় ভিন্ন দিকে নিতেই সরকার পরিকল্পিতভাবে আবদুল মাজেদকে (বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের খুনি) নিয়ে জিয়াউর রহমানের সম্মানহানির চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ করেন নজরুল ইসলাম খান। জিয়াউর রহমানের সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক, সড়ক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্যের সমালোচনা করেছেন তিনি।
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘ওবায়দুল কাদের একটি রাজনৈতিক দলের সাধারণ সম্পাদক, তাঁর বিষয়ে আমি কী মন্তব্য করব, বুঝতে পারছি না। তবে তাঁর বক্তব্য মানুষের কাছে এখন হাসির পাত্র হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে।’
বিএনপির স্থায়ী কমিটির এই সদস্য বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষ যাঁর কণ্ঠে স্বাধীনতার ঘোষণা শুনেছেন, তিনি হলেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। তিনি ২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী থেকে বিদ্রোহ করে তাঁর কমান্ডারকে হত্যা করে চট্টগ্রাম দখল করার মাধ্যমে প্রথম সেক্টর কমান্ডার হিসেবে রণাঙ্গনে যুদ্ধ করেছেন। তিনি যদি অপশনাল হন, তবে মূল কে? আর তখন ওবায়দুল কাদেরের অবস্থান কোথায় ছিল, সেটাও হয়তো তাঁর পরিষ্কার করা দরকার।’
‘আমরা জানি, মরহুম রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারকে হত্যার বিচার আদালতে হয়েছে। সেখানে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানকে কেউ অভিযুক্ত করেনি এবং মামলার কোথাও তাঁর নাম আসেনি। এখন সাজাপ্রাপ্ত আসামির ফাঁসির আগে জোরপূর্বক তাঁর বক্তব্য নিয়ে তা অনৈতিকভাবে ভাইরালের মাধ্যমে অপপ্রচার চালানো সম্পূর্ণ রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। শুধু জাতিকে বিভক্ত করার জন্য এসব বক্তব্য দেওয়া হচ্ছে। আমরা চাই, দেশের সম্প্রীতি বজায় রাখার জন্য এসব নোংরা কাদা ছোড়াছুড়ি বন্ধ করুন।’
ভারতের পররাষ্ট্র সচিব হর্ষবর্ধন শ্রিংলার আকস্মিক ঢাকা সফর সম্পর্কে জানতে চাইলে সাবেক এই কূটনীতিক বলেন, ‘পররাষ্ট্রনীতির সবার সঙ্গে বন্ধুত্বপূর্ণ হওয়াটাই উত্তম বলে আমরা বিএনপি মনে করি। তিনি এ দেশে আসতেই পারেন। কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ হলো তাঁর সঙ্গে কী আলোচনা হলো, সেটা জনগণকে জানানো। জনগণের তা জানার অধিকার রয়েছে।’
‘জোর করে হোক আর যেভাবেই হোক, বর্তমানে যারা সরকারে আছে, তারাই দেশের দায়িত্ব পালন করছে। তাদের উচিত দেশের স্বার্থে কাজ করা। কোন দেশের সঙ্গে কোন বিষয়ে বৈঠক হলো, সে সম্পর্কে জনগণকে অবহিত করা সরকারের দায়িত্ব। কিন্তু এমন অনেক চুক্তি হয়েছে, যা এখন পর্যন্ত প্রকাশ করা হয়নি। আমরা আশা করব, সরকার দেশের স্বার্থ রক্ষা করে পররাষ্ট্রনীতি পরিচালনা করবে এবং জনগণকে সব বিষয় অবহিত করবে।’
স্বেচ্ছাসেবক দলের সদ্য প্রয়াত সভাপতি শফিউল বারী বাবুকে স্মরণ করে নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমরা জানি, মাত্র কয়েক দিন আগে স্বেচ্ছাসেবক দল তাদের প্রিয় নেতা শফিউল বারী বাবুকে হারিয়েছে। সেই শোককে শক্তিতে রূপান্তর করে তারা আজকে তাদের প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উদযাপনে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের মাজারে এসেছে। আজকের তারা এখানে এসে জনগণের ভোটে নির্বাচিত একটি সরকার প্রতিষ্ঠিত করার শপথ নিয়েছে।’
নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘আমি দেশনেত্রী খালেদা জিয়া, আমাদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানসহ স্থায়ী কমিটির পক্ষ থেকে স্বেচ্ছাসেবক দলকে অভিনন্দন জানাই। মরহুম শফিউল বারী বাবুর আত্মার মাগফিরাত কামনা করি ও স্বেচ্ছাসেবক দলের সম্পূর্ণ সাফল্য কামনা করছি। আশা করছি, একটি জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠা করতে পারব।’
স্থায়ী কমিটির এ সদস্য বলেন, ‘আমরা জানি, জনগণের সমর্থন নেই দেখেই এই সরকার সুষ্ঠু ভোট দিতে ভয় পায়। তারা জনগণকে ভোট থেকে দূরে রেখেছে। বিরোধীদলের লাখ লাখ নেতাকর্মীকে হামলা-মামলায় জর্জরিত করেছে। দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে মিথ্যা মামলায় সাজা দিয়েছে এবং দেশনায়ক তারেক রহমানকে অন্যায়ভাবে দেশের বাইরে থাকতে বাধ্য করছে।’
এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব হাবিব-উন-নবী খান সোহেল, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু, স্বেচ্ছাসেবক দলের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান, সাধারণ সম্পাদক আবদুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।