সংগ্রাম কার্যালয়ে ভাঙচুর-তালা, সম্পাদক গ্রেপ্তার
একাত্তরে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়া আবদুল কাদের মোল্লাকে ‘শহীদ’ লেখায় দৈনিক সংগ্রাম পত্রিকার কার্যালয়ে ভাঙচুর করেছে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা। তারা পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদকে হাতিরঝিল থানা পুলিশের কাছে সোপর্দ করে পত্রিকার কার্যালয়ে তালা ঝুলিয়ে দিয়েছে।
গতকাল শুক্রবার সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে রাজধানীর মগবাজার ওয়্যারলেস রেলগেট সংলগ্ন এলাকায় দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয়ে এ ভাঙচুর চালানো হয়। এতে নেতৃত্ব দেন মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল ও সাধারণ সম্পাদক মো. আল-মামুন।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, শুক্রবার বিকেল সোয়া ৫টা থেকে মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের ৫০-৬০ জন যুবক দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয় ঘেরাও করে বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দিতে থাকে। সন্ধ্যা সাড়ে ৬টার দিকে পত্রিকার সাংবাদিকরা যখন পরের দিনের সংবাদপত্র প্রকাশের জন্য ব্যস্ত ঠিক তখনই অতর্কিতে গেট ভেঙে অফিসে ঢুকে একে একে সব কয়টি কক্ষে ভাঙচুর চালান মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের নেতাকর্মীরা।
সংগ্রামের সাংবাদিকরা জানিয়েছেন, ৫৫টি কম্পিউটার, তিনটি টেলিভিশন, সব আসবাবপত্র, দরজা-জানালা সব কিছু ভেঙে তছনছ করে। অথচ পুলিশ অফিসের সামনেই ছিল।
মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সাধারণ সম্পাদক মো. আল-মামুন বলেন, ‘আমরা স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে আপস করতে পারি না। যে কেউ স্বাধীনতা বা মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে কথা বললে আমরা তা প্রতিহত করবই।’ দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয়টি জামায়াত-শিবিরের অস্থায়ী কার্যালয় হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মামুন বলেন, ‘আমরা সেসব প্রমাণ পুলিশকে দেখিয়েছি। আমরা সম্পাদককে পুলিশের হাতে সোপর্দ করেছি। সম্পাদক তখন জনতার সামনে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন।’ আগামী ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সংগ্রাম পত্রিকার ‘ডিক্লারেশন’ বাতিলের দাবি জানান তিনি।
মামুন বলেন, ‘এই সময়ের মধ্যে আমাদের দাবি মানা না হলে আমরা আরো কঠোর কর্মসূচি দেব।’
আজ শনিবার সকালে হাতিরঝিল থানার দায়িত্বরত কর্মকর্তা অনাথ মিত্র এনটিভি অনলাইনকে বলেন, ‘সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদক আবুল আসাদের বিরুদ্ধে একটি মামলা করা হয়েছে। তবে আমার কাছে মামলার কাগজপত্র না থাকায় কী আইনে মামলা করা হয়েছে, তা বলতে পারছি না। ওই মামলায় সম্পাদককে গ্রেপ্তার দেখানো হয়েছে। তিনি এখন হাজতেই আছেন।’
যদিও গতকাল রাতে হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুর রশিদ এনটিভি অনলাইনকে বলেছিলেন, ‘সংগ্রাম পত্রিকার সম্পাদকের নিরাপত্তার স্বার্থে আমরা তাকে থানায় নিয়ে এসেছি।’
গত বৃহস্পতিবার দৈনিক সংগ্রামের প্রথম পাতায় ‘শহীদ আবদুল কাদের মোল্লার ষষ্ঠ শাহাদাতবার্ষিকী আজ’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়। এর প্রতিবাদ জানাতে সংগ্রামের কার্যালয়ে আসার আগে দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে প্রতিবাদ সমাবেশের পাশাপাশি সংগ্রাম পত্রিকার কয়েকটি কপি আগুন দিয়ে পোড়ায় ছাত্রলীগের একদল নেতাকর্মী।
একাত্তরে যুদ্ধাপরাধের দায়ে ২০১৩ সালের ১২ ডিসেম্বর জামায়াতে ইসলামীর সাবেক সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আবদুল কাদের মোল্লার ফাঁসি কার্যকর করা হয়।
বিএফইউজে ও ডিইউজের উদ্বেগ
দৈনিক সংগ্রামের কার্যালয় ভাঙচুর ও তছনছের তীব্র প্রতিবাদ ও নিন্দা জানিয়েছে বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন-বিএফইউজে ও ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের (ডিইউজে) একাংশ। একই সঙ্গে পত্রিকাটির সম্পাদক আবুল আসাদকে পুলিশ ধরে থানায় আটকে রাখায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুই সংগঠনের নেতারা।
তাৎক্ষণিক এক বিবৃতিতে বিএফইউজের সভাপতি রুহুল আমিন গাজী ও মহাসচিব এম আবদুল্লাহ এবং ডিইউজে সভাপতি কাদের গনি চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বলেন, একটি সংবাদপত্র অফিসে ঢুকে কম্পিউটার, আসবাদপত্র, দরজা-জানালাসহ সবকিছু তছনছ করা ফ্যাসিবাদী আক্রমণ ছাড়া কিছুই নয়। কোনো সংবাদপত্র প্রকাশিত সংবাদে সংক্ষুব্ধ হলে তার প্রতিবাদ জানানো এমনকি আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ারও অধিকার রয়েছে। কিন্তু তা না করে পেশিশক্তির মহড়া কোনো সভ্য সমাজে গ্রহণযোগ্য নয়।
নেতারা বিবৃতিতে বলেন, যারা হামলা করেছে তারা ঘোষণা দিয়ে পুলিশের উপস্থিতিতে করেছে। এতে ধারণা করা অমূলক হবে না যে সরকারের ছত্রছায়ায় সিদ্ধান্ত নিয়েই এই বর্বরোচিত হামলা করা হয়েছে। এ ধরনের ন্যক্কারজনক ঘটনা গোটা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও নিরাপত্তার জন্য হুমকি। তা ছাড়া কোনো মামলা ও ওয়ারেন্ট ছাড়াই একজন প্রবীণ ও বয়োজ্যেষ্ঠ সম্পাদককে পুলিশ তাঁর অফিস থেকে যেভাবে তুলে নিয়ে গেছে তাতে গোটা সাংবাদিক সমাজ ও বিবেকবান মানুষকে স্তম্ভিত করেছে।
নেতারা অবিলম্বে হামলাকারী সন্ত্রাসীদের আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করা এবং সম্পাদক আবুল আসাদকে সসম্মানে মুক্তি দেওয়ার দাবি জানান।