ষড়যন্ত্রটা আসলে কত বড়, জানতে চাইলেন তুরিন আফরোজ

Looks like you've blocked notifications!
আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের পদ থেকে অপসারিত হওয়া ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ এবং আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক। ছবি : সংগৃহীত

আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের বক্তব্যের জবাব দিয়েছেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে অপসারণ হওয়া ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ। তিনি তাঁকে নিয়ে মিথ্যাচার বন্ধ করতে আইনমন্ত্রীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজ আজ সোমবার সন্ধ্যায় তাঁর ফেসবুক পেজে এই আহ্বান জানান। এতে লেখা হয়েছে, ‘মাননীয় আইনমন্ত্রী জনাব আনিসুল হক সাহেব,

আপনি বলেছেন, ‘একজন আসামির সঙ্গে আলাপ-আলোচনা করার অভিযোগ ছিল তার (তুরিন) বিরুদ্ধে। ওই মামলাটি তিনি নিজে পরিচালনা করছিলেন। আসামির সঙ্গে আলাপ-আলোচনার রেকর্ডটি চিফ প্রসিকিউটরের কাছে পাঠানো হয়। রেকর্ডটি আমরাও যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে পর্যালোচনা ও পর্যবেক্ষণ করেছি। এ কাজ করতে গিয়ে তার সঙ্গে যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কথা বলেছি। সাক্ষ্য-প্রমাণের ভিত্তিতেই তাকে এই পদ থেকে অপসারণ করেছি।

আমার সাথে আপনি, আপনার মন্ত্রণালয়, আপনার অধীনস্ত কোন দপ্তর, আপনার গঠিত কোন তদন্ত কমিটি, আজ অবধি এই বিষয়ে আমার সাথে কোন যোগাযোগ করেনি। কি সাক্ষ্য প্রমাণ নিয়ে আপনারা দেড় বছর সময় কাটালেন তাও আমাকে জানানো হোল না। "যতটুকু প্রয়োজন ততটুকু কথা" তো দুরেই থাক, আপনি। আপনারা তো কথাই বলেননি। ষড়যন্ত্রটা আসলে কত বড়?!!!

আপনি মিথ্যা তথ্য দিয়ে কেন জাতিকে বিভ্রান্ত করছেন? একজন তুরিন আফরোজকে নিয়ে মিথ্যাচার করার কি খুব প্রয়োজন ছিল? আপনার মত একজন অভিজ্ঞ আইনজীবী আমাকে আত্মপক্ষ সমর্থন করার সুযোগটি দেয়াও ন্যায় সঙ্গত মনে করলেন না? দয়া করে আমার ব্যাপারে মিথ্যাচার বন্ধ করুন। আমি এখন আর আপনার মন্ত্রণালয়ের কর্মচারী নই। একজন সাধারণ নাগরিক। আর আমাদের পবিত্র সংবিধান অনুযায়ী আমাদের মত সাধারণ নাগরিকরাই রাষ্ট্রের মালিক।

(১) বোরখা পড়ে আমি কার সাথে কোথায় দেখা করেছি, তার কি অকাট্য প্রমাণ আছে আপনার/আপনাদের কাছে?

(২) যেই মামলা হোল ২০১৯ সালে, যেটার চার্জ গঠনও এখনও হয়নি, তার নথি আমি ২০১৭ সালে পাচার করলাম কি করে?

(৩) যেই মামলা হোল ২০১৯ সালে, যেটার চার্জ গঠনও এখনও হয়নি, সেই মামলার মেরিট আমি কি করে ২০১৭ সালে জানলাম?

এর আগে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়কমন্ত্রী অ্যাডভোকেট আনিসুল হক আজ বিকেলে সচিবালয়ে তাঁর দপ্তরে সাংবাদিকদের বলেন, পর্যাপ্ত তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতেই আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটরের পদ থেকে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে অপসারণ করা হয়েছে। তুরিনের বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ ছিল, তা যথেষ্ঠ সময় ধরে অনুসন্ধান ও তদন্ত করে প্রমাণিত হওয়ার পরই এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

এর আগে আজ শৃঙ্খলা ও পেশাগত আচরণ ভঙ্গ এবং গুরুতর অসদাচরণের দায়ে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর পদ থেকে অপসারণ করে আইন মন্ত্রণালয় প্রজ্ঞাপন জারি করে।

অপসারণের বিষয়ে আইনমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এ ট্রাইব্যুনালকে সব বিতর্কের ঊর্ধ্বে রাখতেই আমরা এ ব্যবস্থা নিয়েছি।

অপর এক প্রশ্নের জবাবে আনিসুল হক বলেন, একটি মামলায় আসামিদের সঙ্গে যোগসাজসের অভিযোগ ছিল তুরিন আফরোজের বিরুদ্ধে। এর একটি অডিও টেপও রয়েছে। এ মামলার বিষয়ে তুরিন আফরোজ আসামিকে বলেছিলেন, ‘এ মামলার কোনো ম্যারিট নেই। অথচ পরে দেখা গেছে এ মামলায় আসামিদের বিরুদ্ধে চার্জ গঠন হয়েছে।’

আইনমন্ত্রী বলেন, ‘এ মামলার আগের সব মামলায় তুরিন আফরোজ সঠিকভাবেই তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেছেন। আমরা ওই সময় তাঁর দায়িত্ব পালনের বিষয়ে সন্তুষ্ট ছিলাম।’

২০১৩ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে ব্যারিস্টার তুরিন আফরোজকে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের প্রসিকিউটর হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধ মামলার আসামি জাতীয় নিরাপত্তা গোয়েন্দা সংস্থার (এনএসআই) সাবেক মহাপরিচালক ওয়াহিদুল হকের সঙ্গে গোপনে স্পর্শকাতর তথ্য সরবরাহ করার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় তাঁকে অব্যাহতি দেওয়া হয়।